আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। কিন্তু দু:খ জনক হলেও সত্য এসব শিশু নিয়মিত শারীরিক ও মানসিক ভাবে সহিংসতায় আক্রান্ত হচ্ছে, নির্যাতনের কারণে মারা যাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও ইউনিসেফ বাংলাদেশ যৌথ ভাবে আয়োজিত শিশু সুরক্ষায় প্রথম জাতিয় সম্মেলন গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়। এতে বলা হয় দেশে ১৪ বছরের নিচের ৪ কোটি শিশু নিয়মিত সহিংসতার শিকার হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি ১০ জনের মধ্যে প্রায় ৯ জন শিশুই সহিংসতার শিকার। সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রায় ২০ জন শিশু মারা যায়। বাংলাদেশে জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ শিশু। সারাদেশে প্রায় ৫ কোটি ৭০ লাখ শিশু রয়েছে। ১৪ বছরের নিচে এসব ৪ কোটি শিশু নিয়মিত বাড়িতে সহিংসতার শিকার হয়।
বিভিন্ন প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ইইউ ও ইউনিসেফ বলছে, বাংলাদেশে ৩০ লাখেরও বেশি শিশু শ্রমের ফাঁদে আটকা, তাদের মধ্যে থেকে ১৩ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। প্রতি পাঁচ জন শিশুর মধ্যে একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ ও গ্রহণ করে না। তাছাড়া প্রায় অর্ধেক শিশুর জন্ম নিবন্ধন নেই। প্রতি দু’ জন মেয়ের মধ্যে একজনকে বিয়ে দেওয়া হয় শিশু থাকা অবস্থায়। লাখো শিশু পথে বাস করে। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে একটি গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। তাতে বলা হয়, সব শিশুই অন্তত: তিন ধরনের সহিংসতার শিকার। তারা কেউ বিদ্যালয়ে যায় না। বিদ্যালয়ে যাওয়ার ইচ্ছাও নেই। তবে ৯০ ভাগ শিশু বৃত্তিমুলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণে আগ্রহী।
অনুষ্ঠানে ভাচ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সূচনা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজম বিষয়ক মহাপরিচালকের উপদেষ্টা সায়মা ওয়াজেদ। তিনি বলেন, গৃহ সহিংসতা, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, বাল্য বিবাহ, দরিদ্র ও স্কুল থেকে ঝরে পড়া সমস্যায় ভুগছে দেশের শিশুরা। অন্যদিকে আগে রেকর্ড করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, বিচারপতি সহ ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি শেল-ডন ইয়েট বক্তব্য রাখেন। বক্তারা সবাই স্বীকার করেন যে বাংলাদেশে শিশু রক্ষায় সচেতন। গৃহীত পদক্ষেপের ফলে বেশ কিছু অগ্রগতিও রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়ানোও জরুরি।
এধরনের সম্মেলনের মাধ্যমে শিশু সুরক্ষায় সচেতনতা আনা যায়। এমন আয়োজন শিশু অভিভাবকদের নিয়ে সারা দেশে করা যেতে পারে। মূলত শিশু অভিভাবক ও পাড়া প্রতিবেশীরাই পারেন শিশুদের নিরাপদ করতে। তারা ঠুনকো কারণে বকাঝকা ও প্রহার না করলে শিশুদের মধ্যে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন লোপ পেতে পারে। দেশে শিশু শ্রম নিষিদ্ধ হলেও শিশু শ্রম বন্ধ করা সম্ভব হয় নি। অর্থনৈতিক কাড়নেই মূলত শিশু শ্রম বন্ধ হচ্ছে না। এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আগামীতে শিশুদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে শিশুদের সুকুমার বৃত্তি প্রস্ফুটিত করতে শিশু সহিংসতা ও নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। শিশুরা ভুল করতেই পারে। তাদের শ্নেহ ও আদর দিয়ে বুঝিয়ে তাদের ভুল সংশোধন করতে হবে। তাছাড়া এ অনুষ্ঠানে উদ্বোধনে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাও প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছে, সরকারের লক্ষ্য একটি পেশাদার সমাজ সেবী কর্মী বাহিনী গড়ে তোলা। যারা স্বেচ্ছাসেবক, কিশোর - কিশোরী ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষকে সম্পৃক্ত করে শিশু সুরক্ষা সেবা বৃদ্ধিতে কাজ করবে।