বিজয়ের মালা পরে ২১ সেপ্টেম্বর দুপুরে নারী ফুটবলের দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দল বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল দেশের মাটিতে ফিরেছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর কাঠমুন্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে বিকেলে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে বাংলাদেশের মেয়েরা স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ গোল হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে এক ইতিহাসে রচনা করেছে। অবশ্য এ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের মেয়েদের পারফর্মেন্স শুরু থেকেই ছিল লক্ষ্য করার মতো। কারণ তারা সেমিফাইনালে ভুটানকে ৮-০ গোলে হারিয়েছে। তার আগে সেমিফাইনালে উত্তরণের খেলায় ভারতকে ৩-০, পাকিস্তানকে ৬-০ এবং মালদ্বীপকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে। এক কথায় তারা প্রতিটি ম্যাচেই অপ্রতিরোধ্য ছিল। দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের এ-কৃতিত্ব ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে। তাদের সংবর্ধনা জানাতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন বিশেষ কর্মসূচি পালন করেছে। দেশের মানুষ তাদের কৃতিত্বে আনন্দিত।
পায়ে বল নিয়ে প্রতিপক্ষের ১১ জন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে পোষ্টে ৩ গোল করা কি খুব সহজ ? মুখের কথায় অনেককিছু বলা যায়। কিন্তু বাস্তবে অনেক কঠিন। নারী খেলোয়াড়দের নিজেদের তৈরি করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। নারীদের ফুটবল খেলতে না দেওয়ার জন্যে মিছিল হয়েছে, সমাজের বাকাচোখে কটূক্তিসহ অসংখ্য প্রতিপক্ষকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের তৈরি করতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, অনেক খেলোয়াড়ের আর্থিক অবস্থা নুন আনতে পান্তা ফুরোবার মতো। এত প্রতিকূলতা ছাপিয়ে আজ তারা প্রতিক্রিয়াশীলদের মুখে ছাই দিয়ে বিজয় পতাকা ওড়াচ্ছে। যা দেখে দেশবাসী গর্বিত, আনন্দিত।
নারী ফুটবলারদের দুর্বার অগ্রযাত্রার পেছনে অনেক দিনের সাধনা, পরিকল্পনা ও হাড়ভাঙ্গা খাটুনি রয়েছে। বাংলাদেশে ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) ভূমিকাও অন্যান্য। নারীদের বয়ঃভিত্তিক টুর্নামেন্ট থেকে জাতীয় দলে খেলতে নিয়ে আসার জন্য তারা কাজ করছে অনেক আগে থেকে। ২০১২ সালে কিশোরী ফুটবলারদের ঢাকায় ফুটবল ফেডারেশন ভবনে রেখে কঠোর নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে প্রশিক্ষণ শুরু করা হয়। তখন কোন স্পন্সর ছিলোনা, ছিল না থাকার জায়গা। তাদের খাবার, পোশাক, প্রশিক্ষণ খরচ নির্বাহ করা ছির দু:খ-সাধ্য। ফলে ফুটবল ফেডারেশনে থেকে প্রতিটি খেলোয়াড়, বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন ছেড়ে মনের অদম্য ইচ্ছে শক্তি নিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। কঠিন পরিশ্রম করে খেলোয়াড়রা একে ওপরের সহযোগী হয়ে উঠেছে। আত্মার আত্মীয় হয়ে উঠেছে। এরপর তারা দেশে বিদেশে অসংখ্য ম্যাচ খেলে সাধনায় সিদ্ধ হয়েছে। অবশেষে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দল হবার যোগ্যতা অর্জন করেছে। এখন লক্ষ্য এশিয়া জয় করা। তারপর বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন। তাদের আন্তরিকতা ও অধ্যবসায়ের কারণে আমরা তাদের কাছে এ আশা করতেই পারি।
নারী ফুটবল দলের এ জয়কে আমরা নিছক জয় হিসেবে দেখতে চাই না। আমরা নারী ক্ষমতায়ন ও স্বাধীনতার সুর্বন সুযোগ হিসেবে দেখতে চাই। অনেক পিছিয়ে পড়া নারীই এখন তাদের কারণে অনুপ্রাণিত হবেন। নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলে জীবন সংগ্রামের সফল সৈনিক হবেন। অভিনন্দন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের প্রতিটি খেলোয়াড়কে।