রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত অবস্থায় এক সিনিয়র স্টাফ নার্সকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা চেষ্টা করেছে এক যুবক।
গুরুতর আহত নার্সের নাম শিলা প্রামানিক (৩০)। তিনি উপজেলার পোল্লাকুড়ি গ্রামের রঘুনাথ প্রামানিকের মেয়ে। মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স।
আজ বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে নার্স শিলা নতুন বিল্ডিংয়ের দোতালায় ভায়া রুমে গাইনী পরীক্ষার জন্য কাজ করছিলেন। হঠাৎ পেছন থেকে একজন মাস্ক পরা যুবক নার্স শিলাকে উপর্যুপুরি হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে। নার্স শিলা চিৎকার করে সহযোগীদের ডাকতে থাকেন। এরইমধ্যে প্রায় ৫/৭ মিনিট দুজনের মধ্য ধ্বস্তাধস্তি হয়। চিৎকার শুনে সহযোগীরা এগিয়ে আসলে হামলাকারী যুবক তার হাতে থাকা হাতুড়িটি ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়।
খবর পেয়ে মোহনপুর থানা পুলিশের জরুরি অফিসার এসআই ধীমান চন্দ্র বর্মন সঙ্গীয় অফিসার ফোর্স নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। কি কারণে তার উপর এমন নৃসংশ হামলা হয়েছে জানতে চাইলে গুরুতর আহত সিনিয়র স্টাফ নার্স এ প্রতিবেদককে বলেন, এ হাসপাতালে চাকুরি করা অবস্থায় সেবা দিতে গিয়ে কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করেননি। কে, কি কারণে তার উপর হামলা করেছে সে বিষয়ে তিনি কিছুই বলতে পারেননি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা গেছে আহত শিলা'র সার্ভিস স্ট্যাটাস খুবই সন্তোষজনক। তার বিরুদ্ধে এপর্যন্ত কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
ঘটনা অনুসন্ধান করতে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত কর্মচারীদের মাধ্যমে জানা গেছে মাস্ক পরিহিত একজন যুবক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পশ্চিম প্বার্শের রাস্তা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে দোতলায় ভায়া রুমে মাথা নিচু করে কাজ করার সময় নার্স শিলার উপর হাতুড়ি দিয়ে হামলা চালায়। হামলা শেষে বের হওয়ার সময় হামলাকারী যুবকে চিনতে পারে স্থানীয়রা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মেডিকেলে কর্মরত একজন ও এলাকাবাসিদের মধ্যে দু'জন বলেন, সে সইপাড়া গ্রামের মুদি দোকানদার রিয়াজের বড় ছেলে মেহেদি হাসান (৩০)।
এ ব্যাপারে মেহেদী হাসানের বাবা রিয়াজের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার ছেলে অবাধ্য তাই তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। তবে মেহেদী হাসান সম্পর্কে তার মা বলেন, তার ছেলে কিছুদিন আগে তার স্ত্রীকে নিয়ে চেক আপের জন্য মোহনপুর হাসপাতালে গিয়েছিল। সেদিন নার্স শিলার সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছিল এমন কথা শুনেছিলাম। তার বেশি কিছু আমি বলতে পারবো না।
মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মো. আরিফুল কবির রাজশাহীতে মিটিং এ থাকায় তেমন কিছু বলতে পারেননি।
মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, সরকারি কর্মচারী শিলা প্রামানিকের উপর যে হামলা হয়েছে তা হাসপাতালের জন্য বিশাল হুমকি স্বরুপ। সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী ও সরকারি সম্পদ রক্ষার জন্য মেডিকেলের পক্ষ থেকে আনসার চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আমরা জীবনবাজি রেখে জনগণকে সেবা দেওয়ার পরেও আমাদের উপরই হামলা হচ্ছে। যা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক। আহত শিলাকে সিটি স্ক্যান করার জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এবিষয়ে রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নার্সের উপর হামলার ঘটনায় হামলাকারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ সুপারকে বলা হয়েছে। ঘটনা তদন্তের জন্য টিএসও কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মোহনপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহা. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, নার্সের উপর হামলার ঘটনায় অফিসার পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অফিসে আসলে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে হামলাকারীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।