জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের আত্মস্বীকৃত খুনিদের মধ্যে এখনো পাঁচ জন পলাতক রয়েছে। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের নৃশংসভাবে হত্যা করেন আত্ম-স্বীকৃত বিপথগামী কিছু সদস্য। বিদেশে থাকায় বেচে যান তার দু’ মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। খুনিদের দায়মুক্তি দিতে আইনও করা হয়েছিল। যদিও রাষ্ট্রের একজন নাগরিকের হত্যার বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে, তবুও হত্যাকারীদের দায়মুক্তি দেওয়া হয়। তবে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার শুরু করে দায়মুক্তি বিল রদ করে। ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর তৎকালীন ঢাকার দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল এই মামলায় ১৫ জনের মৃত্যু দ্বন্দ্বের রায় দেন। পরে উচ্চ আদালত ১২ আসামীর মৃত্যু দ- বহাল রাখেন।
২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি রাতে খুনি সৈয়দ ফারুখ রহমান, বজলুল হুদা, একে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও মহি-উদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। আরেক খুনি আজিজ পাশা ২০০১ সালের জুনে জিম্বাবুয়েতে মারা যান। পলাতক খুনিদের মধ্যে আবদুল মাজেদকে ২০২০ সালের ৬ এপ্রিল রাজধানীর গাবতলির এলাকা থেকে গ্রেফতার করার কথা জানায় পুলিশ। কয়েক দিন পর ১১ এপ্রিল রাতে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। গণমাধ্যমের খবর অনুসারে আবদুল মাজেদ দীর্ঘদিন ধরে নাম ও পরিচয় গোপন করে কলিকাতায় বসবাস করতেন। এখনো পলাতক পাঁচ খুনির মধ্যে তিন খুনি খন্দকার আবদুর রশিদ, সরিফুল হক ডালিম ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিনের অব¯’ান সম্পর্কে সরকারের কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে পলাতক অন্য দু’ খুনির অব¯’ান সমর্পকে সরকারের কাছে যে তথ্য রয়েছে। তা থেকে জানা যায় খুনি এস এইচ এম বি নুর চৌধুরী কানাডায় এবং রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। কিš‘ তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করার সম্ভাবনা ক্রমেই ফিকে হয়ে আসছে।
জানা গেছে, মৃত্যুদ- বিলোপ করায় কানাডা থেকে নুর চৌধুরীকে ফেরানোর ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। আর ২০২০ সালের জুনে মার্কিন অ্যাটনি জেনারেল কার্যালয় রাশেদ চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয় সংক্রান্ত মামলার নথি তলব করেছিল। এতে তাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার আশাবাদী হয়েছিল। কারণ মামলাটি পুনরায় চালু হলে রাশেদ চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয় বাতিল হতে পারে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পালা বদলের পর সে প্রক্রিয়া অনেকটা মন মন্থর হয়ে গেছে। সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের সাথে আইনি ও রাজনৈতিক ভাবে এ মামলা নিষ্পত্তি করে রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু বাস্তবায়নে অগ্রগতি হচ্ছে না। তাই পলাতক দু’ আসামীকে দেশে ফিরিয়ে আনা আদৌ সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।
সন্ত্রাসী হত্যাকারীদের আন্তর্জাতিক ভাবে বন্দি-বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে অপরাধীদের সংশ্লিষ্ট দেশে পাঠাবার নিয়ম থাকলেও মাঝে মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ কারী দেশের নীতি নির্ধারকরা তা যথাযথ ভাবে পালন করতে গড়িমসি করেন। এজন্য কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে উদ্যোগী হতে হয়। তাই আমরা আশা করবো বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী নুর চৌধুরী ও রাশেদ চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে আনার আইনি ও রাজনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করবে এবং যত দ্রুত সম্ভব তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত করবেন এবং জাতীয় কলঙ্ক থেকে জাতিকে মুক্ত করবেন।