দুর্গাপূজা উপলক্ষে দেবীপক্ষের সূচনায় শুভ মহালয়ায় পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার করতোয়া নদীর পারে বোদেশ্বরী মন্দিরে বসে ধর্মাবলম্বীদের উৎসব। আগমন ঘটে হাজার হাজার মানুষের। এখানে আশপাশের ৮-১০ জেলা থেকে পুণ্যার্থীরা আসেন। মন্দিরটি ঐতিহ্যবাহী এই উৎসবের কারণেই এলাকায় বিশেষভাবে পরিচিত। মানত আদায় করার জন্যও অনেক নারী-পুরুষ সন্তানদের নিয়ে এখানে আসেন। এই উৎসবে নারী ও শিশুদের উপস্থিতি থাকে লক্ষণীয়। প্রতিবছরের মতো এবারও দেবী আবাহনের সেই উৎসবে যাচ্ছিলেন পুণ্যার্থীরা। কিন্তু করতোয়া নদী পাড়ি দেওয়ার সময় সেই উৎসবের রং মুহূর্তেই রূপ নেয় শোকে। সংবাদমাধ্যমকে স্থানীয় ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বাজার এলাকার আউলিয়া ঘাট থেকে শতাধিক যাত্রী নিয়ে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকাটি বড়শশী ইউনিয়নের বোদেশ্বরী মন্দিরের দিকে যাচ্ছিল। নদীর মাঝে গিয়ে স্রােতে দুলতে শুরু করে নৌকা। কিছুক্ষণের মধ্যেই উল্টে যায় নৌকাটি। যেখানে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে করতোয়া নদীর এই জায়গাটি এমনিতে খুব খরস্রােতা নয়; গভীরতাও খুব বেশি নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক টানা বর্ষণের পর উজানের ঢলে নদীতে পানি বেড়েছে অনেকটা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, নৌকায় ধারণক্ষমতার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি মানুষ যাচ্ছিল। দুর্ঘটনায় পড়া নৌকায় ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী ওঠায় এবং মাঝনদীতে নৌকাডুবির কারণে মৃত্যু এত বেশি হয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। দেশে নৌদুর্ঘটনার এটাই প্রথম নয়। গত জুনে কিশোরগঞ্জের ইটনায় হাওরে ঝড়ের কবলে পড়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ডুবে যায়। পরদিন সকালে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গত জুলাই মাসে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় মাছ ধরতে গিয়ে নৌকাডুবির ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় পদ্মার একটি শাখা নদীতে খেয়া নৌকাডুবিতে এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, দুর্ঘটনা বন্ধ করা যাচ্ছে না কেন? নিয়ম মেনে নৌযান না চালানোর কারণেই নৌদুর্ঘটনা ঘটছে। দীর্ঘ হচ্ছে নিহতের তালিকা। অতিরিক্ত যাত্রী বহনের কারণে প্রায় সব দুর্ঘটনা ঘটে, সংশ্লিষ্টদের এমনই অভিমত। নৌচলাচলে প্রশাসনের নজরদারি ও তদারকি না থাকায় ইঞ্জিনচালিত ট্রলারসহ নৌযানগুলো আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে চলাচল করছে। পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার করতোয়া নদীতে তীর্থযাত্রীদের নৌকাডুবি তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি পরিবারকে লাশ সৎকারের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। নৌদুর্ঘটনা ঘটলে এমন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এসব কমিটি কিছু সুপারিশও করে। সুপারিশগুলোর মধ্যে কিছু সচেতনতামূলক ও আইনগত বিষয়ও থাকে। সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত হলে নৌপথে দুর্ঘটনা হয়তো অনেকাংশেই কমিয়ে আনা যেত। আমাদের পণ্য ও যাত্রী পরিবহনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম নদীপথ। এই পথ নিরাপদ করতে হবে।