সারাদেশে মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান চলমান থাকলেও বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলা এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের এখনো টনক নড়ছে না। অনেকটা আগের মতই চলছে এখানকার মাদক ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা। জেলা পুলিশের মাননীয় পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী মাদকের মাদকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নির্দেশ দেয়ার পরেও বগুড়ার গাবতলীতে চলছে মাদক ব্যবসায়ীদের স্বর্ণযুগ। কোনভাবেই থামছেনা মাদকের কারবার। এলাকার পেশাদার ছোট-বড় ও পাইকারী মাদক ব্যবসায়ীরা অভিনব পন্থায় তাদের মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। নিজেদের আড়ালে রাখতে নিচ্ছে ‘কাটআউট’ কৌশল। কারবারিরা গ্রেপ্তার এড়াতে পারস্পরিক পরিচয় ছাড়াই মাদক সরবরাহ ও অর্থ লেনদেন চালিয়ে "কাটআউট" কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে। রাতের আধাঁরে বিভিন্ন কৌশলে এলাকার অলি-গলিতে চলছে মাদকের কেনা বেচা। পুলিশের তালিকাভুক্ত একাধিক মামলার আসামি থেকে শুরু করে নব্য মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের নিজস্ব দালালদের মাধ্যমে নানা কৌশলে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের মাদক ব্যবসা। এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার সাধারণ মানুষ ছাড়াও অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তাদের সন্তানদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার বারোটা ইউনিয়নে ছোট বড় মিলিয়ে অন্তত পাঁচ শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী দেদারসে চালিয়ে যাচ্ছে মাদকের কারবার। প্রায় শতাধিক পয়েন্টে ইয়াবা, হেরোইন ও ফেনসিডিল ব্যবসায় এরা তৎপর। জেলা শহর থেকে বড় ধরনের মাদকের চালান গাবতলী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছে আসে আর স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীরা এসব মাদক তুলে দিচ্ছে বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষাথীসহ উঠতি বয়সী যুবকদের হাতে এতে করে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এসব এলাকার যুবসমাজের বড় একটা অংশ। উঠতি বয়সের তরুণদের একটি অংশ এ নেশার জগতে পা দিয়ে ধ্বংসের পথে ধাবিত হচ্ছে। অনেক অভিভাবক তাঁর মাদকাসক্ত সন্তানকে নিয়ে দুশ্চিন্তা ও হতাশা এর মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করছে। এইসব স্থানে পুলিশের নাকের ডগায় বিক্রি হয় গাঁজা, ইয়াবা ও ফেনসিডিল। এইসব মাদক দ্রব্য ক্রয় করার জন্য ছিঁচকে চুরিসহ বড় ধরনের ডাকাতি, ছিনতাই, ইভটিজিং বেড়েই চলছে এসব এলাকায়। অবিলম্বে এ পরিস্থিতি যদি সামাল দেয়া না যায় তাহলে সামাজিক অবস্থার যে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
বিশেষ সূত্র জানায়, দক্ষিণ গাবতলীর তরনীহাট ও গোলাবাড়ী নামক এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের বড় একটা সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন যাবত এলাকায় দাপটের সাথে মাদক কারবারি করছে। সেই সিন্ডিকেট এলাকার প্রভাবশালী ও সরকার দলীয় লোক হওয়াতে ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস রাখেনা, অত্র এলাকার দুই একজন থানায় মৌখিক কিংবা জাতীয় পরিষেবা (৯৯৯) অভিযোগ করলেও মাদক নির্মূলের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। এই তরনীহাট ও গোলাবাড়ী এলাকায় প্রতিদিন জেলা সদর ও আশে পাশের উপজেলা থেকে শত শত যুবক আসে মাদক সেবন করতে। পুলিশ বারবার অভিযান পরিচালনা করলেও ধরা পড়তেছে ছিঁচকে মাদক সেবীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে এই সিন্ডিকেটের গডফাদার। সিন্ডিকেট তাদের ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধি করার জন্য ভদ্রবেশে-ছদ্মবেশী নারীদের দিয়ে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাঠপর্যায়ের সদস্যসহ উপজেলার সব ইউনিয়নে চেয়ারম্যান ও এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ হাটবাজার এলাকায় ও তাদের সোর্সের মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ীরা ছদ্মবেশে ফেরি করে মাদক বিক্রি করছে এরা কেউ কেউ প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায়, ধর্মীয় লেবাসসহ নানা পরিচয়ে ফেরি করে বেড়াচ্ছে। নামাজি সেজে মাথায় টুপি, পাঞ্জাবি পরে ও সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী পরিচয় দিয়ে বিক্রি করছে সর্বনাশা মাদক।
এই বিষয়ে গাবতলী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি সার্বিক) সনাতন চন্দ্র সরকার এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, মাদকের সঙ্গে পুলিশের কোন আপোশ নেই। আমরা দিনরাত চেষ্টা করছি মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রাখতে। মাঝে মাঝে গ্রেপ্তার করতেও সক্ষম হচ্ছি। গাবতলী মডেল থানা পুলিশ সক্রিয় এসব মাদক ব্যবসায়ী দের গোড়া থেকে নির্মূল করার জন্য। তিনি আরো জানান, আমরা গাবতলী মডেল থানার পুলিশ সব সময় মাদক নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে তৎপর আছি এবং ভবিষ্যতে থাকবো।