ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার চাঁদবা গ্রামের মৃত তবিবুর রহমাানের ছেলে খন্দকার মিজানুর এ বছর ৪০ শতক জমিতে ব্লাক বেবি জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। ৪০ শতক জমিতে ছোট বড় মিলে প্রায় ২৫ হাজার পিচ তরমুজ বিক্রি করেছেন। এতে প্রায় দুই লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন মিজানুর রহমান। এ তরমুজ চাষ করতে তার প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। চলতি বছরের জুলাই মাসের ২৫ তারিখ তার জমিতে তরমুজের বীজ রোপন করেন। মাত্র দুই মাসে ফল সংগ্রহের উপযোগী হয়েছে। স্থানীয় ও ঢাকার ব্যাপারীরা ক্ষেতে এসে তরমুজ নিয়ে যাচ্ছে।
তরমুজ বিক্রি শেষ হলে খরচ বাদে লক্ষাধিক টাকা লাভ করতে পারবে বলে আশা করছেন। মাত্র দুই মাসে ভিন্ন জাতের এ তরমুজ চাষ দেখে অন্য কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। এর আগে জেলার বিভিন্ন এলাকায় গোল্ডেন ক্রাউন (হলুদ রঙের) জাতের তরমুজ চাষ হতে দেখা গেছে। তরমুজের পাশাপাশি তার বাকি প্রায় ১৮ বিঘা জমিতে রয়েছে মাল্টা, কমলা লেবু, ড্রাগন, কুল, ফিলিপাইন জাতের আখ, আম, ক্যাপসিকাম, ব্রকলির সহ নাানা জাতের মৌসুমি সবজি। খন্দকার মিজানুর রহমান এর ব্যাপারে জানাজায়,তিনি পেশায় ছিলেন একজন ব্যাংকার। ২০১৮ সালে গ্রামের বাড়িতে কিছু জমিতে ড্রাগন ও কুল চাষ কাজ শুরু করেন। সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার অফিস শেষ করে বাড়িতে এসে কৃষি কাাজ দেখাশোনা করতেন। এরইমধ্যে চাষে সফলতা আসতে শুর করে। পরে ২০২০ সালে স্বেচ্ছায় চাকরী ছাড়েন। পুরোমাাত্রায় কৃষি কাজ শুরু করেন। শুরুতে নিজের পাঁচ বিঘা জমি দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে তার ১৯ বিঘা জমিতে ফল ও সবজির চাষ রয়েছে। বর্তমানে তিনি পেশায় একজন আপাদ মস্তক কৃষক।
খন্দকার মিজানুর রহমান জানান, ছোট বেলা থেকে শখ ছিল কৃষি কাজ করা। কিন্তু পরিবারের ইচ্ছায় লেখাপড়া শেষ করে একটি বেসরকারী ব্যাংকে কাজ শুরু করি। কিন্তু নিজের মধ্যে পুশে রাখা স্বপ্ন আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াতো। তাই শত বাধা সত্বেও গ্রামের বাড়িতে নিজের কিছু জমিতে কৃষি কাজ শুরু করি। মাত্র দুই বছরে সফলতা পাওয়ায় চাকরী ছেড়ে এখন পুরোমাত্রায় কৃষক। আমার কৃষি কাজ দেখতে এখন বিভিন্ন এলাকা উদ্দ্যোক্তারা আসছে। আমি কৃষকদের মাধ্যমে খোঁজ করি কোথায় কোন চাষ হচ্ছে। নতুন কিছু মনে হলেই সেখানে ছুটে যায়। সেখান থেকে চাষ পদ্ধতি রপ্ত করে নিজে চাষ করি। এভাবে চলছে আমার চাষকর্ম। স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ রবজেল হোসেন জানান, কয়েকদিন আগে হঠাৎ শুনি মিজানুর অসমেয় তরমুজ চাষ করেছেন, দেখতেও গিয়েছিলাম। তরমুজ চাষ করে এলাকার মানুষের মধ্যে হৈচৈ ফেলে দিয়েছে। তার মত অন্যরাও নতুন নতুন ফল ও ফসলের চাষে পারিবারিক স্বচ্ছলতা আনতে পারেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার শিকদার মো. মোহায়মেন আক্তার জানান, এ মৌসুমে তরমুজের চাষ হয় না বললেই চলে। তবে শিক্ষিত যুবক মিজানুর রহমান বিদেশী জাতের তরমুজ চাষ করে সফলতা পেয়েছে, যা অন্য কৃষকদের জন্য অনুকরণীয়। এ জাতের তরমুজ পানি নিষ্কাষণ ও বেলে দো-আঁশ মাটি চাষের জন্য বেশ উপযোগী। আর মান ভালো হলে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে এ জেলার তরমুজের চাহিদা রয়েছে অনেক। এ ছাড়া তরমুজের পুষ্টিগুণও অনেক। এই ফলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন-এ এবং আইরন। এ ছাড়া ফলটিতে রয়েছে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট যা বার্ধক্য প্রতিরোধে অনেক সহায়ক।