প্রকাশ্যে কোন কর্মকা-ে দেখা না গেলেও থেমে নেই জামায়াতের কৌঁসুলি ষড়যন্ত্র। এবার জামায়াত নেতাদের গভীর ষড়যন্ত্রের কাছে চরম অসহায় হয়ে পরেছেন বরিশালের একটি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক ও কর্মচারীরা।
অভিযোগ রয়েছে, জামায়াত নেতারা ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি নিজেদের দখলে রাখতে সকল নিয়ম অমান্য করে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবোর্ডে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে। ফলে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এডহক কমিটির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। জামায়াত নেতাদের হাত থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি রক্ষা করার জন্য শিক্ষক, কর্মচারী ও এলাকাবাসী স্থানীয় সংসদ সদস্য, শিক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর আশুহস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মচারী, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, ব্যবস্থাপনা কমিটি ও সচেতন মহলের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটি জেলার গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ড সংলগ্ন আল-আমিন টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের।
বৃহস্পতিবার সকালে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মরত শিক্ষকরা বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শিক্ষা, খাদ্য, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তিসহ সার্বিক উন্নয়নে দেশ আজ যখন দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এ দেশের সাধারণ জনগণের মনিকোঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন আস্থার ও নির্ভরতার এক মানবিক প্রতীক হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন। তখনও এদেশে যারা উন্নয়ন চায়না, সেই স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত নেতারা একেরপর এক ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে। আর তাদের কারণেই স্বাধীনতার স্বপক্ষের মানুষগুলো বরাবরেই হয়রানীর শিকার হচ্ছেন।
তারা আরও বলেন, বিগত বিএনপি-জামায়াতের চারদলীয় জোট সরকারের আমলে আল-হেলাল ট্রাস্ট্রের মাধ্যমে পরিচালিত গৌরনদী আল-আমিন টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের আড়ালে জামায়াতের সবধরনের কর্মকা- পরিচালিত হতো। এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি জামায়াতের অঘোষিত কার্যালয় হিসেবেও ব্যবহার করা হতো।
সূত্রমতে, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিগত ২০১০ সালে গৌরনদী আল-আমিন টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজটি এমপিওভুক্ত হয়। এরপরেও জামায়াত নেতারা ২০১৬ সাল পর্যন্ত অধ্যক্ষের সহযোগিতায় ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বসেই তাদের (জামায়াত) দলীয় কর্মকা- পরিচালনা করে আসছিলো। পরবর্তীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত স্বাধীনতার স্বপক্ষের শিক্ষক ও কর্মচারীরা এর প্রতিবাদ করায় একাধিকবার তাদের অধ্যক্ষর রোষানলে পরতে হয়েছে। যার ধারাবাহিকতা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
সূত্রমতে, কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের নিয়মানুযায়ী ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জন্য ব্যবস্থাপনা (ম্যানেজিং) কমিটি গঠণ করে বোর্ড থেকে অনুমোদন আনার পরেই জামায়াত নেতারা ছিটকে পরেন। এরপরই জামায়াত নেতাদের সমর্থিত অধ্যক্ষ মোঃ ইখতিয়ার উদ্দিনের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও জামায়াত নেতাদের সমন্ময়ে সাবেক পরিচালনা কমিটির যোগসাজসে জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। বিস্তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের অডিট রিপোর্টে দেখা গেছে, জামায়াত নেতাদের যোগসাজসে অধ্যক্ষ দুর্নীতির আতুড়ঘরে পরিণত করেছে পুরো কলেজটি। ২০১৮ সালের ৩ জুন অডিট রির্পোট প্রকাশের পর থেকেই অধ্যক্ষ ইখতিয়ার উদ্দিন আত্মগোপন করেন। সেই থেকে তিনি (অধ্যক্ষ) অদ্যবর্দি কলেজে অনুপস্থিত রয়েছেন।
সূত্রে আরও জানা গেছে, চলতি বছরের ২২ মে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সম্মতিক্রমে কারিগরি শিক্ষাবোর্ড কলেজের এডহক কমিটির অনুমোদন করেন। কমিটি অনুমোদনের পূর্বে শিক্ষাবোর্ডের নিয়মানুযায়ী কোন ট্রাস্টের অধীনে কলেজটি পরিচালনা হচ্ছেনা মর্মে একটি অঙ্গীকারপত্র জমা নিয়েছেন। সূত্রমতে, ওই কমিটিতে জামায়াতের কোন নেতার নাম না থাকায় এবং অঙ্গীকারপত্র দেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে জামায়াত নেতারা ক্ষিপ্ত হন। একপর্যায়ে কৌশলে তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য ওই প্রতিষ্ঠানটি আল-হেলাল ট্রাস্টের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে দাবী করে শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবরে লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করেন।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আল-হেলাল ট্রাস্ট থেকে কখনই আর্থিকভাবে কলেজকে সহযোগিতা করা হয়নি। বরং প্রতিবছর কলেজের উপার্জিত অর্থের একটা অংশ অধ্যক্ষ ট্রাস্টের কর্মকর্তাদের (স্থানীয় জামায়াত নেতাদের) দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বর্তমান সরকারের সময় এমপিওভুক্ত হয়েছে, সেহেতু ট্রাস্টের অধীনে থাকার কোন যৌক্তিকতা নেই। এছাড়াও শিক্ষাবোর্ডের নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠণের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি কোন ট্রাস্টের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছেনা মর্মে অঙ্গীকারনামা দিয়ে বোর্ড থেকে ছয় সদস্য বিশিষ্ট এডহক কমিটি অনুমোদন করানো হয়।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আরো বলেন, কমিটি অনুমোদনের পর পরই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি হয়রানীর উদ্দেশ্যে মিথ্যে তথ্য উপস্থাপন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি আল-হেলাল ট্রাস্টের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে মর্মে বোর্ড চেয়ারম্যান বরাবরে একটি লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করেন। ফলে শিক্ষাবোর্ড ও কলেজ সংশ্লিষ্টরা চরম বিভ্রান্তির মধ্যে পরেছেন। পাশাপাশি গঠিত এহডক কমিটির নেতৃবৃন্দরাও তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। এমনকি আল-হেলাল ট্রাস্ট কোথা থেকে পরিচালিত হচ্ছে তারও কোন হদিস পাওয়া যায়নি বলেও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উল্লেখ করেন।
জামায়াত নেতাদের মিথ্যে ষড়যন্ত্র ও দুর্নীতির অভিযোগে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকা অধ্যক্ষর রোষানল থেকে রেহাই পেতে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি রক্ষা করার জন্য স্বাধীনতার স্বপক্ষের কর্মরত শিক্ষক, কর্মচারী ও এলাকাবাসী স্থানীয় সংসদ সদস্য, শিক্ষামন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর আশুহস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় কলেজে না এসে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকা অধ্যক্ষ ইখতিয়ার উদ্দিন হয়রানীর উদ্দেশ্যে আল-হেলাল ট্রাস্টের নাম ব্যবহার করে সম্পূর্ণ মনগড়া একটি লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করেছেন। অভিযোগের ব্যাপারে ইখতিয়ার উদ্দিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে গত দুইদিন পর্যন্ত যোগাযোগের চেষ্ঠা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
খোঁজনিয়ে জানা গেছে, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে গৌরনদী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন উত্তর পার্শ্বের গয়নাঘাটা ব্রিজ সংলগ্নস্থানে একটি এতিমখানা ও কলেজ নির্মাণের জন্য স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শাহজাহান ঠাকুর ৭৬ শতক জমি দান করেন। পরবর্তীতে ওই জমির ওপর উপজেলা জামায়াত নেতাদের উদ্যোগে গৌরনদী আল-আমিন এতিমখানা গড়ে তোলা হয়। ২০০৬ সালে জামায়াত সমর্থিত ইখতিয়ার উদ্দিন উপজেলার শীর্ষ জামায়াত নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে ওই এতিমখানা ও কলেজের সম্পত্তিসহ পার্শ্ববর্তী সরকারী খালের জমি ভরাট করে গৌরনদী আল-আমিন টেকনিক্যাল এ- বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। শুরু থেকে ইখতিয়ার উদ্দিন ওই কলেজের অধ্যক্ষ পদে অধিষ্ঠিত হয়ে জামায়াতের স্থানীয় নেতাদের নিয়ে কলেজ গবর্নিং বডির কমিটি গঠণ করে লুটপাটে মেতে ওঠেন। শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয় ও ব্যয়ের বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার (অধ্যক্ষ) বিরুদ্ধে।