চাঁদপুর জেলায় অনাবাদি, পতিত ও এক ফসলী জমিতে সর্জন পদ্ধতিতে সবজি, ফলমূল ও মাছ উৎপাদন করা গেলেও এখন এটি কৃষকদের আকাঙ্খার মাঝেও হতাশা সৃষ্টি করেছে। কেননা এই পদ্ধতিতে চাষাবাদের জন্য যে পরিমাণ খরছ সে অনুযায়ী কৃষি বিভাগ বরাদ্দ দিচ্ছেনা। এতে করে বেকারত্ব দূরিকরণ ও পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মেটানোর এমন উদ্যোগ বাঁধাগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
২৩ অক্টোবর রোববার জেলার মাঠপর্যায়ের সর্জন চাষীদের সাথে আলাপ করলে তারা এমনটি জানিয়েছেন।
জানা যায়, ২০২০ সালে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সর্জন পদ্ধতিতে বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী শুরু হয়। যেখানে চাঁদপুরের কৃষকরা জমির মধ্যে সারিবদ্ধভাবে উঁচু বেডের মধ্যে মাচা ও জাল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি ও ফলের গাছ আর নালার মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের মাছের চাষ শুরু করেন। এতে একই জমিতে সারা বছর একসাথে তিনটি ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। কিন্তু এ পদ্ধতি বাস্তবায়নে চাষীদের জমিভেদে আর্থিক খরছ দেওয়া হচ্ছে। যা দিয়ে বেকার যুবকরা এ পদ্ধতির চাষাবাদে নেমে অনেকেই হতাশ হয়ে যাচ্ছেন। তারা পর্যাপ্ত আর্থিক সহযোগিতা না পাওয়ায় এই সর্জন পদ্ধতির চাষাবাদে উৎসাহী হচ্ছেন না।
ফরিদগঞ্জের আব্দুল্লা আল নোমান বলেন, আমি একজন শিক্ষার্থী। পাশাপাশি সর্জন পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করেছি। আমাকে এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করার জন্য কৃষি বিভাগ মাত্র ১৬ হাজার টাকা দিয়েছে। যা দিয়ে মাটি প্রস্তুত ও লেবার খরছই হয় না। এখন এ কাজে নেমে নিজের চেষ্টায় চাষাবাদ এগিয়ে নিচ্ছি।
ঘরিহানার চাষী মনিরুল ইসলাম বলেন, অনাবাদী ও পতিত জমি নিয়ে যখন দুঃশ্চিন্তায় ভুগছিলাম। তখন কৃষি বিভাগের পরামর্শে সর্জন পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করি। এখন এর মাধ্যমে শসা, করলা, পেপে ফলাচ্ছি এবং পুকুরে তেলাপিয়া ও রুই মাছ চাষ করছি। কিন্তু সরকারি অর্থসহায়তা বাড়ানো না হলে এই সর্জন পদ্ধতি মুখ থুবড়ে পড়বে।
গোবরচিত্রা ব্লকের মাঠ কর্মকর্তা বিল্লাল হোসাইন বলেন, মূলত নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ফসল ভাগ করে সর্জন পদ্ধতিতে সবজি চাষ করা হচ্ছে। যেমন চৌরাঙ্গায় আবুল খায়ের মজুমদার সর্জন পদ্ধতিতে ধুন্দল চাষের জন্য টাকা বরাদ্দ পেয়েছেন। কিন্তু তারমানে এই না যে তিনি শুধু ধুন্দলই উৎপাদন করবেন। তিনি তার জমিতে এই পদ্ধতিতে ১২ মাসে বিভিন্ন জাতের ফসলই উৎপাদন করে দেড় থেকে ২ লক্ষ টাকা আয় করতে পারবেন। আমরা চেষ্টা করছি আগ্রহী চাষীদের নামের তালিকা করে উপজেলা কার্যালয়ে দ্রুতই তাদের নাম পৌঁছে দিতে।
চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ জালাল উদ্দিন বলেন, বর্তমানে চাঁদপুরে ৮ উপজেলায় ১শ’ ৮ জন চাষী ২৭টি সর্জনে প্রায় ৪ হেক্টর জমিতে এ পদ্ধতিতে সারা বছর বিভিন্ন জাতের সবজি, ফল ও মাছ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। আমরা ধাপে ধাপে আগ্রহী কৃষকদের কৃষি উপকরণ, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সরবরাহের মাধ্যমে সহযোগিতা করছি। পর্যায়ক্রমে তাদের জমি অনুপাতে আর্থিক সহায়তা বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হবে।