লালমনিরহাটে যমুনা টিভির প্রতিনিধি আনিসুর রহমান লাডলা, প্রথম আলোর প্রতিনিধি আবদুর রব সুজন ও এখন টিভির প্রতিনিধি মাহফুজুল ইসলাম বকুলসহ চার সাংবাদিকের উপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে ও হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবীতে লালমনিরহাটে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে জেলায় কর্মরত সকল প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন পোর্টালের সাংবাদিক বৃন্দ।
শনিবার (১৩ আগষ্ট) দুপুরে সাংবাদিক পরিবারের ব্যানারে জেলার প্রাণকেন্দ্র মিশনমোড় গোল চত্বরে প্রায় দুই ঘন্টা ব্যাপি এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সারাদেশে আজ সাংবাদিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারছে না। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে এমন হামলা নেক্কারজনক। যেখানে প্রধানমন্ত্রী গণমাধ্যম গুলোকে স্বাধীন ভাবে কাজ করার সুযোগ দিচ্ছে সেখানে যুবলীগের এই সাহেদ এত সাহস কোথায় পায় এবং এরা কোন মহলের নির্দেশে চলে তা বের করতে হবে। সেই সাথে লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজার রহমান মন্ডল ও তার বড় ছেলে সাহেদ মন্ডলকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে লালমনিরহাটের সাংবাদিক সমাজ কঠিন আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে।
সাংবাদিকের উপর এমন ন্যাক্কার জনক হামলার ঘটনায় জেলায় কর্মরত ইলেকট্রনিক,প্রিন্ট ও অনলাইনের সাংবাদিকগন তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সেই সাথে অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি অনুরোধ করেছেন।
মানববন্ধনে ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস পত্রিকার লালমনিরহাট প্রতিনিধি আবু হাসনাত রানার সঞ্চালনায় এবং যুগের আলো পত্রিকার প্রতিনিধি ও প্রেসক্লাব লালমনিরহাটের সভাপতি আহমেদুর রহমান মুকুলের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সাংবাদিক সময় টিভির প্রতিনিধি মোফাখ্খারুল ইসলাম মজনু, আরটিভির প্রতিনিধি হাসান উল আজিজ, এখন টিভির প্রতিনিধি মাহফুজুল ইসলাম বকুল, সাপ্তাহিক আলোর মনির সম্পাদক মাসুদ রানা রাসেদ, প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার প্রতিনিধি জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, সকালের সময় পত্রিকার প্রতিনিধি জামাল বাদশা সহ আরো অনেকে।
উল্লেখ্য, লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজার রহমান মন্ডলের বড় ছেলে সাহেদ মন্ডল একই এলাকার দুই সন্তানের জননীকে ফুসলিয়ে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করে। পরে সাহেদ মন্ডলের আগের স্ত্রী বিষয়টি জানতে পেরে আত্মহত্যার জন্য বিষ খাইলে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। ঘটনাটি সাংবাদিকগন জানতে পারলে হাসপাতালে গেলে সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে অবশ্য জানাযায় সাংবাদিক আস কথা শোনার পর পরই তারা হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গেছে। বিষয়টি লালমনিরহাট জেলা জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
এর পরদিন শুক্রবার (১২ আগষ্ট) বিকেলে যমুনা টিভি, ও প্রথম আলোর সাংবাদিকসহ কয়েকজন সাংবাদিক ওই বিষয়ে সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নে তথ্য সংগ্রহ করতে যায়। সাংবাদিক আসার কথা জানতে পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে সাহেদ মন্ডল ১০/১২ জন সন্ত্রাসী নিয়ে পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের সাকোরপাড় নামক স্থানে সাংবাদিকদের পথরোধ করে। পরে হামলাকারীরা সাংবাদিকের কাছে থাকা ক্যামেরা ট্রাইপড কেড়ে নিয়ে ক্যামেরা ভাংচুর করে এবং সাহেদ মন্ডল ক্যামেরার ট্রাইপোট দিয়ে সাংবাদিকদের এলোপাতারী আঘাত করতে থাকে। এ সময় হামলাকারীরা ট্রাইপোট দিয়ে যমুনা টিভির প্রতিনিধি আনিসুর রহমান লাডলার মাথায় আঘাত করলে তার মাথা ফেটে রক্ত বের হয়। এ সময় যমুনা টিভির ক্যামেরাম্যান আহসান ইসলাম, প্রথম আলোর সাংবাদিক আবদুর রব সুজন, এখন টিভির মাহফুজুর রহমান বকুলের উপর হামলা করে সন্ত্রাসীরা। এ সময় হামলাকারীরা সাংবাদিকদের সাথে থাকা মোবাইল ও হেলমেট কেড়ে নিয়ে যায়। পরে মুমূর্ষ অবস্থায় সাংবাদিকদের উদ্ধার করে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে যমুনা টিভির প্রতিনিধি আনিসুর রহমান লাডলা লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসাদিন আছেন। ওইদিন রাতেই যমুনা টিভির প্রতিনিধি আনিসুর রহমান লাডলা বাদী হয়ে চারজনকে আসামি করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
সাংবাদিকদের উপর এমন বর্বর সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব, সুশিল সমাজসহ জেলার আপামর জনসাধারণ।
সন্ধ্যার পরে সাংবাদিকের উপর হামলার ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে রাতেই লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ছুটে আসেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমানসহ জেলায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সামজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।