খুব ভয়ংকর সময় পার করছে বাংলাদেশ। এই দুঃসহ ভয়ংকর সময়ের সূত্রতা তৈরি হয় স্বাধীনতা বিরোধীদের হাত ধরে। পাক বাহিনীর হাতেও ছিলো লাম্পট্যর ছাপ। সেই ছাপ লেগে আছে ৫১ বছর পরের বাংলাদেশে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে অন্ধকারের সাথে বসবাস শুরু হয় আমাদের মায়েদের- বোনেদের। সবসময় তারা সতর্ক থাকে, সতর্ক রাখে নিজেকে-পরিবারকে। কিন্তু তবু বাংলাদেশে বিপদ এসে ভর করেছে ছাত্রী-তরুণী-নারীদের উপর। একটু অতিতের দিকে চোখ রাখলে দেখা যাবে- উনিশশো পঁচানববই সালের ২৩শে অগাস্ট দিবাগত রাত। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া একটি বাসে করে দিনাজপুরের দশমাইল মোড় এলাকায় নামে ইয়াসমিন আক্তার নামে এক কিশোরী। তার বয়স আনুমানিক ১৬ বছর। ইয়াসমিন আক্তার ঢাকার ধানমন্ডির একটি বাড়িতে গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করতেন। ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁগামী একটি বাসে চড়েছিলেন তিনি। দিনাজপুরের দশমাইল মোড় এলাকায় একটি পানের দোকানের সামনে সেই কিশোরী অপেক্ষা করছিলেন দিনাজপুরগামী বাসের জন্য। সে সময় টহল পুলিশের একটি ভ্যান সেখানে হাজির হয়। স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি মেয়েটিকে পরামর্শ দেয় যে পুলিশের গাড়িতে করে দিনাজপুর শহরে যেতে। কিন্তু পুলিশের ভ্যানে করে সেই কিশোরী দিনাজপুর শহরে যেতে রাজী ছিলেন না। তখন পুলিশ সদস্যরা বলেন যে এত রাতে তার সেখানে একা থাকা নিরাপদ নয়। পুলিশের সেই ভ্যানে ছিলেন একজন এএসআই এবং দুইজন কনস্টেবল। শেষ পর্যন্ত খানিকটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও কিশোরীটি পুলিশের ভ্যানে ওঠেন। এরপর দিন সকালে কিশোরীটির মৃতদেহ পাওয়া পাওয়া যায় গোবিন্দপুর নামক জায়গায়। এ ঘটনা নিয়ে স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন সংগঠন বিচারের দাবিতে নানা প্রতিবাদ করতে থাকে। এ খবর ছড়িয়ে গেলে ক্ষোভে-বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে দিনাজপুর। বিভিন্ন সরকারি অফিসে ভাংচুর চালিয়ে তছনছ করা হয়। দিনাজপুর শহরে কাস্টমস গুদামে মালামাল লুট করে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসেও আক্রমণ করা হয়। পরিস্থিতি এতোটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে দিনাজপুর শহরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বিডিআর মোতায়েন করা হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে দিনাজপুর শহরে কারফিউ জারি করা হয়। কিন্তু এই কারফিউকে আমলে নেয়নি সাধারণ মানুষ। কারফিউ উপেক্ষা করেই বিভিন্ন জায়গায় মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। একপর্যায়ে ঘটনার দুইদিন পরে এলাকাবাসী কোতোয়ালী থানা আক্রমণ করে সারারাত থানা অবরুদ্ধ করে রাখে। সে সময় কোন পুলিশ সদস্য থানা থেকে বের হতে পারেনি। পরের দিন দিনাজপুর শহরে শতশত মানুষ বিভিন্ন স্থানে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় কয়েকটি জায়গায় পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। বিক্ষোভের মাত্রা এতোটাই তীব্র হয়েছিলে যে পুলিশ মিছিলকারীদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে এবং তাতে সাতজন নিহত হয়। নিহত ইয়াসমিন আক্তারের গায়েবানা জানাজায় হাজার-হাজার মানুষ অংশ নেয়। সাধারণ মানুষের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে দিনাজপুরের প্রশাসন কার্যত অচল পড়েছিল।
ইতিহাস সবসময় সত্যের পথে থাকে। হয়তো একারণেই ইতিহাস শেখায়, ইতিহাস দেখায় আলোর পথ। এই পথ ধরে এগিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। আইনের সংস্কৃতি গড়তে পারেনি ৫০ পেরিয়ে ৫১ তে এসেও। বরং সেই ইয়াসমিন হত্যার বিচার করতে সময় নিয়েছে প্রায় ৯ বছর। আর এতে করেই উৎসাহিত হয়েছে ধর্ষকেরা, নির্ভয়ে একের পর এক ঝাপিয়ে পরছে। প্রতিদিন ঘটাচ্ছে সেই ধর্ষকেরা ১৪ টিরও বেশি ধর্ষণের ঘটনা। নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে ছশতটিরও বেশি। পুলিশের সেই ধর্ষণের ইতিহাস সৃষ্টি দৃষ্টি ঘুরিয়েছে ছাত্র-যুব-জনতার একটি লম্পট শ্রেণিকে। অন্যদিকে পুলিশের প্রতি মানুষের ক্ষোভ এতোটাই চরমে ওঠে যে পুলিশ সদস্যরা রীতিমতো লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যায়। উনিশশো পঁচানব্বই সালের ২৯শে আগস্ট দিনাজপুর থেকে ভোরের কাগজ পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সে প্রতিবেদনে পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের ক্ষোভকে বর্ণনা করা হয় এভাবে - "গোটা শহরটাই যেন প্রেতপুরী। সব পুলিশ কোথায় যেন গা ঢাকা দিয়েছে। আজ শহরে একটি রিকশায় কিছু আসবাবপত্র পরিবহন করতে দেখলে এক পথচারী জানতে চায়, 'এসব কার মাল?' রিকশাচালক উত্তর দেয়, এগুলো পুলিশের না। শহরবাসী আর পুলিশকে বাসা ভাড়া দিবে না।" এত কিছুর পরও দিনাজপুর শহরে কর্মরত পুলিশ সদস্যরাও রাস্তায় নামেনি। পুলিশের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ এতোটাই চরমে উঠেছিল যে পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তারা বিডিআর পাহারার মধ্য দিয়ে দিনাজপুরে শহরে প্রবেশ করেন। পুলিশের গুলিতে বিক্ষোভকারী নিহতের সংখ্যা অন্তত সাতজন বলা হলেও তৎকালীন সরকার দাবি করে নিহতের সংখ্যা তিনজন। অভিযোগ ওঠে তথ্য গোপনের জন্য পুলিশের গুলিতে নিহত কয়েকজনকে দ্রুত কবর দেয়া হয়। এমন অতিতেরও আড়াই হাজার বছর আগের একটা অতিত তুলে ধরছি, যেখানে নির্মমতায় অন্ধকার নেমে এসেছিলো। অতি শক্তিশালী রোমান সাম্রাজ্যেরও পতন ঘটেছিল এই অন্ধকারের পথ ধরে। আর সেই পতনের ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে লুক্রেসিয়ার নাম। বলা হয়, রোমান সাম্রাজ্যের শেষ রাজার গুণধর পুত্র লুক্রেসিয়াকে ধর্ষণ করেছিল। লুক্রেসিয়া মনে করে এই জঘন্য অপরাধ তার এবং তার পরিবারের সম্মান ধূলায় মিশিয়ে দিয়েছে। সে বিচার চায়। তার প্রার্থনা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয় যা তার সম্মানকে আরও কলুষিত করে। তবে লুক্রেসিয়া তাদের সেই সুযোগ বেশি সময় দেননি। বিতর্ক চলাকালে সে একটা ছুরি নিজের বুকে বসিয়ে দেয়; লুক্রেসিয়া আত্মহত্যা করে। এই ঘটনায় জনগণের ভিতর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তারা ক্ষুব্ধ হয়। এমনটাও বলা হয় যে ব্রুটাস তখন লুক্রেসিয়ার বুকে বিদ্ধ ছুরি বের করে প্রতিজ্ঞা করেন লুক্রেসিয়ার অপমানের প্রতিশোধ নেওয়ার। নানা অন্যায় অবিচার এবং শোষণ নির্যাতনে ক্ষুব্ধ জনগণ ব্রুটাসকে সমর্থন জানায়। শুরু হয় রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, রাজনৈতিক বিপ্লব। রোমান সেনাবাহিনীও জনগণের বিদ্রোহকে সমর্থন জানায়। পতন ঘটে রোমান সাম্রাজ্যের। ধর্ষণ থামাতে ব্যর্থতার হাত ধরে অসংখ্য সরকারের পতন নির্মিত হয়েছিলো। আর তাই পতন ঠেকাতে সতর্ক ছিলেন যারা, তারা টিকিয়ে রাখতে পেরেছিলেন নিজের সা¤্রাজ্য। তাই বর্তমান সরকারের প্রয়োজন হবে বাংলাদেশের মাটি-মানুষকে বাঁচানোর জন্য, নিজেদের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য হলেও ধর্ষণ থামাতে আইনের সংস্কৃতি নির্মাণ করা এখন নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে নিতে হবে। তা না নিলে, ক্ষমতা থাকবে কি না জানি না, তবে বাংলাদেশের মানুষের জীবনে নেমে আসবে আরো গহীন অন্ধকার। যা কারোই প্রত্যাশা না। তাই চাই- সর্বোচ্চ ৩ মাসের মধ্যে প্রতিটি ধর্ষকের মৃত্যুদন্ড, নির্যাতকের যাবজ্জীবন।
ধর্ষণের বিচার হচ্ছে না, ধর্ষণ বাড়ছে প্রতিনিয়ত। তারই প্রেক্ষিতে গাজীপুরে এক বাবা তার ৮ বছরের কন্যা শিশুর উপর যৌন নির্যাতনের বিচার চেয়ে না পেয়ে শিশুকে নিয়ে ট্রেনের নিচে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন। ঘটনাটি আমাদের বিবেককে নাড়া দিলো। রাষ্ট্র ব্যবস্থার দৈন্য দশা নিয়ে আলোচনা শুরু হলো। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানসহ আরও অনেকেই বললেন যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি কারণেই গাজীপুরে হযরত আলী বিচার পাননি এবং অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। প্রিয় সন্তানের সাথে নিজের জীবন দিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি একটা তীব্র ধিক্কার জানালেন। আয়েশা ও তার বাবার আত্মহত্যাকেও আমরা ভুলে যেতে বসেছি মাত্র এক সপ্তাহের ভিতর। লুক্রেসিয়ার মৃত্যু যা পেরেছে এমন হাজার আয়েশা আর তার বাবাদের মৃত্যু তা কি কখনো পারবে? পারবে কি বিচারহীনতার সংস্কৃতির উপর আঘাত হানতে? প্রশ্নটা অনেকের মত আমারও। আর তাই বলতে চাই- আয়েশা আর তার বাবার আত্মহননের ঝড় থামতে না থামতেই সামনে এলো আরেক ধর্ষণের ঘটনা। এবার খোদ রাজধানী শহরে। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। শুরুতে পুলিশ মামলা নিতে চায়নি; কারণ বিত্তশালী পরিবারের সন্তানদের বিরুদ্ধে এই জঘন্য অপরাধের অভিযোগ এসেছে। অনেক সমালোচনার পর পুলিশ মামলা নিয়েছে। তবে প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান হবার কারণে যাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কয়েক দিন হলো প্রতিবাদ ও সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। নতুন ঝড়ের কবলে পড়ে গাজীপুরের হযরত আলী আর তার মেয়ের আত্মহননের ঘটনা আড়ালে চলে গেছে। রাজধানীর আলোচিত ধর্ষণের ঘটনার তদন্ত ও বিচার কোন দিকে মোড় নিবে সেটা নিশ্চিত করে বলা না গেলেও বিদ্যমান বিচার ব্যবস্থার উপর আমাদের ক্ষয়িষ্ণু আস্থার কারণেই এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিয়ে অনেকের মনে সন্দেহ জন্ম নিয়েছে।
এমন নিদারুণ সময়ের হাত ধরে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে ছাত্র-যুব-জনতাকে অবিরাম মানবতাহীন নির্মম কষ্ট দিয়ে। কষ্টসময়ে এসে সংবাদযোদ্ধা হিসেবে, বাংলাদেশের রাজপথে থাকা সচেতন নাগরিক হিসেবে গণমাধ্যম নিয়মিত পড়ার কারণে লক্ষ্য করেছি- গত ৩ বছরে ধর্ষণ সংক্রান্ত ৩ হাজার ৪০০ টি ঘটনা ঘটেছে। আমাদের দেশে আকাশ-সড়ক- রেল ও নৌপথের বিভিন্ন যানবাহন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র, এমনকি বাড়িতে দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। বর্তমানে দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিটি ক্ষেত্রই উদ্বেগজনকহারে বেড়ে চলেছে। এখনই সময় নারীদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে। আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রতিদিনই দেখছি নারীরা তাদের কর্মক্ষেত্রে কোনো না কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। দেশের প্রত্যেক কর্মক্ষেত্রেই যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি নিশ্চিত ও কার্যকর করা গেলে নারীদের প্রতি এই ধরনের সহিংসতার ঘটনারোধ করা সম্ভব। নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হলেও চাকরি হারানোর ভয়ে, সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়ে তারা অভিযোগ করতে পারে না। এ ক্ষেত্রে নারীর প্রতি সমাজের সবার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আনতে হবে।
পোশাক-ই ধর্ষণের কারণ হিসেবে বাংলাদেশের একটি শ্রেণি চিহ্নিত করতে উঠে পরে লেগেছে। তাদের হয়তো জানা নেই পবিত্র কোরআন বলছে- ‘তোমরা তোমাদের দৃষ্টি-লজ্জাস্থান ও জিহ্বাকে সংযত রাখো।’ ধর্মীয় অনুশাসন না মানায় অন্ধকার নেমে আসছে, নারী-পুরুষ সবাই যদি ধর্মীয় অনুশাসন মানে ভালোই হবে বলে ধারণা করছেন ধর্মীয় আলেমগণ। অন্যদিকে আমি মনে করি- ধর্ম মানা না মানা কোন বিষয় নয়; মানবিক হলেই পৃথিবী কল্যাণকর হতে পারে। সেই পৃথিবীতে নারীর পোশাক নয়; পুরুষের দৃষ্টি সংযত রাখাই হোক কল্যাণের পথ। একই সাথে বলবো, যারা ধর্ম না মেনে, মানবতাকে না মেনে অপরাধ-ধর্ষণ করে যাচ্ছে। সেই অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না করার ফলে ধর্ষণ ও সহিংসতার ঘটনা বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশে যৌন হয়রানির বর্তমান পরিস্থিতিতে সারা দেশে নারীরা অসহায়। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সোচ্চার হওয়ার মতো কাউকে তারা পায় না।
ধর্ষণ-নির্যাতন-নিষ্পেষনের রাস্তা ধরে ক্রমশ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে কষ্ট-যন্ত্রণা। এই যন্ত্রণায় কাতর কুমিল্লার সোহাগী জাহান তনুর পরিবারের সদস্যরা। ধর্ষণের পর তাকে হত্যা করা হয়েছে। লাশ উদ্ধার হয়েছে, কিন্তু তনু হত্যা রহস্য আজ পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি। রাষ্ট্রযন্ত্র গত এক বছরেও তনু হত্যাকারীদের খুঁজে পায়নি। আস্তে আস্তে তনুও আমাদের স্মৃতি হয়ে যাচ্ছে। তার মা বাবা বিচার পাবেন কি না কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না। নতুন কোনো তনুর কথা আমরা জানতে পারি। আগের তনু আমাদের কাছে স্মৃতি হয়ে যায়। অথচ তনু খুনের পর প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিলো সারাদেশে। ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন, যৌন হয়রানির ঘটনা আমাদের দেশে হরহামেশায় ঘটছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনার সংখ্যা অতি নগণ্য। যে কারণে এমন ঘটনা বাড়ছে বৈ কমছে না! নির্যাতনের শিকার হয়ে অপমানে কেউ কেউ আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। প্রতিটি ঘটনা সাড়া জাগিয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্তই। মৌলিক কোনো পরিবর্তন আসেনি আমাদের রাষ্ট্রর ক্ষমতা ও আইনি কাঠামোতে। আমাদের আইনি কাঠামো এখনো জগাখিচুড়ি অবস্থায় আছে। নারী ও শিশু নির্যাতন আইন এবং দ-বিধিতে যেমন ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির কথা বলা হচ্ছে তেমনি রাষ্ট্র এখনো ধর্ষণকারীর প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। এমন নির্মম বাস্তবতার পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আমাদের দেশে না থাকলেও অনেক দেশে আইনে বিধান করা হয়েছে যে ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়ন মামলায় অভিযোগকারীর অতীত যৌন ইতিহাস সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না। কেননা অতীত নিয়ে প্রশ্ন তুলে অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রমাণ করতে চাইতো যে অভিযোগকারী চরিত্রহীনা। অথচ আমাদের আইনে এখনো এই কালাকানুন বহাল রয়েছে। এই বিধানের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে দুই জন ছাত্রী ধর্ষিত হবার অভিযোগ এনেছে, তাদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবে অভিযুক্তরা। সমাজের অনেকেই এখনো যেমন চোখ বন্ধ করে ধর্ষিতার দোষ খুঁজে বেড়ায়, তেমনি আমাদের রাষ্ট্র নিজেও ধর্ষিতার অতীত যৌন ইতিহাস সামনে টেনে আনার ব্যবস্থা বহাল রেখে ধর্ষিতাকেই দায়ী করার চেষ্টা করছে না? ব্রিটিশরা চলে গেছে সাত দশক হলো। পাকিস্তানিদের শোষণ যাঁতাকল থেকেও মুক্ত হয়েছি আমরা সেও পাঁচ দশক আগে। স্বাধীন বাংলাদেশে কার স্বার্থে সাক্ষ্য আইনে অমন বিধান আমরা বহাল রেখেছি?
এমন অসংখ্য প্রশ্ন অনেকের মত আমারও মনের ভেতর জমে জমে চর পরে গেছে। সেই বালু চরে দাঁড়িয়ে বলছি-লিখছি-প্রতিবাদ করছি। একটা কথা অবশ্য সত্য। আর তা হলো- ধর্ষক ও যৌন হয়রানিকারীরা কোনো ধর্ম মানে না, কোনো আইন মানে না। তারা যেমন অসুস্থ; তেমনি রাষ্ট্র ও সমাজ যে দৃষ্টিতে ধর্ষণ ঘটনাকে দেখে সেটাও সুস্থ কোনো কিছু ইঙ্গিত করে না। রাষ্ট্র দুই একটা আইনি বিধান করেই তার দায়িত্ব শেষ করতে চাইছে। আবার যাদের উপর সেই আইন প্রয়োগের ভার দেয়া হয়েছে তাদের আন্তরিকতা ও সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। সামগ্রিক পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কার, যা অতি আবশ্যক। সেই আবশ্যকীয়তার কথা ভেবে বলতে চাই- আইনের সংস্কৃতি তৈরি করা এখন নৈতিক দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্রকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল দেখতে চাই, দেখতে চাই রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিককে সমাজ-মানবতার পক্ষে...
মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি।