দীর্ঘ ৩ মাস ১৭ দিন বন্ধ থাকার পর আগামী ১৭ আগস্ট মধ্যরাত থেকে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার, সংরক্ষণ ও পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে অলস সময় কাটানোর পর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে জেলেদের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে।
বুধবার (১০ আগষ্ট) বিকেলে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে কাপ্তাই হ্রদের মাছ শিকার বন্ধ খোলার বিষয়ে আলোচনা সভায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়।
রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক মোঃ সাইফুল ইসলাম, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) রাঙ্গামাটি বিপণন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. তৌহিদুল ইসলাম, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) রাঙ্গামাটি নদী উপকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা লিপন মিয়া, মৎস্য ব্যবসায়ী উদয়ন বড়ুয়া, আবদুর শুক্কুর, হারুন, মজিদ, মান্না সওদাগরসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা। বৈঠকে সভার যৌথ সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
রাঙ্গামাটি বিএফডিসি ব্যাবস্থাপক লেঃ কমান্ডার তৌহিদুল ইসলামসহ মাছ ব্যাবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভায় আগামী ১৭ আগস্ট মধ্যরাত থেকে মাছ শিকার শুরু হয়ে ১৮ আগস্ট মাছ ল্যান্ডিং হওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম কাপ্তাই হ্রদে মাছের সুষ্ঠু প্রজনন বংশবৃদ্ধি, মজুদ এবং ভারসাম্য রক্ষার্থে সব ধরনের মৎস্য আহরণ ও পরিবহনের ওপর গত ১ মে থেকে ৩১ জুলাই তিনমাস অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করে জেলা প্রশাসন। তবে হ্রদের পানি পর্যাপ্ত না বাড়ায় ও মাছের পোনার সুষম বৃদ্ধির লক্ষে গত ২৮ জুলাই বৈঠক ডেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রথম দফায় ১৫ দিন মাছ আহরণ বন্ধের নিষেধাজ্ঞা বাড়ানো হয়। তবে এই বৈঠকে গেল বছরের মতো দ্বিতীয় দফায় আহরণ বন্ধের সময়সীমা বাড়ানো হয়নি।
এদিকে, কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার ও পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর ১৭ আগস্ট বুধবার মধ্যরাত থেকে জেলেরা মাছ শিকারে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। রাতেই জেলেরা হ্রদে মাছ শিকার করে ১৮ আগস্ট শহরের ফিরারি ল্যান্ডিং ঘাটে মাছ নিয়ে যেতে শুরু করবেন।
বিএফডিসি রাঙ্গামাটি সূত্রে জানা গেছে, কাপ্তাই হ্রদ থেকে বিএফডিসির অবতরণ কেন্দ্রে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৭,৬৭২ টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭,৯৮১, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৮,১২৩, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮,৪২৩ টন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮,৫৪৯ টন ও ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৮ হাজার টন মাছ অবতরণ করা হয়েছিল। এ বছরও যদি গত মৌসুমের মতো মাত্রাতিরিক্ত মাছ আহৃত হয়, তাহলে মৌসুমের শেষের দিকে মাছ আহরণে ভাঁটা পড়তে পারে।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন রাঙ্গামাটির ব্যবস্থাপক লেঃ কমান্ডার তৌহিদুল ইসলাম জানান, কাপ্তাই হ্রদে মাছের প্রজনন ও কার্প জাতীয় মাছের বংশ বৃদ্ধির জন্য প্রতি বছর ১ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস মাছ শিকার ও বাজারজাত বন্ধ থাকে। কিন্তু এ বছর পাহাড়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় হ্রদের পানি বাড়েনি। তাই মাছের ডিম ছাড়ার সুবিধার্থে মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা আরও এক মাস বাড়ানো হয়। তবে বর্তমানে হ্রদে পানির পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়ছে। ২৮ জুলাইয়ের বৈঠকের সময় পানি ছিল ৯০ এমএসএলের মতো, এখন যেটা দাঁড়িয়েছে ৯৬-এ। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে ১৭ আগস্ট থেকে আহরণ শুরু হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, কাপ্তাই হ্রদের মাছ শিকারে এবার নতুন কিছু নিয়ম করে দেওয়া হয়েছে। জালের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ ও ছিদ্র কতটুকু রাখ যাবে, তা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এতে পোনা মাছ রক্ষা করা যাবে।
১৯৬০ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে কর্ণফুলী নদীর ওপর বাঁধ দেওয়া হয়। এতে ৭২৫ বর্গকিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এশিয়ার সবচেয়ে বৃহত্তম কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টি হয়। এই হ্রদে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন প্রায় ২২ হাজার জেলে।