খুলনার মেসার্স পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা ডিপোগুলোতে আসা ট্যাংকার গুলো থেকে লাখ লাখ টাকার নানা রকম জ্বালানি তেল সুকৌশলে তেল চোরদের হাতে চলে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ ও দেশের জনগণ ও ওই ডিপোগুলোর ডিলাররা। পাশাপাশি সরকার প্রতিবছর লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রকাশ্য দিবালোকে উল্লিখিত তেল চোরদের তৎপরতা অব্যহত থাকলেও আইন প্রয়োগকারী সকল সংস্থা অজ্ঞাত কারণে নিরব দর্শকের ভূমিকায়।
এলাকাবাসী ও বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে বিভিন্নরকম জ্বালানি তেল সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভৈরব নদী তীরে গড়ে ওঠেছে মেসার্স পদ্মা, মেসার্স মেঘনা ও মেসার্স যমুনা নামে তিনটি জ্বালানি তেলের ডিপো। এ সকল ডিপোগুলোতে বিভিন্ন রকম জ্বালানি তেল চট্টগ্রাম থেকে লোড নিয়ে আসা জাহাজগুলো ভৈরব নদীতে নঙ্গর করে ৪/৫ দিন তেল খালাসের জন্য অপেক্ষা করে। খুলনা নগরীর কাশীপুর, নদীর পাড়ে ঘর বেঁধে ও ফরমাইশখানা গ্রামের একটা মহল নানা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে আঁতাত করে সুকৌশলে ওই জাহাজগুলো থেকে প্রতিদিন নানারকম লাখ লাখ টাকার জ্বালানি তেল চুরি করে দিঘলিয়া ও খুলনা শহরের বিভিন্ন দোকান ও ডিলারের কাছে বিক্রি করছে।
মেসার্স পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নামে তেলের ডিপোর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী, জাহাজের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে আঁতাত করে পাচার করে খুলনা ও আশপাশের জেলাগুলোতে বিক্রি করছে এসব অবৈধভাবে পাচার হওয়া বিভিন্ন রকম জ্বালানি তেল। এসব তেলের মধ্যে ফার্নেস ওয়েল, ডিজেল, পেট্রোল, কেরোসিন, অকটেন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এসকল চোরাই তেল সংরক্ষণ ও কেনাবেচার জন্য খালিশপুর ও কাশিপুরে বাড়ির মধ্যে ভূমিতে হাউজ করা হয়েছে। কেউ কেউ রাস্তার পাশে শার্টার যুক্ত ঘর করেছে। কেউবা নদীর কূলে বা ডিপোগুলোর রাস্তার পাশ দিয়ে বেড়া বা শার্টারযুক্ত ঘর করেছে। ট্যাংলরীগুলো ডিপোগুলো থেকে তেল লোড নিয়ে বের হওয়ার সাথে সাথে শুরু হয় জ্বালানি তেল চুরির মহৌৎসব।এ সকল তেল চোরাই চক্রের সাথে বিভিন্ন ডিলার ও ডিপোর কর্মকর্তা কর্মচারীদের আঁতাত থাকে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে তেল ধরা পড়লে মুহূর্তের মধ্যে বৈধ মালিকানাসহ কাগজপত্র তৈরি হয়ে যায়। এসব তেল চোর ঘরের সামনে অপেক্ষা করে এবং ট্যাংকলরীগুলো ডিপো থেকে বের হলে ঘরের শার্টার খুলে ড্রাম নিয়ে নিজরাই ট্যাংকলরী থামিয়ে পাইপ খুলে দিয়ে তেল ভর্তি করে ঘরে রেখে শার্টার বন্ধ করে দেয়। রাস্তার পাশে ঘর করে তেল চোরা কারবারীর সংখ্যা প্রায় ২ শতাধিক। কেউ কেউ ঘেরা দিয়ে গড়ে তুলেছে স্থাপনা।
এক সূত্র থেকে জানা যায়, এ ডিপোগুলোর জ্বলানি তেল লোড দেওয়ার কাজে নিয়োজিত কর্মচারিদের সাথে ওয়াগন ও ট্যাংকলরী চালক ও শ্রমিকদের আঁতাত থাকে। তাঁরা গোপন স্যালামীর বিনিময়ে প্রয়োজনীয় তেলের চেয়ে বেশী লোড দেয়। সেই তেল ডিপোগুলো থেকে বেরিয়ে নির্ধারিত ঘরে গিয়ে বিক্রি করে দেয় ট্যাংলরীর চালক ও কর্মচারীরা। এমনকি এ চোরাই চক্র ডিপোগুলো থেকে খুলনাগামী ট্রেন লাইনের পাশেও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে ট্রেনের জ্বালানি তেল ভর্তি ওয়াগন থেকে তেল চুরি করে আসছে বছরের পর বছর ধরে। এদিকে কাশিপুরের একটি তেলচোরাই চক্র বিভিন্ন নৌকা নিয়ে ভৈরব নদীতে নঙ্গর করা ট্যাংকার থেকে ক্যান ভর্তি করে তেল চুরি করে।
এতেলচোরাই চক্রের মধ্যে কাশিপুরের লোকমান, তরিকুল, আজগর, রকি, রবিন, পলাশ, নাসির সুমন, মহিদুল, অন্তু উল্লেখযোগ্য।
আইন প্রয়োগকারী সকল সংস্থা অজ্ঞাত কারণে নিরব দর্শক। সূত্র থেকে আরো জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে আগত জাহাজগুলো তীরের একটা মহলের মাধ্যমে ২০/৩০ হাজার টাকা ডাকে বিক্রি হয়। ঘাটের উপরের একজন ও একজন নৌকা মাঝি সারা বছর এ জাহাজ নিয়ন্ত্রণ করে এবং তেল পাচার করে। নতুন নতুন জাহাজ এলেই এভাবে বেচা-কেনা হয়। ফলে প্রতিবছর পেট্রো বাংলার কোটি কোটি টাকার জ্বালানি তেল ক্ষতি হয়। সরকার হারায় রাজস্ব। দিঘলিয়ার একটা প্রভাবশালীমহল নপথ্যে থেকে এ অবৈধ ব্যবসা বছরের পর বছর চালিয়ে আসছে বলে জানা যায়। সাধারণ জনগণ গুনছে ভর্তুকি। কয়েক বছর আগে দিঘলিয়া থানা পুলিশ ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা জোর অভিযানে এ তেল চোর ঘরে উঠলেও বর্তমানে পুনরায় জোরে সোরে শুরু করেছে বলে জানা যায়। এ অবৈধ নানা রকম জ্বালানি তেল চুরির আধিপত্যকে কেন্দ্র করে শিশু বাচ্চু, সাকিব, মামুনসহ কয়েকটি হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত হয়। এই অবৈধ তেলের ব্যবসা ও ঘাটের শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ফরমাইশখানা গ্রামের আ'লীগ নেতা খলিল মোড়ল, দিঘলিয়া সদর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোল্লা হারুন অর রশিদ ও শেখ ফরহাদ হোসেন চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়েছেন। কেউবা মিথ্যা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে শুধু ঘাট নয় এলাকা ছাড়া হয়েছে। কেউ কেউ বলছে মুন্না হত্যা রহস্য এই জ্বালানি ব্যবসার আধিপত্য জড়িত থাকতে পারে। এ হামলার সাথে জড়িতের পিছনে প্রভাবশালীমহল জড়িত থাকার কারণে বিচারের দ্বারস্থও সেদিন হতে পারেনি। এ ব্যাপারে দিঘলিয়া থানার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ নজরুল ইসলাম এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, মেসার্স পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা ডিপো ও বাইরের রাস্তা ও এলাকাগুলো খালিশপুর থানার অন্তর্গত। এ ব্যাপারে খালিশপুর মেট্রো থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ জাহাঙ্গীরের সাথে মুঠোফোনে কথা হয় এ প্রতিবেদকের সাথে। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, ঘটনাগুলো তদন্ত করে দেখা হবে। অবৈধ এ কারবারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরো জানান, নদীতে যে ঘটনা ঘটে সেটা দেখবে নৌ থানা পুলিশ। এ ব্যাপারে কথা হয় কেএমপি সদর নৌ থানার অফিসার ইনচার্জ অনিমেষ হালদারের সাথে। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, তিনিও এ ব্যাপারে অবগত হয়েছেন। খুব শিঘ্রই এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।