বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের অপরাজনীতিকে রুখে দেওয়ার জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের সকলকে রাজপথে সক্রিয় থাকতে হবে। যেখানেই তারা অপকর্ম করবে, সেখানেই তাদেরকে রুখে দিতে হবে। একই সাথে আগামী জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বে সরকার গঠন করার জন্য সকলকে স্ব স্ব অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে।’
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব জামান ভুলু ও সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এস.এম মাসুদুল হক ডুলুর মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণে আয়োজিত স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি এ কথা বলেন। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে কুমারপাড়াস্থ দলীয় কার্যালয়ে এই স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
রাসিক মেয়র লিটন বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টির পায়তারা করছে। সরকারের পতন ঘটাতে তারা অপরাজনীতি শুরু করেছে, যেমনটি তাদের পূর্বসূরীরা শুরু করেছিলো ১৯৭৩-৭৪ সালে অন্য নামে। এমপি হত্যা, পাটের গুদামে আগুনসহ নানা অপকর্ম করে বঙ্গবন্ধুর ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করার অপপ্রয়াস ও বঙ্গবন্ধুর সরকারকে ব্যর্থ সরকার হিসেবে তুলে ধরার জন্য হেন অপকর্ম নেই যে তারা করেনি। তাদের হাত থেকে রক্ষা পান নি আমাদের রাজশাহীর মাহবুব জামান ভুলু, মাসুদুল হক ডুলু, মজনু, নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কুদ্দুস, তাঁদের সকলকে গুলি করে আহত করা হয়েছিলো।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামালের সভাপতিত্বে সভায় প্রয়াত নেতাদের স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার। আলোচক ছিলেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ডাবলু সরকার। স্মৃতিচারণ করে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, রাজশাহী মহানগরের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল, সদস্য নফিকুল ইসলাম সেল্টু, হাবিবুর রহমান বাবু। সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, রাজশাহী মহানগরের যুগ্ম সম্পাদক আহ্সানুল হক পিন্টু।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মেয়র লিটন প্রয়াত নেতাদের স্মৃতিচারণ করে বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব জামান ভুলু ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এস.এম মাসুদুল হক ডুলু ছিলেন দুর্দিনের পরীক্ষিত নেতা। তাঁদের ত্যাগ তীতিক্ষার জন্য সংগঠন আজ এই পর্যন্ত অগ্রগামী হয়েছে। সংগঠনের জন্য তাঁরা নিবেদিত প্রাণ, কখনও অন্যায়ের সাথে আপস করেন নি। তাঁদেরকে উভয়কে হারিয়েই রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের যে শূণ্যতার সৃষ্টি হয়েছে, তা অপূরণীয়। আমরা তাঁদেরকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি এবং তাঁদের দেখিয়ে যাওয়া পথে আমাদের রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।
স্মৃতিচারণের একপর্যায়ে তিনি বলেন, আজকের আমার রাজনীতিতে যে অবস্থান তার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব জামান ভুলু’র অবদান অনস্বীকার্য। আমার আজ ১৯৮৬ সালের ভূবন মোহন পার্কের সম্মেলনের কথা মনে পড়ছে। সেদিন আমাকে হাত ধরে নিয়ে সে সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলেন মাহবুব জামান ভুলু। এবং সেই সম্মেলনের মঞ্চে আমাকে বক্তব্য দিতে দেওয়া হয়েছিলো। মঞ্চে সেটিই আমার জীবনের প্রথম বক্তৃতা। সেই সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের যে কমিটি হয়েছিলো সেই কমিটি শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে আমাকে রাখা হয়েছিলো, সেটিই আওয়ামী লীগে আমার প্রথম পদ। আজকে স্মৃতির মণিকোঠায় অনেক কিছুই ভেসে উঠছে, আমি স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছি। আরেকজন শ্রদ্ধেয় নেতা মাসুদুল হক ডুলু, তিনি দলের জন্য যে ঝুকিটা নিয়েছিলেন আমরা দলের নেতাকর্মীরা তার এই অবদান কোনদিন ভুলবো না। তিনি দলকে ধারণ করে রাজনীতির জন্য অনেক কিছুই করেছেন, আজকে তিনি আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তাঁর কর্মগুলো রয়ে গেছে আমাদের মাঝে, আমরা তাঁদের স্মরণ করবো, শ্রদ্ধা জানাবো তাঁদের প্রয়ান দিবসে।
তিনি আরো বলেন, আমি তাঁদের দুইজনের সাথেই সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছি। রাজনীতির পরামর্শ, আন্দোলন, সংগ্রাম তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেই চালিয়েছি। যার ফলশ্রুতিতে আজকে আমাদের দলের বর্তমানে এই অবস্থানে পৌঁছিয়েছি।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, বদরুজ্জামান খায়ের, যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাক হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড. আসলাম সরকার, দপ্তর সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম বুলবুল, আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাড. মুসাব্বিরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।