পাবনার চাটমোহরে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার আর্সেনিকমুক্ত সুপেয় পানি উৎপাদক নলকূপ স্থান,পাম্প হাউজ নির্মাণ প্রকল্পে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে।
গত বুধবার(২৮ সেপ্টেম্বর) সরেজমিন তদন্তে আসেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ ফজলে আজিম,তদন্ত কমিটির সদস্য স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব প্রত্যয় হাসান এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এনামুল হক।
এ সময় পাবনার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী এবং বর্তমানে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর,খুলনা সার্কেল খুলনার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জামানুর রহমান,চাটমোহর উপজেলা চেয়ারম্যান আঃ হামিদ মাস্টার,পৌর মেয়র এ্যাড.সাখাওয়াত হোসেন সাখো,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ মমতাজ মহল,পাবনা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুল ইসলাম,পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী রাফিউল বারী, চাটমোহর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ সহকারী প্রকৌশলী মতিউর রহমান,সাবেক উপ সহকারী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন,চাটমোহর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক ইত্তেফাক প্রতিনিধি হেলালুর রহমান জুয়েল,প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক রকিবুর রহমান টুকুন উপস্থিত ছিলেন। জানাযায়,জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে আসেনিকমুক্ত সুপেয় পানি ও নিস্কাশন ব্যবস্থায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও বিগত ১০ বছরে এর কোন সুফল পাঁচ্ছে না চাটমোহর পৌরবাসী। দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রকল্পটি।
এ নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে ক্ষুব্ধ ও হতাশ পৌরবাসী। সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়,সরকার চাটমোহর পৌরসভার আর্সেনিকমুক্ত সুপেয় পানি উৎপাদন ও সরবরাহ জন্য ২০১১-১২ অর্থ বছরে পাইপ ওয়াটার সাপ্লাই এ- এনভায়রনমেন্টাল স্যানিটেশন প্রকল্প হাতে নেয়। এর জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় সাড়ে ৩ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের আওতায় পৌর এলাকায় প্রায় ২০ কিলোমিটার পাইপ লাইন স্থাপন,উৎপাদক নলকূপ,পাম্প ঘর,পাম্প ও মোটর ক্রয়,সারফেস ড্রেন নির্মাণ,ডাস্টবিন ও পাবলিক টয়লেট নির্মাণ,তারা নলকূপ স্থাপন,অটো ভোল্টেজ রেগুলেটর ক্রয়সহ কম্পিউটার ও প্রায় ৭০০টি বাড়িতে পানির মিটার সংযোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
পাবনার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী এবং বর্তমানে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর,খুলনা সার্কেল খুলনার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জামানুর রহমান এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হন। এ প্রকল্পের পিডি নিজেই টেন্ডার আহ্বানকারী ও বিল পরিশোধকারী হওয়ায় তিনি তৎকালীন চাটমোহর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপণ্ডসহকারী প্রকৌশলী ও পছন্দের পাবনার ঠিকাদারকে দিয়ে যেনতেনভাবে বরাদ্দের টাকা খরচ দেখান এবং তিনি তার স্বেচ্ছাচারিতা ও ব্যাপক অনিময়ের দুর্নীতির মাধ্যমে যেনতেনভাবে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করেন বলে অভিযোগ প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের।
নিম্নমানের পাইপ দিয়ে পানির লাইন বসানোর কারণে পানি ছাড়ার সাথে সাথে তা ফেটে পানি বের হওয়ায় নির্মাণের পর থেকে পৌর এলাকায় পানি সরবারাহ বন্ধ রয়েছে। ডিপটিউবয়েলগুলো বসানোর পর থেকে অকেজো হয়ে আছে। এমনকি পাম্প ঘর নির্মাণের পর থেকে কয়েক বছর পৌরসভার নারিকেলপাড়া এলাকার পাম্প ঘরসহ ২টি ঘরে বিদ্যুতের মাধ্যমে পাম্প ও মোটর সচল দেখিয়ে এবং প্রকল্পের অন্যান্য কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে উল্লেখ করে ২০১৩ সালের জুন মাসের মধ্যে টাকা উত্তোলন করে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে,এ প্রকল্প থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ১৩.০৬.২০১৩ সালে প্রকল্পটি পৌরসভায় হস্তান্তর করা হয়েছে মর্মে বলা হয়েছে।
বর্তমানে প্রকল্পটি পৌরবাসীর কোন উপকারেই আসছেনা। পৌরসভা সুত্রে জানাযায় এই প্রকল্পের মাধ্যমে পৌরবাসীর আসেনিকমুক্ত সুপেয় পানির কোন ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত করা হয়নি। পৌরসভার দোলবেদী তলার ব্যবসায়ী রনি রায় জানান,পানির জন্য সংযোগ দেওয়া হয়েছিল,কিন্তু কোন দিন পানি সরবরাহ করা হয়নি। একই কথা বললেন পৌরসভার অনেক মানুষ।
পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী রাফিউল বারী জানান,এই প্রকল্পের কাজ শুরু হলে আমি বদলী হয়ে যাই। কাজ সমাপ্ত করে কবে কিভাবে বুঝে দেওয়া হয়েছে তা আমার জানা নেই।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তৎকালীন উপণ্ডসহকারী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন জানান,কাজ শেষ করে পৌরসভাকে ২০১৩ সালে হস্তান্তর করা হয়। প্রকল্পটি সচল হয়নি কেন জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে নােিকলপাড়া মহল্লায় গিয়ে দেখা যায় পাম্প হাউজে সংসার পেতেছেন পৌরসভায় মাস্টার রোলে নিয়োগপ্রাপ্ত সুইপার খোকন। পাম্পের ওপর রাখা হয়েছে রানার সকল উপকরণ আর পাম্প চালানোর সুইচ ঢেকে দেওয়া হয়েছে আলমারি দিয়ে। চৌকি পেতে রাখা হয়েছে। পাশের ঘরটি এখন সুইপার খোকনের বেডরুম। খোকনকে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ থাকতে দিয়েছে বলে জানান।
পৌরবাসী জানান,পাম্প চালু করার সাথে সাথেই পাইপ ফেটে সড়কে জলাবদ্ধ হয়ে যায়। এ প্রকল্পের আওতায় পানির পাইপ লাইন বসানো হলেও জনসাধারণের পানি সরবরাহ কাজে তা ব্যবহার করা যাচ্ছেনা। এনিয়ে একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলে বিষয়টির উপর একটি প্রতিবেদন প্রচারিত হলে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে আসে।
পরবর্তীতে পাবনার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী এবং বর্তমানে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর,খুলনা সার্কেল খুলনার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জামানুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত না করেই সমস্ত টাকা উত্তোলনসহ অনিয়ম,দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ ফজলে আজিম দৈনিক ইত্তেফাককে জানান,আমরা তদন্ত শুরু করেছি। সবকিছু সরেজমিন দেখবো। আপনাদের বক্তব্য লিখিতভাবে গ্রহণ করেছি। পরবর্তীতে আরো তদন্ত হবে।
চাটমোহর পৌরসভার মেয়র এ্যাড.সাখাওয়াত হোসেন সাখো জানান,পূর্বের মেয়ররা এই কাজের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। প্রকল্পের কাজ বুঝে নিয়েছে কিনা জানিনা। আমার এই প্রকল্প সম্পর্কে জানা নেই। আর পৌরসভার কোন বাড়িতে পানির কোন সংযোগ দেওয়া হয়নি। কেউ তো পানি পায়নি।
এদিকে সুপেয় পানি বঞ্চিত চাটমোহর পৌর এলাকার বাসিন্দারা এ প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।