ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে দীর্ঘ একযুগ ধরে লোহার শেকলে বন্দী জীবন যাপন করছে উপজেলার উস্থি ইউনিয়নের ডিগ্রিভুমি গ্রামের মৃত লুৎফর রহমান খাঁনের ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন সেলিম খান। তার বয়স ৩৫। হাত ও পায়ের সঙ্গে লাগানো শেকলই সেলিমের সারা দিনের সঙ্গী। চার ভাই-বোনের মধ্যে সে বড়। খোলা আকাশের নিচে তাঁকে মেহগনি দুইটি গাছের সাথে লোহার শেকলে বন্দি করে রাখা হয়েছে। কখনো বৃষ্টি শুরু হলে মাথার উপরে পলিথিন দিয়ে তাঁকে ঢেকে দেওয়া হয়।
ভারসাম্যহীন সেলিম খানের ভাই অটোরিকশা চালক কিবরিয়া (৩০) বলেন, ভাইয়ের বয়স যখন ২৫ তখন তাঁর শরীরে খিচনি ওঠতো। একপর্যায়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয় যায়। দুইবার পাবনা মানসিক হাসপাতালে নিয়ে গেছি। একাধিকবার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করেও প্রতিবন্ধী কার্ড পায়নি। একটা প্রতিবন্ধী কার্ড পেলে বড়ই উপকার হতো।
ভারসাম্যহীন সেলিমের মা জাহানারা বলেন, আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে পাগল ছেলেকে নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। নিজের বসতবাড়ি ছাড়া আর কোনো জমি নাই। টেহার অভাবে ছেলেডারও চিকিৎসা করাইতে পারতাছি না। দু’বেলা খাবারও ভালো করে জুটে না। অর্ধাহারে-অনাহারে চলছে সংসার। বড় ছেলে অটোরিকশা চালিয়ে সংসারের চাকা ঘুরিয়ে যাচ্ছে কোন রকমে। সংসারে সে যে টাকা-পয়সা দেয় তা দিয়ে সংসার চলে না। ছোট ছেলেটা এসএসসি পরীক্ষা দিবে। ছোট ছেলের লেখা পড়ার খরচসহ সংসারের খরচ চালিয়ে আর মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের চিকিৎসা করতে পারছেন না। পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা বলছেন-উন্নত চিকিৎসা পেলে সুস্থ্য হয়ে উঠতে পারে এজন্য সরকারসহ বিত্তবানদের সহায়তা চেয়েছেন তারা। সঠিক চিকিৎসা পেলে ভালো হতে পারে সেলিম। ফিরে আসতে পারে তার স্বাভাবিক জীবন। প্রতিবেশী আবদুল হালিম বলেন, অপরিচিত লোকজনকে সেলিম জাপটে ধরার চেষ্টা করে। শেকল খুলে দিলে বৈদ্যুতিক তার টেনে ছিড়ে ফেলে। শরীরে কাপড় রাখে না।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম তোতা ভারসাম্যহীন সেলিমের ভাইয়ের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি প্রতিবন্ধীদের কার্ড করে দিতে খুঁজতেছি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মাইন উদ্দিন খান মানিক বলেন, রোগীকে দেখেননি। তবে রোগীর পরিবার যোগাযোগ করলে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা তাছলিমা খাতুন বলেন, খুব দ্রুতই একটি কার্ড করে দেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবিদুর রহমান জানান, ভারসাম্যহীন সেলিমের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।