মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুর্যোগ কাটিয়ে সাগরে যেতে না যেতেই ফের বিপর্যয়ের মুখে পড়ে ফিশিং ট্রলার নিরপদে ফিরেছে। দুর্যোগ পিছু ছাড়ছে না জেলেদের। শনিবার বিকেল থেকে আবহাওয়া পুনরায় খারাপ হওয়ায় শরণখোলাসহ বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার ট্রলার সুন্দরবনের ছোট নদী-খাল ও উপকূলের বিভিন্ন নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। দুবলা জেলেপল্লী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও মৎস্যজীবি সংগঠনের নেতারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়ায় সরকারি সহযোগীতা কামনা করেছেন।
এদিকে, গত সপ্তাহের বৈরী আবহাওয়ায় লোকসানের পাল্লা ভারি হচ্ছে ট্রলার মালিক ও মহাজনদের। প্রতিটি ট্রলারে নতুন করে আবার দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার বিনিয়োগ করতে হয়েছে মহাজনদের। কিন্তু জাল ফেলতে না ফেলতেই প্রবল ঝড়-জলোচ্ছাসে আবারও সাগর ফুঁসে ওঠে।
শরণখোলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল হোসেন বলেন, একের পর এক দুর্যোগ আমাদের সর্বশান্ত করে দিচ্ছে। টলার মালিক-মহাজন ও আড়ৎদাররা দেনা আর লোকসানে পড়ে অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে অনেকের। এ অবস্থায় আমাদের এবার মরণ ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
আবুল হোসেন আরো বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর চতুর্থ ট্রিপ চলছে। এর মধ্যে প্রথম ট্রিপে সাগর স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু বাকি তিন ট্রিপই দুর্যোগে ইলিশ আহরণ বন্ধ হয়ে যায়। এতে সাধারণ জেলে শ্রমিক পরিবারেও হাহাকার চলছে। সরকার আমাদের সহযোগিতা না করলে আগামীতে ইলিশের ব্যবসা করা কোনোভাবে সম্ভব হবে না।
বাংলাদেশ ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সহসভাপতি এম সাইফুল ইসলাম খোকন সন্ধ্যায় জানায়, ঝড়ের কবলে পড়ে বর্তমানে সাগর থেকে সমস্ত ট্রলার উঠে এসেছে। কয়েক হাজার ফিসিং ট্রলার পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার চর, ছোট ভেদাখালী, বড় ভেদাখালী, অফিস কিল্লা, মাইটের খাল, কচিখালী এবং কলাপাড়ার নিদ্র ছখিনা ও মহিপুর এলাকায় অবস্থান করছে। তবে, এবার কোনো ট্রলার তাদের ঘাটে ফিরে না এসে সাগরের কাছাকাছি নিরপদ স্থানে রয়েছে। দুর্যোগ কেটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যাতে দ্রুত সাগরে নামতে পারে।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের বঙ্গোপসাগরের মোহনায় অবস্থিত দুবলা জেলেপল্লী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিলিপ কুমার মজুমদার মুঠোফোনে বলেন, প্রবল ঝড়ো বাতাসে সাগরে প্রচন্ড ঢেউ হচ্ছে। তার মধ্যে দুপুর (রোববার ) পর্যন্ত আমাদের অফিসের আশপাশের বিভিন্ন খালে কয়েক শ’ ট্রলার আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া বনের আরো অন্যান্য এলাকায় খালেও শত শত ট্রলার রয়েছে। আশ্রয় নেওয়া এসব ট্রলার ও জেলেদের যতোটা সম্ভব খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।