ছয় বছরের শিশু স্বাধীন এখনো স্কুলে ভর্তি হতে পারেনি। কারণ এখনও সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি তার বাবা। তাই সন্তানের পিতৃ পরিচয় আদায়ে এখন শিশু পুত্র ও বৃদ্ধ মা-বাবাকে নিয় পথে পথে ঘুরছেন অসহায় মা সুমী আক্তার। জনপ্রতিনিধি থেকে এলাকাবাসী সবাই জানেন সুমী ও বশির হাওলাদারের দাম্পত্য জীবনের কথা। কিন্তু আইনি জটিলতা ও বশিরের আর্থিক দম্ভে সবাই অসহায়। কেউ দাঁড়াচ্ছে না সুমীর পাশে। যদিও এনিয়ে একাধিক সালিশ হয়েছে। কিন্তু বশির এ নারীকে মেনে না নেয়ায় এখনও স্বামীর বাড়ি যেতে পারেনি সে। সন্তান বাবা বলে ডাকতে পারেনি বশিরকে। তাই প্রশাসন ও মানবাধিকার পরিষদের কাছে আইনি সহায়তা চাইছেন সুমী। দাবি করছেন স্ত্রীর অধিকার।
কলাপাড়ার খেপুপাড়া সিনিয়র মাদ্রাসায় সুমী যখন ফাজিলের (ডিগ্রি) ছাত্রী তখন টিয়াখালী ইউনিয়নের পশ্চিম বাদুরতলী গ্রামের তৎকালীন ইউপি সদস্য বশির উদ্দিন হাওলাদারের সঙ্গে পরিচয় হয়। তখন বশির তার প্রথম স্ত্রীর কথা গোপন রাখে। এ ঘরে তার দুটি সন্তান রয়েছে। একপর্যায়ে ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে সুমীকে বিয়ে করেন এবং পৌর শহরে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতে থাকেন।
পড়ে সুমী বিয়ের বিষয়টি তার পরিবারকে জানালে প্রথমে মেনে না নিলেও পড়ে তার পরিবার বিয়েটি মেনে নেয়। এরপর বশির প্রায়ই কলাপাড়ার বালিয়াতলী ইউনিয়নে তার শ্বশুড়ের বাড়িতে বেড়াতে যেতো।
২০১৬ সালে সুমী যখন সাত মাসের অসবÍঃসত্বা তখন প্রথম স্ত্রীর খবর প্রকাশ পায়। এরপর থেকে বসির উদ্দিন সটকে পড়েন। সে তাকে স্ত্রী হিসেবে মানতে অস্বীকার করে। কোন উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে সুমী আক্তার পটুয়াখালী নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল আদালতে মামলা করেন। গতকাল কলাপাড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মলনে তিনি তার জীবনের এ দুঃখের ঘটনা জানান।
সুমী বলেন, গত ছয় বছর ধরে ঘুমাতে পারছেন সন্তানের কি হবে এ চিন্তায়। তার লিভার ও কিডনিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করাতে পারছেন না তার বাবা স্বাধীনকে মেনে না নেয়ায়। এখন মানুষ তার দিকে আঙুল তুলছে। পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছে। তার এখন মৃত্যু ছাড়া উপায় দেখছেন না। সুমী আক্তার বর্তমানে নিজেকে অসহায় দাবি করে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলে জানান। ছয় বছরের পুত্র সন্তান স্বাধীনসহ নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আইনের সহায়তা চেয়েছেন।
সুমি আক্তারের মি হাজেরা বেগম ও বোন রিজিয়া বলেন, ছোট্র সন্তান নিয়ে সুমী এখন অসহায়ের মতো জীবন যাপন করছে। গত ছয় বছর ধরে স্বামীর অধিকার ফিরে পেতে আদালত ও পথে পথে ঘুরছে। তার কারণে এখন পরিবার প্রায় নিঃস্ব। ছোট্র ন্বাধীন বাবা বাবা করলেও গত ছয় বছরে একদিন দেখতে আসেনি বসির।
সুমী ও বশিরের বিয়ের বিষয়টি জানতো টিয়াখালী ইউনিয়নের তৎকালীন ইউপি সদস্য মো. আল আমিন। তিনি জানান, তাদের বিয়ের বিষয়টি নিয়ে পরিষদে একাধিক সালিশ বসেছিলো। সকল প্রমান থাকা সত্বেও বশির বিয়ে ও সন্তানকে মানতে অস্বীকার করে।
আর বশিরের ভাতিজা জাবের সিকদার জানান, তার চাচীকে নিয়ে বসির যখন কলাপাড়া পৌর শহরে ভাড়া বাসায় থাকতেন তখন অনেকদিন সে বাজার ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে বাসায় পৌছে দিয়েছেন। কিন্তু বসির এখন কেনো বিয়ে ও সন্তান মেনে নিচ্ছে না তা বুঝতে পারছেন না।
ছোট্র শিশু স্বাধীন এখনও কিছু না বুঝলেও বাবার অভাবটা ঠিকই বুঝতে পারছে। মায়ের মোবাইল থেকে বাবাকে কল দিয়ে সালামও দিয়েছিলো। কিন্তু অপরপ্রান্ত থেকে লাইনটি কেটে দেয়। তাই বাবার কাছে মজা খাওয়া ও খেলনা কেনার আবদার আর করতে পারেনি শিশু স্বাধীন।
এ বিষয়ে বসির হাওলাদার মুঠো ফোনে এ বিয়ে ও সন্তানের কথা অস্বীকার করে বলেন, তাকে ফাঁসানো হচ্ছে। এ বিষয় নিয়ে মামলা চলমান রয়েছে। তাই এ বিষয়ে কথা বলতে চান না।