কুড়িগ্রামে হত্যার শিকার আবদুর রাজ্জাকের (৩৩) গর্ভবতী স্ত্রী আমিনা বেগম ও তার ৫ বছরের কন্যাসন্তান রোকাইয়া মানববন্ধনে রাজ্জাক হত্যার সঙ্গে জড়িতদের ফাঁসির দাবি করেছে।
শনিবার ফুলবাড়ী উপজেলা শহরের জিরোপয়েন্টে ফুলবাড়ী অটো শ্রমিক সমিতি আয়োজিত মানববন্ধনে ফাঁসির দাবি তুলে ধরেন।
হত্যার শিকার আবদুর রাজ্জাকের গর্ভবতী স্ত্রী আমিনা বেগম বলেন, আমার স্বামী একজন সরল মানুষ ছিল। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি আমার ৫ বছরের কন্যাসন্তান রোকাইয়া ও গর্ভের শিশু সন্তান নিয়ে অসহায়ত্বভাবে জীবন যাপন করছি।
আমি রাজ্জাক হত্যার সঙ্গে জড়িত গ্রেফতারকৃত ও পলাতক সকল আসামীর সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি করছি। এদের ফাঁসি হলে আমার স্বামীর আত্মার শান্তি পাবে।
মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ফুলবাড়ী অটো শ্রমিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাজু, নিহত আবদুর রাজ্জাকের বড়ভাই জহুরুল হক প্রমূখ। কাজী সাজু বলেন, ইদানীং পেটের দায়ে বের হওয়া অটোরিকশা চালকরা অনেকটা অসহায় ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
আব্দুর রাজ্জাকের মতো অনেকে হত্যার শিকার হচ্ছে। আমরা ফুলবাড়ী অটো শ্রমিক সমিতির পক্ষ থেকে সড়কে সড়কে পুলিশি টহল জোড়দারের দাবি করছি। পাশাপাশি আমাদেও সহকর্মী রাজ্জাক হত্যার সঙ্গে জড়িতদের ফাঁসির দাবি করছি।
জানা গেছে, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী বড়ভিটা ইউনিয়নের নওদাবশ গ্রামের মৃত-সিদ্দিক মিয়ার ছেলে নিহত যুবক আবদুর রাজ্জাক পেশায় একজন অটোরিকশা চালক ছিলেন। এক সন্তানের জনক আবদুর রাজ্জাক বাড়ি থেকে অটোরিকশা নিয়ে বের হন।
৬ জুলাই রাত ৮টার দিকে ফুলবাড়ী উপজেলার খড়িবাড়ী বাজার হতে নাগেশ্বরী যাওয়ার কথা বলে নিহত আবদুর রাজ্জাকের অটো রিকসা ভাড়া করে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতিকারীরা। পরবর্তীতে সে রাতে বাড়িতে ফিরে না আসায় বাড়ির লোকজনের সন্দেহ হয়।
তারা তাকে খোঁজাখুজি শুরু করে। মাইকিং করা হয় তার সন্ধান পেতে। কিন্তু এতে আবদুর রাজ্জাকের সাড়া মেলেনা। ৭ জুলাই বৃহস্পতিবার শেষ বিকেলে রাবাইতারী গ্রামের আবদুস সামাদ বিএসসির বাড়ির সংলগ্ন একটি পাটক্ষেতে একটি উলঙ্গ লাশ পড়তে দেখে এলাকাবাসী শোরগোল শুরু করে। বিষয়টি এলাকাবাসী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানায়।
খবরটি ছড়িয়ে পড়লে নিহত আবদুর রাজ্জাকের পরিবারের লোকজন তার লাশটি সনাক্ত করে। ওই সময় লাশটি উদ্ধার করা হলেও তার ব্যবহৃত অটোরিকশাটি পাওয়া যায়নি। লাশটির দু’পা বাঁধা ও উলঙ্গ অবস্থায় পড়ে থাকায় নিহতের পরিবারের সদস্যরা ধারনা করেন, আবদুর রাজ্জাককে হত্যা করে তার ব্যবহৃত আটোরিকশাটি ছিনতাই করা হয়েছে।
এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী আমেনা বেগম বাদী হয়ে ফুলবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা দ্রত সময়ে রাজ্জাক হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি ও অটোরিকশাটি উদ্ধার করার দাবি তোলে।
এলাকাবাসীর দাবি ও হত্যা মামলার আলোকে ফুলবাড়ী থানার ওসি ফজলুর রহমানের ঘুমহীন অবিরাম প্রচেষ্টায় অবশেষে ঘটনার ৬ দিন পর সকালে পাশ্ববর্তী নাগেশ্বরী উপজেলার পৌর এলাকা বানিয়া পাড়া ফকিরটারী গ্রাম থেকে অটোরিকশাটি উদ্ধার করা হয়।
এদিকে অটো রিকসা ছিনতাইয়ের ঘটনায় দুই আসামীকে গ্রেফতার করে প্রেস ব্রিফিং করে জেলা পুলিশ। ১৪ জুলাই দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের হলরুমে প্রেস ব্রিফিং-এ এসব তথ্য জানান সিআইডি’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত চন্দ্র রায়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গত ৬ জুলাই রাত ৮টার দিকে ফুলবাড়ী উপজেলার খড়িবাড়ী বাজার হতে নাগেশ্বরী যাওয়ার কথা বলে নিহত আবদুর রাজ্জাকের অটো রিকসা ভাড়া করে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতিকারীরা।
পরে ৭ জুলাই বিকেলে সাড়ে ৬টার দিকে ফুলবাড়ী উপজেলার রাবাইতারী গ্রামের আবদুস সামাদ বিএসসি মাষ্টারের বাড়ির সামনে আক্কাছ আলীর পাট ক্ষেত থেকে অটোচালক আবদুর রাজ্জাকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহত আবদুর রাজ্জাকের স্ত্রী আমিনা বেগম বাদী হয়ে ফুলবাড়ী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। পরে ফুলবাড়ী থানা পুলিশ প্রযুক্তি ও নানা কলাকৌশল অবলম্বন করে গত ১২ জুলাই ঘটনার সাথে জুড়িত মমিনুল ইসলাম মিজান (২৪) ও তার প্রতিবেশি বন্ধু আবদুর রশিদ রোকনকে (২৩) গ্রেফতার করে পুলিশ।
পরে তাদের দেয়া তথ্যমতে নাগেশ্বরী উপজেলার ফকিরপাড়ার হামিদুলের বাড়ী থেকে অটো রিকসাটি উদ্ধার করা হয়। আসামীদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
এই হত্যার ২৩ দিন পর ৩০ জুলাই শনিবার ফুলবাড়ী অটো শ্রমিক সমিতি আয়োজিত মানববন্ধনে আবদুর রাজ্জাককে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের ফাঁসির দাবি তুলে ধরেন রাজ্জাকের স্ত্রী-সন্তান ও এলাকাবাসী।