"মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং একজন মমতাময়ী মা, সেই মা হিসেবে আপনি আপনার ছেলেদের ফিরিয়ে এনে দিন। তাদের সন্তানদের নিয়ে আমরা খুব কষ্টে দিন পার করছি। বর্তমানে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। তার পরেও ট্রলার মালিককে টাকা দিয়েছি। তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য। ট্রলার মালিকের সাথে কথা বলতে চাইলেও তেমন কোন গুরুত্ব দিচ্ছে না। শুনেছি তারা নাকি ভারতের দূতাবাসে কাগজ জমা দিয়েছে। এখন আপনি চাইলেই তারা দেশে আসতে পরে। আপনি আপনার ছেলেদের এনে দিন। ভারতে থাকা জেলেদের ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে নিয়ে খুব কষ্টে দিন যাপন করছে। টাকার অভাবে তাদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে"। শুক্রবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হয়ে সাগরে ঝড়ের কবলে পরে ভারতে ভেসে যাওয়া জেলে পরিবারের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলেন।
সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে চলতি বছরের ১৮ থেকে ২১ আগস্ট গভীর বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের কারণে দুই শতাধিক ট্রলার ডুবে যায়। ডুবে যাওয়ায় ট্রলারের শতাধিক জেলে ভাসতে ভাসতে দেশীয় জলসীমা অতিক্রম করে ভারতে ঢুকে পরে। এসব জেলেদের ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে বরগুনার পাথরঘাটায় উপজেলার ১৭ জেলে পরিবার। শুক্রবার সকাল ১০ টায় পাথরঘাটা উপজেলা প্রেসক্লাবের সামনে উপস্থিত হয়ে ওই সকল জেলে পরিবার গুলো এই হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
নিখোঁজ জেলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত আগস্ট মাসের ১৮ তারিখ হঠাৎ করে বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্ন চাপ সৃষ্টি হয়। এর কয়েকদিন আগে এই উপকূলের জেলেরা তাদের ট্রলারে রসদ সামগ্রী নিয়ে মাছ ধরার জন্য গভীর সমুদ্রে যায়। এদিকে নিম্নচাপ শুরু হলে সাগর উত্তাল হয়ে পড়ায় কয়েকটি ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে। তখন ডুবে যাওয়া ট্রলার গুলোর অধিকাংশ জেলেরা সমুদ্রে ভাসতে থাকে। তারা দুই-তিন দিন ভাসার পরে ভারতীয়রা উদ্ধার করে বিভিন্ন আশ্রয়ণ কেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থান করা জেলেদের ঠিক মতো ৩ বেলা খাবার ও চিকিৎসা না দেয়ায় আরো অসুস্থ হয়ে পরেছেন। তাদেরকে সরকারের মাধ্যমে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য অনুরোধ করেন তারা।
ভারতের আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নেয়া পাথরঘাটা পৌর এলাকার জেলেরা জানান, 'আমাদের সংসারের উপার্জন কারী এই দুই ছেলে। আমার স্বামী ও এক নাতী গুরুতর অসুস্থ। দেড় মাস ছেলেরা ভারতে আটকা পড়ায় এখন আমাদের পরিবারের ঠিক মতো খাবার ও চিকিৎসা চলছে না।
রফিকুল ইসলামের স্ত্রী হাফিজা বেগম জানান, তাদের পরিবারের উপার্জনকারী ব্যাক্তি সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে ফিরে আসেননি, প্রচন্ড ঝড়ে তাদের ট্রলার ডুবে যায়। প্রথমে মনে করছিলাম আমার স্বামী আর বেঁচে নেই। অনেকদিন পরে জানতে পেরেছি তারা ভারতে আছে।
ভারতে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি মো. নাসির উদ্দিন মূঠোফোনে জানান, হঠাৎ ঝড়ের কবলে পরে তাদের ট্রলারটি ডুবে যায়। এর পরে তারা ৩৬ ঘন্টা সাগরে ভাসমান থাকার পরে বাংলাদেশী জলসীমার মধ্যে থেকে ভারতীয় কোস্টগার্ডের একটি জাহাজ তাদেরকে উদ্ধার করে ভারতের কাকদ্বীপের বুদ্ধপুর এলাকার কৃষ্ণ আশ্রয়ন কেন্দ্রে নিয়ে যায়। বর্তমানে তাদের ঠিকমতো ৩ বেলা খাবার দেয়া হয় না এবং ভাল করে চিকিৎসাও দেয়া হয় না। এরকম যদি হয় তবে তারা সবাই আরো অসুস্থ হয়ে যাবে। তিনি বাংলাদেশ সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন যাতে তাদেরকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবি ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, এসব জেলেদের ফিরিয়ে আনতে জেলে এবং ট্রলার মালিকদের পক্ষ থেকে সকল রকমের খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে এবং জেলেদের কাগজপত্র ভারতীয় দূতাবাসে জমা দেয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, আমি ভারতে গিয়ে জেলেদের খোঁজ খবর নিয়েছি। আমরাও সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি যাতে ভারতে আশ্রয় নেয়া জেলেরা দ্রুত দেশে ফিরে আসতে পারে।