ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে যৌতুকের জন্য দুই সন্তানের জননী শিখা আক্তার (৩০) কে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে প্রবাসী স্বামী ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় শিখা আক্তার গফরগাঁও থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। শিখা আক্তার উপজেলার লংগাইর ইউনিয়নের মাইজবাড়ী গ্রামের মৃত আবদুল ওয়াহাবের মেয়ে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, এক যুগ আগে উপজেলার গফরগাঁও ইউনিয়নের মহিরখারুয়া গ্রামের রইছ উদ্দিনের ছেলে সাইফুল ইসলাম ঝুমন (৩৫) সাথে শিখা আক্তারের বিয়ে হয়। ওই দম্পতির ঘরে দুইটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। ২০১৭ সালে শিখা আক্তারের ভাই প্রবাসী মোশারফ হোসেন বোনের সুখের কথা চিন্তা করে ৪ লাখ টাকা খরচ করে সৌদি আরব পাঠায়। এর ১ বছর পর থেকে স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। দুই সন্তান নিয়ে শিখা আক্তার স্বামীর বাড়িতে কষ্ট সইতে না পেরে বাবার বাড়িতে চলে আসেন। গত ৮ মাস পূর্বে ঝুমন পরিবারের সদস্যদের যোগসাজশে মোবাইলে চাঁদপুর জেলার মুঞ্জআরা নামে এক মহিলাকে বিয়ে করে। বিষয়টি জানার পর শিখা আক্তার স্বামীর সাথে যোগাযোগ করতে ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেন। পরিচয় গোপন রেখে ভূয়া ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট খোলে স্বামীর সাথে যোগাযোগ করে। প্রেমের সম্পর্ক করে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দেশে নিয়ে আসে। গত ৩১ জুলাই ঝুমন দেশে ফিরলে কৌশলে স্বজনদের সহযোগীতায় বিমানবন্দর থেকে মাইক্রোবাসে তুলে বাড়িতে নিয়ে আসে।নতুন বিয়ে আর করা হলনা পুরাতন বউয়ের হাতে ধরা পড়ে যায়। এরপর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বসে সামাজিক ভাবে স্বামী-স্ত্রীর বিবাদ মিটিয়ে দেয়। এর দুই সপ্তাহ পর ঝুমন স্ত্রীকে বাবার বাড়ি থেকে আরও ৫ লাখ যৌতুক এনে দিতে চাপ দিতে থাকে। শিখা পুনরায় যৌতুক এনে দিতে অস্বীকার করাতে শারীরিক নির্যাতন চালায় তার স্বামী ও পরিবারের লোকজন। শুক্রবার বিকেলে শিখা আক্তার কে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ও লাথি, কিল, ঘুষি মেরে গুরুতর আহত করে।শিখার চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে তাঁকে উদ্ধার করে স্বজনদেয় খবর দেয়। খবর পেয়ে স্বজনরা ছুটে গিয়ে শিখা আক্তার কে প্রথমে গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে অবস্থার অবনতি হলে পরে তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। ঘটনার দিন রাতেই শিখা গফরগাঁও থানায় অভিযোগ দায়ের করে।
শিখা আক্তারের ভাই প্রবাসী মোশাররফ হোসেন বলেন, বোনের সুখের কথা চিন্তা করে ভগ্নিপতি ঝুমনকে সৌদিতে পাঠিয়েছিলাম। এখন ভগ্নিপতি দুইটা সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করছে না। যৌতুকের দাবিতে আমার বোনের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে। তলপেটের লাথির চোটে রক্তক্ষরণ শুরু করছে। শরীরে রক্ত শূন্যতা তৈরি হয়েছে গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে এখন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ঘটনার বিষয়ে জানতে ঝুমনের মোবাইলে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি।
ঝুমনের ভগ্নিপতি নাজিম উদ্দীন বলেন, বিয়ের কয়েক বছর পর দেশে থাকতে দুজনের মধ্যে একবার বিবাদ হয়। পরে আমি আমার স্ত্রী কে নিয়ে মিমাংসা করে দিয়েছিলাম। এখন সে পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে কোন কথা শুনছে না।
গফরগাঁও থানার ওসি ফারুক আহমেদ বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। একজন অফিসার কে দায়িত্ব প্রদান করা হয়ছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।