গত ১৪ সেপ্টেম্বর সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত সুপার স্পেসালাইজড হাসপাতালের ভবন উদ্বোধন করলেন। প্রায় চার একর জমির ওপর মোট ১ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটি। উদ্বোধনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যারা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন, তাদের শুধু চিকিৎসা দিলেই চলবে না। সঙ্গে সঙ্গে তাদের কিন্তু গবেষণা করাও জরুরি। কাজেই এ বিষয়ে আপনাদের অনুরোধ করব, যাতে আপনারা বিষয়টির প্রতি বিশেষভাবে নজর দেন।
বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। মেডিকেল কলেজের পাশাপাশি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ও গড়ে উঠেছে। গবেষণার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হয়েছে। দেশে এখন বেসরকারি পর্যায়ে অনেক মেডিকেল কলেজ। শুধু তাই নয়, ফাইভ স্টার প্যাটার্নে বেশ কিছু হাসপাতালও গড়ে উঠেছে। কিন্তু তারপরও মানুষ চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর, ভারতসহ বেশ কিছু দেশে যাচ্ছে। এতে দেশীয় মুদ্রা বিদেশে চলে যাচ্ছে। দেশে অনেক ভালো চিকিৎসা থাকা সত্ত্বেও তারা বিদেশি চিকিৎসকদের নির্ভরযোগ্য মনে করছেন। এ মানসিকতা দূর করা প্রয়োজন। অন্যদিকে দেশের চিকিৎসকরা উপজেলা পর্যায়ে থাকতে চান না। সবাই ঢাকায় আসতে চান না। ফলে গ্রামীণ পর্যায়ের জনগণরা ভালো চিকিৎসকের চিকিৎসা নিতে পারছেন না। অন্যদিকে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তারা রুগীর সাথে ভালো ব্যবহার করেন না। যথেষ্ট সময় দিয়ে রুগী দেখেন না। চিকিৎসকরা সেবার চেয়ে টাকা কামাবার প্রতি বেশি আগ্রহী। চিকিৎসা সেবা মানবিক বিষয় হলেও তা যেন হারিয়ে গেছে।
আমাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রুগী ও রোগ বিশ্লেষণের দিকে নজর দিলে গবেষণার পথ প্রশস্ত হতে পারে। তাছাড়া সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল গুলোয় রুগীদের সুযোগ সুবিধার প্রতি দৃষ্টি দেওয়া বিশেষ প্রয়োজন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিকিৎসকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসকদের শহরকেন্দ্রিক না থেকে উপজেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে স্বাস্থ্যসেবাকে তৃনমূল মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়ার আহবান জানান। পাশাপাশি অনলাইনে চিকিৎসা সেবাও জোরদার করার পরামর্শ দেন। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবানের সাথে একমত। স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের সচেতনতা যেমন জরুরি তেমনি মানবিক দৃষ্টি ভঙ্গি নিয়ে রুগীদের সাথে ব্যবহারও তেমনি প্রয়োজন। সেই সাথে চিকিৎসা ক্ষেত্রে গবেষণার বিকল্প নেই। গবেষণা ছাড়া কোনো ক্ষেত্রেই উৎকর্ষ সাধন করা সম্ভব নয়। চিকিৎসকরা আশা করি প্রধানমন্ত্রীর এ আহবানে সাড়া দেবেন এবং দেশ ও জাতির কল্যাণে-নিবেদিত হবেন।