পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, দুর্যোগের সময় মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা দরকার। এ নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক না। পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার করতোয়া নদীর আউলিয়ার ঘাটে নৌকাডুবির ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুরে মাড়েয়া ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে অনুষ্ঠিত নিহত পরিবারের সদস্যদের মাঝে মানবিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। রেলমন্ত্রী বলেন, করতোয়া নদীতে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে মানুষের জন্য এগিয়ে এসেছে সরকার। উদ্ধার কাজ তরান্বিতসহ সব ধরনের মানবিক সহায়তায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পালন করা হয়েছে। দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারের মাঝে নগদ অর্থসহ খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তিনি বিরোধীদলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, মানুষের বিপদের সময় বিরোধিতার রাজনীতি করবেন না। পারলে বিপদের সময় সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ান। নূরুল ইসলাম সুজন আরও বলেন, করতোয়ার আউলিয়া ঘাটে চলতি ডিসেম্বর অথবা আগামী জানুয়ারির মধ্যে সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এরইমধ্যে বিষয়টির সক্ষমতা যাচাই করে একনেকে বিল পাস হয়েছে। এখন নকশার কাজ চলছে। কাজ শুরু হলেও শেষ হতে আরও দুই বছরের বেশি সময় লাগবে। সেই পর্যন্ত নৌকার ধারণক্ষমতা মেনে নদী পারাপার হওয়ার জন্য স্থানীয়দের আহ্বান জানান মন্ত্রী। নৌকাডুবির ঘটনায় নিহত পরিবারে মানবিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, ঘটনার প্রথম থেকেই সরকার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছে। নিহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তিনি বলেন, এই ক্ষতি কোনোভাবেই পূরণের নয়, পৃথিবীর কোনো কিছু দিয়ে এই ক্ষতি পূরণ করা যাবে না। তারপর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আপনাদের শক্তি যোগানোর জন্য আমরা আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি, প্রশাসনসহ স্থানীয়রাও আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। মানবিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিহত ৬৯ পরিবারের সদস্যদের নগদ ৫০ হাজার টাকা এবং ১০ কেজি করে চাল, ডাল, চিনি, লবণ, তেলসহ খাদ্য পণ্যের দুইটি করে প্যাকেট দেওয়া হয়। এর আগে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে ২৫ হাজার, রেলমন্ত্রীর ব্যক্তিগত তহবিল থেকে পাঁচ হাজার এবং রেড ক্রিসেন্ট থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়। এ ছাড়া গত বুধবার জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে নিহত এবং নিখোঁজ ৭১ জনের প্রত্যেক পরিবারে ৩০ হাজার করে ২১ লাখ ৩০ হাজার টাকার অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে মানবিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে নিহত পরিবারের সদস্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আতিকুল হক, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবেরুল ইসলাম, পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আবদুল আলীম মাহমুদ, পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা, বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, ওই নৌকাডুবির ঘটনায় এখনো এক শিশুসহ তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের উদ্ধারে পঞ্চম দিনের মতো চলছে উদ্ধার কাজ। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ফায়ার সার্ভিসের আটটি দল উদ্ধার কাজ শুরু করে। এ ছাড়া ১২ জন ডুবুরি তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে পঞ্চগড় থেকে দিনাজপুরের খানসামা পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটার নদী এলাকায় এই উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। তবে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত নতুন করে কোনো লাশ উদ্ধার করা যায়নি। গত বুধবার একজনসহ চার দিনে ৬৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। তথ্যকেন্দ্রের তালিকা অনুযায়ী- এখনো নিখোঁজরা হলেন- পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ শালডাঙ্গা ইউনিয়নের হাতিডুবা শিকারপুর গ্রামের মদনের ছেলে ভূপেন (৪০), একই উপজেলার সাকোয়া ডাঙ্গাপাড়ার খগেন্দ্র নাথ বর্মণের ছেলে সুরেন (৬৫) এবং ঘাটিয়ারপাড়া গ্রামের ধীরেন্দ্র নাথের শিশুকন্যা শ্রীমতি জয়া রানী (৪)।