আমদানির ক্ষেত্রে বায়ার্স ক্রেডিট দুই বছরের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে, যা খুবই উদ্বেগজনক। জানা যায়, ২০২০ সালে দেশে বায়ার্স ক্রেডিট ছিল ৪৩৫ কোটি ডলার; ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত তা বেড়ে ৮৫০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। এ হারে বায়ার্স ক্রেডিট বৃদ্ধি পেলে তা দেশের অর্থনীতির ওপর কী ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে, এটি সহজইে অনুমেয়। এ ধরনের ঋণ অর্থনৈতিক কর্মকা- বাড়াতে সহায়ক হলেও তা বড় ঝুঁকিও সৃষ্টি করে। যেমনটি এখন হয়েছে। বিদেশি কোম্পানিগুলো তাদের পণ্য বিক্রির সুবিধার্থে আমদানিকারকদের এ ধরনের ঋণ দিয়ে থাকে। চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কানাডা-এসব দেশ থেকে ওই ঋণ দেওয়া হয়। এসব ঋণ স্বল্পমেয়াদি হওয়ায় এগুলো পরিশোধ করতে গিয়ে রিজার্ভের ওপর চাপ তৈরি হয়। এ ধরনের ঋণের মেয়াদ থাকে সাধারণত ছয় মাস। এ সময়ের জন্য কমপক্ষে ৬ শতাংশ হারে সুদ দিতে হয়। এর সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সার্ভিস চার্জ। সব মিলে সুদের হার দাঁড়ায় ৮ শতাংশেরও বেশি। বৈদেশিক মুদ্রায় এ সুদ পরিশোধ করতে হয় বলে কার্যকর সুদ অনেক বেশি পড়ে, যা বাংলাদেশের ১৪-১৬ শতাংশ সুদের চেয়েও বেশি। বস্তুত বায়ার্স ক্রেডিটের প্রায় সবই বিলাসী পণ্য ঋণ। ফলে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। বায়ার্স ক্রেডিটের বিপরীতে দেশে যেসব পণ্য আমদানি করা হয়, এসব পণ্যের বেশির ভাগই দেশে উৎপাদিত হয়। দেশি পণ্য ব্যবহার না করে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির ফলে দেশি শিল্পের বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। দেশে যেসব পণ্য উৎপাদিত হয় না, সেগুলো ছাড়া অন্য পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে আমদানিকারকদের দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেওয়া উচিত। বিলাসী পণ্য আমদানিকে নিরুৎসাহিত করার জন্য সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। গত দুবছরে বায়ার্স ক্রেডিটের বিপরীতে দেশে বিলাসী পণ্য আমদানি যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, তা বিবেচনায় নিলে এটা স্পষ্ট হয়, সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক যত পদক্ষেপই নিক না কেন, এ ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত সুফল পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। এ প্রেক্ষাপটে আমদানিকারকরা যাতে বিলাসী পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত হয়, সেজন্য সেসব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কঠিন শর্ত আরোপ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে দেশীয় শিল্প উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতিতে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমগ্র বিশ্বে খাদ্য উৎপাদন মারাত্মকভাবে বিঘিœত হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে আগামী দিনে সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতিতে নানা ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। আগামী দিনে মুদ্রার বিনিময় হার অস্থিতিশীল হলে ঋণের দায় বৃদ্ধি পাবে; দেশের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়বে। কাজেই এমন পরিস্থিতিতে দেশে বায়ার্স ক্রেডিট অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেলে তা রিজার্ভের ওপর কতটা চাপ তৈরি করবে, এটি সহজেই অনুমেয়। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার জন্য আমাদের দেশের ভোক্তা ও আমদানিকারকদের নানাভাবে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করবে। এ ক্ষেত্রে ভোক্তা ও আমদানিকারকদের দেশপ্রেমের পরিচয় দিতে হবে।