দখল করা অঞ্চলগুলোতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর অভিযান বেড়ে যাওয়ার মধ্যে এ বছর এখন পর্যন্ত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে অন্তত ১০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে বিবিসির এক হিসাবে উঠে এসেছে। ব্রিটিশ এ সংবাদমাধ্যমটি জানায়, গত সপ্তাহে জেনিনে একটি বাড়ি লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বাহিনীর ছোঁড়া ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রে পালিয়ে বেড়ানো এক বন্দুকধারীসহ ৪ জন নিহত এবং শনিবার পূর্ব জেরুজালেমে ১৮ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার পর মোট নিহতের সংখ্যা তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছায়। নিহতের এই সংখ্যা বলছে, ২০১৫ সালের পর পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের জন্য ২০২২-ই সবচেয়ে প্রাণঘাতী বছর হয়ে ওঠার পথে রয়েছে। এ বছর নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে অধিকাংশেরই প্রাণ গেছে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে। সশস্ত্র বেসামরিক ইসরায়েলিদের হামলায়ও একাধিক ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। অল্প কয়েকটি ঘটনায় নিহত ফিলিস্তিনি কাদের গুলিতে মারা গেছে তা নিয়ে বিতর্ক আছে। ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর এক অভিযানে গুলিবিদ্ধ হয়েও একজন নিহত হন। নিহত এ ফিলিস্তিনিদের মধ্যে প্রায় এক পঞ্চমাংশই শিশু হওয়ায় বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন বারবারই উদ্বেগ প্রকাশ ও সতর্ক করে আসছে। নিহতদের মধ্যে সবচেয়ে কমবয়সী ফিলিস্তিনির বয়স ১৪। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ৭ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনা দ্রুততম সময়ের মধ্যে খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছে। ওই শিশুর ভাইদের বিরুদ্ধে পাথর ছোড়ার অভিযোগ ছিল। তাদের খোঁজে বাড়িতে ইসরায়েলি সেনারা যাওয়ার পর ওই শিশুটি মারা যায়। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী পরে জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে তাদের অভিযানের সঙ্গে শিশুটির মৃত্যুর কোনো সম্পর্ক নেই বলে বেরিয়ে এসেছে। বিবিসি জানিয়েছে, এ বছর এখন পর্যন্ত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে যে ফিলিস্তিনিরা নিহত হয়েছে তাদের মধ্যে বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠনের সদস্যদের পাশাপাশি ইসরায়েলি বাহিনীর উদ্দেশ্যে পাথর ও পেট্রল বোমা ছোঁড়া তরুণ ও কিশোররা, নিরস্ত্র বেসামরিক ও পথচারী, বিক্ষোভকারী ও ইসরায়েলিদের বসতি স্থাপনবিরোধী কর্মী এবং ছুরি বা অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে ইসরায়েলি সেনা বা বেসামরিকের ওপর হামলা চালিয়েছে এমন সন্দেহভাজনরা রয়েছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে ২০২২ সালে ইসরায়েলিদের ওপর হামলার পরিমাণও বেড়েছে। আরব ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের হামলায় এবার মাত্র কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে ১৬ ইসরায়েলি ও ২ বিদেশির মৃত্যু হয়েছে। এরপর ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সাঁড়াশি অভিযান ওই অঞ্চলে নতুন সহিংসতার আশঙ্কাও বাড়িয়ে দেয়। ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে নিয়মিতই অত্যধিক বলপ্রয়োগের অভিযোগ আসছে। অন্যদিকে তাদের বিরুদ্ধে লড়া সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কাছে এখন আগের তুলনায় বেশি গোলাবারুদ ও অস্ত্র দেখা যাচ্ছে, যার দাপটে পশ্চিমা সমর্থিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষও অসহায় হয়ে পড়ছে। পশ্চিম তীরের উত্তরের দিককার জেনিন ও নাবলুসের মতো জনবহুল এলাকাগুলোতে এখন ইসরায়েলি বাহিনীর প্রায় সব অভিযানেই তাদের সঙ্গে তরুণ, নিত্যনতুন অস্ত্রধারী জঙ্গিদের বন্দুকযুদ্ধ হচ্ছে। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের কর্মকর্তারা পশ্চিম তীরের উত্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার দায় একে অপরকে দিচ্ছেন।