দেশে প্রায়ই নৌ দুর্ঘটনা ঘটছে। তাতে জানমালের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। তবুও দুর্ঘটনা রোধ হচ্ছে না। যার প্রধান কারণ-চালকের অদক্ষতা ও আইনের সঠিক প্রয়োগ না হওয়া।অথচ নৌযান সঠিকভাবে চলার জন্য প্রয়োজনীয় আইন,সরকারী দপ্তর ও লোকবল আছে। কিন্তু তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না! তাই প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ নৌ দুর্ঘটনা ঘটেছে গত ২৫ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড়ের করতোয়া নদীর বোদার আউলিয়া ঘাটে। তাতে ৬৯ জনের মৃত্যু ও ৩ জন নিখোজ রয়েছে।উপরন্তু আহতদের অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। খবরে প্রকাশ,ঐদিন শতাধিক হিন্দু পুর্ণার্থী একটি নৌকায় চড়ে ওই নদীর পূর্ব পাড়ে বরদেশ্বরী মন্দির দর্শনের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তাতে যাত্রী ছিল ধারণ ক্ষমতার অধিক। ফলে সেটি প্রায় ডুবডুবি হয়ে গিয়েছিল। তাই অনেকেই নিষেধ করেছিলেন নৌকাটি না ছাড়তে। কিন্তু মাঝি তাতে কর্ণপাত করেননি। ইঞ্জিন চালিত নৌকাটি প্রচণ্ড শ্রোতের মাঝে কিছু দূর যেতেই ডুবে যায়। যারা সাতার জানেন তারা অতি কষ্টে সাতরিয়ে তীরে পৌঁছেন। বাকীগুলো নদীতে তলিয়ে যান। যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। ঘটনাটি সংঘটিত হওয়ার পরপরই ফায়ার সার্ভিসের ১২টি টীম উদ্ধার অভিযান চালায়। তাতে ৬৯ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। ৩ জন নিখোজ রয়েছে এখনো। তাদের লাশ উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়েছে। অন্যদিকে, বিষয়টি তদন্ত করার জন্য দু’টি তদন্ত টীম গঠন করা হয়েছে। একটি করেছেন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও অন্যটি নৌমন্ত্রণালয়। রেলমন্ত্রী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন গত ২৯ সেপ্টেম্বর। তিনি নিহত সকলের প্রত্যেক পরিবারকে ৫০ হাজার টাকার চেক দেন এবং বলেন আউলিয়া ঘাটে একটি সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে আগামী জানুয়ারিতে। দুর্ঘটনা কবলিত নৌকাটি ছিল অনিবন্ধিত। উক্ত দুর্ঘটনায় নিহত ও নিখোজদের আপনজনদের আহাজারিতে সমগ্র এলাকায় হ্নদয় বিদারক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। দেশবাসীও ওই দুর্ঘটনায় চরম মর্মাহত হয়েছেন। দেশ-বিদেশের মিডিয়ায় এ ব্যাপারে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
বিভিন্ন তথ্য মতে, অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল অধ্যাদেশ, ১৯৭৬ অনুযায়ী ১৬ অশ্বশক্তির বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিনচালিত নৌযান নিবন্ধন ছাড়া চলাচল করা নিষিদ্ধ। তবুও বহু অনিবন্ধিত নৌযান চলাচল করছে। উপরন্তু নিবন্ধিত নৌযানগুলোরও অনেকগুলো আনফিট ও চালক অদক্ষ আছে।অর্থাৎ নৌ চলাচল আইন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। যার অন্যতম কারণ- সংশ্লিষ্ট সংস্থার জনবল ঘাটতি এবং কর্মরতদের দায়িত্ব পালন অনীহা। ফলে একের পর এক নৌ দুর্ঘটনা ঘটছে।
কিন্তু প্রতিটি নৌদুর্ঘটনায় ব্যাপক জানমালের ক্ষতি হচ্ছে। তাই নৌদুর্ঘটনা রোধ করতে হবে। সে জন্য নৌচলাচল আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তার আগে সংস্থার সরকার অনুমোদিত জনবলের সব শূন্য পদ পূরণ করতে হবে অবিলম্বে এবং তাদের সকলকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এছাড়া, সকলের কাজের পূর্ণ জবাবদিহিতা কায়েম এবং দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বন্ধ, আইন লংঘনকারীদের দ্রুত শাস্তি ও সব নৌযান ঘাটে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে সার্বক্ষণিক মনিটর করতে হবে। তাহলেই নৌ দুর্ঘটনা একেবারে বন্ধ না হলেও ব্যাপকভাবে হ্রাস পাবে। অপরদিকে,সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। তাই নৌযানে গমনেচ্ছুদের উচিৎ-ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত, অনিবন্ধিত ও দুর্যোগের সময় নৌযানে চলাচল পরিহার করা। আউলিয়া ঘাটের নৌদুর্ঘটনায় নিহত ও নিখোজদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি রইলো আমাদের সমবেদনা।