দেশের অতন্র প্রহরী। সৈয়দপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা একরামুল হক মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুক্ষণ গুনছেন। সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের সোনাখুলি বড়বাড়ী গ্রামে নিজ বাসায় এখন তিনি স্বাধীনতার দুঃসহ মরণ পন যুদ্ধের কথা স্মরণ করে সময় অতিবাহিত করছেন।
৭৫ বছর বয়সি ওই বীরমুক্তিযোদ্ধা এখন বড় অসহায়। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে এমন কেউ নেই আজ তাঁর পাশে।
কন্ঠনালীতে টিউমার জনিত ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেও অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না রণাঙ্গনের এই বীরযোদ্ধা। তরুণ টগবগে যুবক থাকা অবস্থায় মহান নেতা অকুতোভয় বীর বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধুর ডাকে তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রীয়ভাবে অংশ নেন। সে সময় তাঁর পেটে ক্ষিদে ছিল না। চোখের সামনে সহকর্মীদের রক্তাক্ত লাশ দেখে মন ভেঙ্গে যেত। তারপরও মনোবল ধরে রেখে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ মোকাবেলা করতে হত। যুদ্ধের স্থান পরিবর্তন করতে পেটে কোন ক্ষিদে ছিল না তবে চোখে জল ছিল সব সময়। একদিকে যোদ্ধা হিসেবে মনে সাহস অন্যদিকে সহকর্মীর মৃত্যু মায়া
যেন আজ এক একটি ইতিহাস। আজ স্বাধীন দেশ আছে,মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় আছে। অথচ বীরমুক্তিযোদ্ধার ক্যান্সারের চিকিৎসার অর্থ যোগান দিতে কেউ নেই তাঁর পাশে।
তিনি সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন প্রায় চার দশক। জীবনের দীর্ঘ এই সময় দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ফেরিওয়ালা হয়ে ছুঁটে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন দপ্তর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। সেখানে তিনি আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও স্বাধীনতা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলে শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করেছেন।
বর্তমানে স্ত্রীসহ পাঁচ সদস্যের সংসার চলে সরকারের দেয়া মুক্তিযোদ্ধা ভাতার অর্থ দিয়ে। তবে অসুস্থতা বেড়ে গেলে ওই ভাতার বিপরিতে সোনালী ব্যাংক সৈয়দপুর শাখা থেকে ঋণ নিয়ে ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন। সেখানে কলকাতার ঠাকুরপুকুর ক্যান্সার হাসপাতালের চিকিৎসক ইন্দ্রনীল চ্যাটার্জির তত্বাবধানে তাঁর অপারেশনও সম্পন্ন হয়। এতে ঋণের সব টাকা শেষ হয়ে যায়। সেখানকার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আবারও ওই হাসপাতালে যেতে হবে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা ভাতার বিপরীতে এবার আর ঋণ নেয়ার কোন সুযোগ নাই। তাই হতাশ হয়ে বাড়িতে শয্যাশায়ী হয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন রণাঙ্গাণের এই বীরমুক্তিযোদ্ধা। মহান মুক্তিযুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করতে পারলেও হেরে যাচ্ছেন মরণব্যাধী ক্যান্সারের কাছে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
মুক্তিযোদ্ধা একরামুল হকের মেয়ে রিক্তা পারভিন জানান, বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়েও অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত থেকেছেন। সরকার অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে বাড়ি করে দিয়েছে। চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু আমার বাবা ভাতা ছাড়া আর কিছুই পাননি।
কিছুদিন আগে স্থানীয় সমাজ সেবা অফিসে আবেদন করে চিকিৎসার জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা পেয়েছেন। কিন্তু ওই টাকা দিয়ে কিছুই হবে না। গত ১৩ সেপ্টেম্বর ভারতের ওই হাসপাতালে গিয়ে কন্ঠনালিতে সেলাই করাতে বলেছিল চিকিৎসক। কিন্তু টাকা যোগার করতে না পারায় সেখানে যাওয়া হয়নি। বর্তমানে বাবাকে বাঁচাতে দিশেহারা পরিবার।
বীর মুক্তিযোদ্ধা একরামুল হক জানান, বঙ্গবন্ধুর আহবানে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে প্রশিক্ষণ শেষে ৬ নং সেক্টরের ১৯ নং প্লাটুনের কমান্ডার খাদেমুল বাশারের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেই। পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা ও বাউরাবন্দর এলাকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে সন্মূখযুদ্ধ করি আমি। দেশকে শত্রুমুক্ত করে শোষণ ও বৈষম্যমুক্তি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছি। কিন্তু জীবন সায়াহ্নে ক্যন্সার আক্রান্ত হয়ে এখন কেউ নেই আমার পাশে।
তিনি জনান, তার বেসামরিক গেজেট নং- ২০৭, মুক্তিযোদ্ধা নম্বর- ১৯/৪, লাল মুক্তিবার্তা ০৩১৫০৪০০২৭। কল্যাণ ট্রাষ্ট নং-৪১২২০। তিনি বলেন, আগে যে সম্মানী ভাতা পেতাম ঋণ নেওয়ায় ব্যাংক তা কেটে নিচ্ছে। এখন সংসার খরচ আর ধারদেনা কিভাবে পরিশোধ করব সেই ভাবনায় রাতে ঘুমাতে পারিনা।
তবে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম হুসাইন বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন।
সৈয়দপুরের অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধারা একরামুল হকের চিকিৎসার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।