কোনো নাগরিক সুবিধা নেই শেরপুরের ঝিনাইগাতীর ডেফলাই বেদে পল্লীতে। এ পল্লীতে প্রবেশের নেই সড়ক। এ ছাড়া পল্লীতে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় বছরের পর বছর শিক্ষা বঞ্চিত রয়েছে বেদে শিশুরা। ভোটার হওয়া সত্ত্বেও পাচ্ছেন না কোনো নাগরিক সুবিধা। শুধু প্রতিশ্রুতির বেড়াজালেই আটকে আছে বেদে পল্লীর উন্নয়ন। ২০১০ সালে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার দক্ষিণ ডেফলাই গ্রামে ৬ একর জমি কিনে স্থায়ী আবাসস্থল গড়ে তোলেন বেদে সম্প্রদায়ের ১১৪ টি পরিবার। নানা কারণে উপার্জন কমে যাওয়ায় ডাঙ্গায় জমি কিনেছেন তারা। ঘর তৈরির সামর্থ্য না থাকায় তারা পলিথিনে মোড়ানে ঝুপড়ি ঘরে থাকেন। জীবন-জীবিকার সংকটে পড়ে পুরনো এ পেশায় টিকতে পারছেন না তারা। অন্যদিকে অর্থাভাবে অন্য পেশাও বেছে নিতে পারছেন না অবহেলিত এ সম্প্রদায়।
জানা যায়, অভাব-অনটন, দুঃখ আর দুর্দশাই এ পল্লীর বাসিন্দাদের নিত্য সঙ্গী। ওইসব বেদে সম্প্রদায়ের লোকজন ঢাকার সাভারসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে এখানে বস্তি স্থাপন করেছেন। বর্তমানে প্রায় ৪শ’ পরিবার রয়েছে ওই পল্লীতে। ওই ৪শ’ পরিবারের ছোট-বড়, নারী-পুরুষ ও শিশুসহ প্রায় ৬ শতাধিক লোকের বসবাস।
বেদে পল্লীর জামাল মিয়া বলেন, বাড়ি করার জন্য ৫/১০ শতাংশ করে জমি কিনেছেন কেউ কেউ। অর্ধশতাধিক পরিবার ঘর- বাড়ি নির্মাণ করেছেন। আবার অনেকে আর্থিক সংকটের কারণে ঘরবাড়ি নির্মাণ করতে পারেনি। তারা ঝুপড়ি বেঁধে রাত যাপন করেন। আবার অনেকেই রয়েছেন ভূমিহীন। তারা অন্যের জমিতে ঝুপড়ি বেঁধে রাত যাপন করেন।
বেদে মাইনুল হক বলেন, তাদের আদি পেশা ঝাড়ফুঁক, শিংগা লাগানো, সাপ খেলা দেখানো ও সাপ ধরা। এ পেশায় তারা আর টিকে থাকতে পারছেন না। তাদের আদি পেশা না পারছেন ধরে রাখতে। না পারছেন ছেড়ে দিতে। তিনি বলেন, সরকার আমাদের জন্য আর্থিক সহায়তা দিলে আমরা উপকৃত হবো, অন্যপেশা বেছে নিতে সক্ষম হবো। তিনি আরও বলেন, আদিকালে নৌকা যোগে একঘাট থেকে আরেক ঘাটে বেদেরা বিচিত্র জীবন যাপন করতেন। নৌকার বহর নিয়ে ঘুরে ঘুরে সারাদেশে নদী পথে থেকে তাদের ওইসব পেশায় করতেন জীবন-জীবিকা নির্বাহ। কিন্তু কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় ঝাড়ফুঁকে বিশ্বাসী নয় মানুষ। এতে ঝাড়ফুঁক আর সাপের খেলায় জীবন জীবিকা নির্বাহ করা সম্ভব হচ্ছে না তাদের। দেশের নদনদীগুলোও পড়েছে অস্তিত্ব সংকটে। ফলে তারা আদি পেশায় টিকে থাকতে না পেরে ডাঙ্গায় উঠতে শুরু করেছেন। ওই পল্লীর আরেক বেদে মাসুদ রানা বলেন, বর্তমানে একটি নৌকা তৈরি করতে যে টাকার প্রয়োজন হয়, তা জোগাড় করা সম্ভব হয় না তাদের। বেদে রুবেল মিয়া বলেন, ডেফলাই বেদে পল্লীর কেউ কেউ অন্যপেশা বেছে নিতে শুরু করেছেন। আবার কেউ কেউ আর্থিক সংকটের কারণে নতুন কোনো পেশা বেছে নিতে পারছেন না। বর্তমান পরিস্থিতিতে বেদে সম্প্রদায়ের লোকজন চরমভাবে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছেন। বেদে সম্প্রদায়ের লোকেরা না পারছেন আদি পেশা ধরে রাখতে। না পারছেন ছেড়ে দিতে।
বেদে পল্লীর বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন বলেন, এ পল্লীতে রয়েছে নানা সমস্যা। এ পল্লীতে প্রবেশের কোনো রাস্তা নেই। একটি রাস্তার অভাবে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মসজিদটির অবস্থা জরাজীর্ণ। বেদে সম্প্রদায়ের লোকদের দাবি পল্লী থেকে দক্ষিণে পাঁকা রাস্তায় আসা-যাওয়া করার জন্য একটি রাস্তা জরুরি প্রয়োজন। বেদে পল্লীর আইয়ুব আলী বলেন, অর্থিক সংকটের কারণে বেদে পল্লীর শিশুকিশোররা ইচ্ছে থাকা সত্বেও শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বেদে পল্লীর অনেকেই পায়নি বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধি ভাতা।
নলকুড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রুকুনুজ্জামান বলেন, আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা যতটুকু পেয়েছি তা থেকে বেদে পল্লীতে দিয়েছি। পরবর্তীতে বেদে পল্লীর সমস্যাগুলো পর্যায়ক্রমে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
এ ব্যাপারে ঝনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুক আল মাসুদ বলেন, যাদের ১০ শতাংশ জমি আছে ক তফসিলের আওতায়। উপজেলা প্রশাসন বরাবর আবেদন করা হলে এসব গৃহহীনদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।