আলামিন ঘরামী (৩৫) এলাকায় সে একজন ভদ্র ছেলে হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। গ্রামের সবার কাছে বলতো ঢাকার একটি বেসরকারী কনস্ট্রাকশন কোম্পানীতে সে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত রয়েছে।
গ্রামের সহজ সরল মানুষও তা বিশ্বাস করেছিলেন। তবে প্রথমে ঢাকার একটি ছাঁপাখানার শ্রমিক ও পরবর্তীতে গ্রামে এসে পানবরজের শ্রমিক হিসেবে কাজ করা তার বাবার একমাত্র ছেলে আলামিন কোথায় কিভাবে লেখাপড়া করেছে তা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ছিলো নানা প্রশ্ন।
অবশেষে ইয়াবাসহ গ্রেফতারের পর সকল প্রশ্নের সমাধান করে দিয়েছেন বরিশালের গৌরনদী মডেল থানা পুলিশ। গ্রেফতারের কয়েক মিনিট আগেও দেশের শীর্ঘ ইয়াবা আমদানিকারক টেকনাফের রোহিঙ্গা জিয়ার সাথে আলামিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের হোয়াটসঅ্যাপে ইয়াবা সংক্রান্ত ম্যাসেজ আদান প্রদানই প্রমান করে দিয়েছে আলামিন ছিলো ইয়াবা জগতের একজন ইঞ্জিনিয়ার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এরপূর্বেও আলামিন টেকনাফে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ গ্রেফতার হয়েছিলো। তবে সে বিষয়টি তার গ্রামের মানুষের কাছে ছিলো অজানা। গত ২৭ জুলাই সন্ধ্যায় থানা পুলিশের অভিযানে ইয়াবাসহ গ্রেফতারের পর এলাকাবাসীর কাছে ভদ্র ছেলে হিসেবে পরিচিত আলামিনের আসল মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে।
পাশাপাশি গৌরনদী উপজেলার দক্ষিণ কটকস্থল গ্রামের দিনমজুর জয়নাল ঘরামীর মৃত্যুর মাত্র ছয়মাস পর তার একমাত্র ছেলে আলামিন আলাদিনের চেরাগ পেয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকা একমাত্র মা জাহানারা বেগমের জন্য নির্মিত সু-বিশাল ডুপ্লেক্স আলিসান বাড়ি নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে নানা কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে।
শুক্রবার সকালে সরেজমিনে ওই গ্রামের একাধিক বাসিন্দারা বলেন, মাত্র আড়াই বছর আগে পানবরজের শ্রমিক জয়নাল ঘরামী মৃত্যুবরণ করেন। সেসময় তাদের ছিলো ছোট্ট একটি ঘর। তার (জয়নাল) মৃত্যুর মাত্র ছয়মাস পরেই আলামিন গ্রামের বাড়িতে থাকা তার মায়ের জন্য আলিসান বাড়িটি নির্মান করেছেন। এ বাড়ির সকল মালামাল ও আসবাবপত্র ঢাকা থেকে আনা হয়েছে। এমনকি ঢাকা থেকে লোক এসে বাড়ির আসবাবপত্র সাজিয়ে দিয়েছেন।
তারা আরো জানান, পুরো উপজেলার মধ্যে নজরকাড়া এ বাড়িটি নির্মানে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। যা অনেক সময় আলামিন গর্ব করে এলাকাবাসীর কাছে বলতেন। নামপ্রকাশ না করার শর্তে আলামিনের একাধিক প্রতিবেশীরা বলেন, আমরা জানতাম আলামিন ঢাকার একটি বেসরকারী কনস্ট্রাকশন কোম্পানীতে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত রয়েছে। এমনকি আলামিন ঘরামী এলাকায় একজন ভদ্র ছেলে হিসেবেও সবার কাছে পরিচিত ছিলো। তারা আরও বলেন, এসএসসি পাশ করার পর আলামিন গ্রাম থেকে ঢাকায় গিয়ে বসবাস শুরু করে। তখন তার বাবা ঢাকার একটি ছাঁপাখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো। তার একার উপার্জনে সংসারের ভরন পোষনের পাশাপাশি দুই মেয়েকে পাত্রস্থ করেছেন। তারপরে আলামিন কিভাবে লেখাপড়া করে ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে তা সবার কাছে ছিলো প্রশ্নবিদ্ধ।
আলামিনের বাড়ির পাশের অপর এক প্রতিবেশী বলেন, ঢাকা থেকে গ্রামে ফিরে এসে আলামিনের বাবা জয়নাল ঘরামী আমার সাথে দীর্ঘদিন পানবরজের শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন। বিগত প্রায় আড়াই বছর পূর্বে সে (জয়নাল) মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর ছয়মাস পরেই গ্রামের বাড়িতে থাকা মায়ের জন্য আলামিন ডুপ্লেক্স আলিসান বাড়িটি নির্মান করে দিয়েছেন। সরেজমিনে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, চোখ ধাঁধানো ডিজাইন, বাড়িটির ভেতরে রয়েছে একাধিক কক্ষ ও একাধিক সিঁড়ি। প্রত্যেক কক্ষে অত্যাধুনিক আসবাবপত্রে সাজানো।
গৌরনদী মডেল থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক পুলিশ অফিসার বলেন, আলামিন ঘরামী ছিলো দেশের শীর্ষ ইয়াবা আমদানিকারক টেকনাফের রোহিঙ্গা জিয়ার অন্যতম সহযোগী। গৌরনদী মডেল থানার ওসি মোঃ আফজাল হোসেন বলেন, গত ২৭ জুলাই বিকেলে মাদক বিক্রয়ের খবর পেয়ে কটকস্থল এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুইশ’ পিচ ইয়াবাসহ আলামিন ঘরামী ও তার সহযোগী ইমরান ঘরামীকে গ্রেফতার করা হয়।
অসংখ্য এলাকাবাসীরা বলেন, কি পরিমান ইয়াবা আমদানির পর তা বিক্রি করে এমন আলিসান বাড়ি করা যায় তা ভাবতেও অবাক লাগে। গ্রেফকারকৃতদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেই আরো অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে। তারা আরো বলেন, যাদের কারণে যুবসমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে সেইসব ইয়াবা আমদানিকারক ও বিক্রেতাদের দৃষ্টান্ডমূলক শাস্তি হওয়া দরকার।
আলামিন ঘরামীর মা জাহানারা বেগম তার ছেলেকে নির্দোষ দাবী করে বলেন, বাড়ি নির্মানে আমার আত্মীয়স্বজন টাকা দিয়েছে। তবে সম্প্রতি সময়ে আলামিন টেকনাফে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ গ্রেফতার হওয়ার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে উল্লেখ করেন।