কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমেছে। প্রধান শিক্ষকের অনয়িম ও দুর্নীতি এবং সহকারী শিক্ষকের অসদারণের কারণে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নেই বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এছাড়াও প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির জোগসাজসে ২০২১-২২ অর্থবছরে বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট পৃথক পৃথক লিখিত অভিযোগ করেছেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যবৃন্দসহ অন্যান্য অভিভাবকরা। অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের ছোট ধনীরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুস সালাম নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত না হয়ে ২-৩ দিন পর পর এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে কিছুক্ষণ সময় দিয়ে আবার বাড়িতে চলে যায়। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষকসহ সহকারী শিক্ষকদের কিছু বলতে গেলে তিনিসহ তার লোকজনদেরকে দিয়ে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখায়। নিয়মিত ক্লাসও হয় না। দিনে দুই একটা ক্লাস করে বিদ্যালয় ছুটি হয়। কোনো কোনো দিন ক্লাসই হয় না বলেও অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এদিকে বিদ্যালয়ের সভাপতির যোগসাজসে বিদ্যালয়ের বরাদ্দকৃত অর্থ নিজেরাই ভাভাগি করে নিয়ে বিদ্যালয়ের কোনো কাজই করেননি। ফলে অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে বিদ্যালয়ের বাথরুম, টয়লেট ও নলকুপ।
অভিযোগের ভিত্তিতে সরিজেমিন গেলে দেখা যায় তখন বেলা সাড়ে নয়টা। খোলা হয়নি বিদ্যালয়। তোলা হয়নি জাতীয় পতাকাও। সাংবাদিকদের যাওয়ার কথা শুনে প্রধান শিক্ষক তড়িঘরি করে এসে বিদ্যালয় খোলেন এবং শিক্ষার্থীকে দিয়ে জাতীয় পতাকা তোলেন। সেখানে গিয়ে দেখা যায় বিদ্যালয়ের টিউবওয়েল নষ্ট, নেই পানি খাবার গ্লাসও। রয়েছে মনিটরিং বোর্ডের অভাব। তবে বরাদ্দকৃত টাকার কাজ চলমান বলে দাবি প্রধান শিক্ষকের।
এ সময় শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হাবিবুর রহমান ছাত্রীদেরকে অশ্লিল ভাষায় কথা বলেন ও নানাভাবে ইঙ্গিত করেন ফলে শিক্ষার্থী দিতে চান না অভিভাবকরা।
চতুর্থ শ্রেণির গোলাপি আক্তার, মাহিয়া আক্তারসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, দিনে দুই একটা করে ক্লাস হয় তাদের। কোনোদিন করে হয় না। স্যার তাদেরকে খারাপ খারাপ কথা কয়। বিস্কুট দেয় না। বিস্কুট চাইলে মারধর করে এজন্য অনেকে স্কুলে আসে না।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কিমিটির সদস্য মফিজুল ইসলাম, সাইফুর রহমানসহ আরও অনেকে বলেন, আমরা বলতে গেলে প্রধান শিক্ষক আমাদেরকে গালিগালাজ করেন। ভয়ভীতি দেখান। এজন্য আমরা কিছু বলতে পারি না। এভাবে চলতে থাকলে বিদ্যালয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুস সালাম বলেন, মাঝে মাঝে আসতে দেরি হয় এটা ঠিক, তবে সব অভিযোগ সত্য নয়। আমি নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসি। তবে ছুটি থাকলে আসি না। যেদিন থাকি না সেদিন ছুটিতে থাকি। আর বরাদ্দের টাকায় আমাদের কাজ চলছে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোবাশে^র আলী বলেন, অভিযাগ পেয়েছি। আমিও কিছুদিন আগে সেখানে গিয়েছি। কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। সেগুলো ঠিক করতে বলা হয়েছে। আর অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।