ময়মনসিংহের ভালুকায় অতিদরিদ্রের জন্য ৪০ দিনের কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকায় থমকে আছে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন। দেশের অন্যান্য স্থানে ওই কর্মসূচি চালু থাকলেও এই উপজেলায় কাজটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাঁচা রাস্তা তৈরি ও সংস্কার কাজ আটকে গেছে। তাছাড়া দুই হাজার ৭ শত ৪১ জন নারী পুরুষ কর্মহীন হয়ে আর্থিক সংকটে তাদের দিন কাটাতে হচ্ছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, বিগত বছরগুলোতে সারাদেশের মতো ভালুকার ১১ টি ইউনিয়নে ৪০ দিনের কর্মসূচি প্রকল্প চালু ছিলো। দুই হাজার ৭শত ৪১ জন সুবিধাভোগী নারী পুরুষ প্রতিদিন ২০০ টাকা মজুরী হিসেবে নিজেদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ৬ দিনের টাকা সপ্তাহের শেষদিন উত্তোলন করে সংসার চালাতেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় একদিকে যেমন গ্রামীণ কাঁচা রাস্তা সংস্কার কাজ বন্ধ রয়েছে, অপরদিকে হতদরিদ্র সুবিধাভোগীরা চরম অর্থ সংকটে পড়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা জানান, যে সকল উপজেলা দারিদ্র সীমার হার ২০ ভাগের নিচে, সে সবল এলাকায় ৪০ দিনের প্রকল্পটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু ভালুকায় এই হার ২০ এর উপরে থাকার পরও রহস্যজনক কারণে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুই হাজার ৭৪১ জন নারী পুরুষ কর্মহীন হয়ে অর্থ সংকটে পড়েছেন।
বিভিন্ন এলাকার সুবিধাভোগীদের সাথে কথা হলে জানাযায়, প্রতি বছরে তারা ২০০ টাকা মজুরীতে আড়াই মাস প্রকল্পের আওতায় রাস্তার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কাজটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার চালাতে তাদের কষ্ট হচ্ছে। ৪০ দিনের কর্মসূচি পূণরায় চালু করার জন্য তারা সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছে।
উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাদা জানান, উপজেলাওয়ারী জনসংখ্যা নিরুপন করা হলেও দারিদ্রের হার তেমন ভাবে নিরুপন করা হয়নী।
উপজেলার ১১ নম্বর রাজৈ ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাদশা জানান, ভালুকায় পরিসংখ্যানে দারিদ্রতার হার ২০ ভাগের নিচে দেখানো হয়েছে, যা সঠিক নয়।
৫নং বিরুনীয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামছুল হক জানান,এ ব্যাপারে সকল ইউপি চেয়ারম্যান এক হয়ে পূণরায় কর্মসূচি চালু করার জন্য রেজুলেশন করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, ভালুকায় প্রায় ২৭ হাজার নারী পুরুষ গ্রমীণ উন্নয়ন কাজে সুবিধাভোগী হিসেবে জড়িত রয়েছে। ২০০২০-২১ অর্থ বছরে দুই ধাপে ৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বরাদ্দ এলেও দ্বিতীয় ধাপের প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। সকল ইউপি চেয়ারম্যান এক হয়ে প্রকল্পের কাগজে স্বাক্ষর করার জন্য ইউএনও কে অনুরোধ করলেও তিনি স্বাক্ষর না করায় ওই টাকাগুলো ফেরত পাঠানো হয়।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ জানান, পরিসংখ্যান কর্মকর্তা তার মনগড়া রিপোর্ট দিয়েছেন। এ ব্যাপারে আমাদের সাথে সমন্বয় করার দরকার ছিলো। ভালুকা উপজেলার শুধু ১০ নম্বর হবিরবাড়ি ইউনিয়নটা শিল্পাঞ্চলের সুবাধে ভালো অবস্থানে আছে, তাছাড়া বাকি ১০ টি ইউনিয়নই ৫০ বছর আগে যা ছিলো এখনোও রয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা উপর মহলে লিখিত ভাবে অবগত করেছি। প্রকল্পটি পূণরায় চালো করার জন্য আশা করছি, অচিরেই প্রকল্পটি আবারো চালু হবে এবং হত দ্ররিদ্রদের আবার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো: আবিদুর রহমান জানান, তিনি এই স্টেশনে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাজ করছেন। ওই বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রকল্পটি বন্ধের কারণ জানাতে পারবেন।