কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপক কুমার দেব শর্মাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। গত ২১ সেপ্টেম্বর দেওয়া ওই নোটিশে তাকে তিন কর্ম-দিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। কারণ ইউএনও বিধি মোতাবেক পরীক্ষার ব্যাপারে চিঠি দিয়ে থাকেন। এখানে তার কোনো গাফিলতি আছে কিনা তা দেখা হচ্ছে। যদিও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ইউএনও কারণ দর্শানোর কোনো জবাব দেন নি। এর আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ভুরুঙ্গামারী উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চলতি এসএসসি পরীক্ষায় ছ’টি বিষয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এ অপকর্মের নেতৃত্বে রয়েছে একজন শিক্ষক। তিনি কেন্দ্র সচিব এবং স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ঘটনাটি গত ২০ সেপ্টেম্বর ধড়া পরে। তারপর ভুরুঙ্গমারী থানায় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ: আদম মালিক চৌধুরী একটা মামলা করেন। তিনি ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত (ট্যাগ) কর্মকর্তার দায়িত্বে রয়েছেন। ওই উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব মোঃ: লুৎফর রহমান, সহকারী শিক্ষক মোঃ: জোবাইর হোসেন ও মোঃ: আমিনুর রহমান ও অফিস সহকারী মোঃ: আবু হানিফ সহ অজ্ঞাতনামা আরো ১০-১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে মামলায়। অবশ্য কেন্দ্র সচিব লুৎফর রহমান, মোঃ: জুবাইয়ের হোসেন ও আমিনুলকে ওই দিনই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে আরো কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রায়ই প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া যেত। সরকার এজন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও ২০১৯ সালে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠে। তবে তদন্তে প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ না পাওয়ায় তারপর থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের আর কোনো অভিযোগ উঠে নি। এবারও শিক্ষামন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছিলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো ঘটনা ঘটাবেনা। কিন্তু বিধিবাম সারা দেশে এমন অভিযোগ না উঠলেও দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের একটি কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটে গেলো। রক্ষক যখন ভক্ষক হয়, তখন কিছুই করার থাকেনা। একজন কেন্দ্র সচিবের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র পাস সহজে মেনে নেওয়া যায় না। একজন শিক্ষক কতটা অনৈতিক হলে, যে ছাত্রকে তিনি সারা বছর পড়িয়েছেন তাকে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িত হবেন তা ভাবা যায় না। শুধু তিনি নন, তার আরো ৪/৫ জন সহকর্মী জড়িত। এ অনৈতিকতা কি ছাত্রদের ভালো ফল করানোর জন্য নাকি ব্যবসায়িক স্বার্থ রয়েছে?
আগে পরীক্ষা কেন্দ্র মোবাইল ফোনে ছবি তুলে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটতো এবার মুল প্রশ্নই ফাঁস করার চেষ্টা করেছেন সংশ্লিষ্টরা। কোচিং সেন্টার বন্ধ, পরীক্ষা কেন্দ্রে ছবি তোলা যায়না এমন মোবাইল শুধু কেন্দ্র সচিব ব্যবহার করবেন এমন নানা ব্যবস্থা নেবার পরও শেষ রক্ষা হলো না। আমরা মনে করি শিক্ষক নামের কলঙ্ক এসব শিক্ষকের যথাযথ বিচার করা হোক এবং এমন শাস্তি দেয়া হোক যাতে আগামীতে কেউ এ পথে না এগোয়।