দ্রব্যমূল্য বাড়ায় মানুষের কষ্ট হচ্ছে স্বীকার করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, প্রত্যেক মানুষের জীবনে ভালো ও মন্দ সময় থাকে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের চতুর্থ সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক দাম বাড়া নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমের শিরোনামে মানুষের ভোগান্তি ও কষ্টের কথা ওঠে আসছে। এ নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এটা সত্যি যে মানুষের কষ্ট হচ্ছে। এ কষ্টের পেছনে কিন্তু আমাদের চেয়ে বৈশ্বিক প্রভাব বেশি। এখন বৈশ্বিক প্রভাব তো আমরা রাতারাতি পরিবর্তন করতে পারবো না। তিনি বলেন, প্রত্যেক মানুষের জীবনে কখনো ভালো সময় থাকে, কখনো খারাপ সময় থাকে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও যেটা বলেছেন সামনে দুর্ভিক্ষ হতে পারে, খাদ্যের অভাব হতে পারে। সে চিন্তা করেই কিন্তু উনি বারবার বলছেন। উনি সবসময় অনেক অ্যাডভান্স চিন্তা করেন। যেন মানুষের সমস্যা না হয়। সাধারণ মানুষের জন্য কোনো সুখবর আছে কি না- জানতে চাইলে টিপু মুনশি বলেন, আমাদের খবরটা দিচ্ছি যে, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সয়াবিন তেলের বিষয়টি আমাদের ট্যারিফ কমিশন ঠিক করবে। খুব শিগগির আবার বসে পুরো জিনিসটা এসেস করে, স্টাডি করে নির্ধারণ করবে। গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক না থাকায় চিনির উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, চিনি নিয়ে নেতিবাচক প্রভাব দেখছি না, চিনিটা অ্যাভেইলেবল। জানুয়ারি পর্যন্ত কোনো সমস্যা নেই। তিনি আরও বলেছেন, যে সমস্যা আমরা পেয়েছি সেটি হলো গ্যাসের সাপ্লাই অপ্রতুলতার কারণে ৬৬ শতাংশের বেশি চিনি উৎপাদন করতে পারছে না। আশা করি দু-একদিনের মধ্যে গ্যাসের সাপ্লাই স্বাভাবিক হলে যে পরিমাণ চিনি দরকার তা উৎপাদন সম্ভব হবে। মন্ত্রী বলেন, চিনির সাপ্লাইটা ঠিকভাবে হওয়া দরকার। সরবরাহে ধীরগতি হলে সমস্যা, সরবরাহ স্বাভাবিক হলে যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে সে দামে বিক্রি করা যাবে। টিপু মুনশি বলেন, অনেক চিনি গুদামে পড়ে আছে, সেটা প্রসেস করতে পারলে বাজারে আসবে। গ্যাসের সমস্যা সমাধান হলে এটি প্রসেস করা যাবে। যারা গ্যাসের বিষয়টি দেখে তারা বলছে পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটছে। বিদ্যুতের অবস্থা ইমপ্রুভ করবে। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এদিকে ইউক্রেন-রাশিয়ার বাজার বন্ধ থাকায় কানাডাসহ অন্য দেশ থেকে ব্যবসায়ীরা গম আনা শুরু করেছেন। গমের বাজারও স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, গমের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। এটা নিয়ে আমাদের এক বড় ব্যবসায়ী বললেন, তার একটি জাহাজ তুরস্কে আটকে ছিল। সেটা রওনা হয়েছে। সেখানে ৫৫ হাজার টন গম রয়েছে। অর্থাৎ গমেরও সরবরাহ ঠিক হয়ে যাবে। তবে ইউক্রেন হলো আমাদের প্রধান সরবরাহকারী দেশ। সেখান থেকে আনতে পারলে গমের বাজার স্থিতিশীল হবে। তবে এখন দাম বেশি পড়লেও দেশের ঘাটতি মেটাতে কানাডা থেকে এনে দেওয়ার চেষ্টা করছি। অনেক ব্যবসায়ীরা কমিটমেন্ট করেছেন, তাদের যা প্রয়োজন তা আনতে পারবেন। টিপু মুনশি বলেন, গম আমাদের যে পরিমাণ আমদানির কথা ছিল, সেখানে একটু ঘাটতি দেখছি। ইউক্রেন-রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিলে গম সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। তবে আমাদের ব্যবসায়ীরা এই বাজারে সমস্যার জন্য অন্য বাজার থেকে গম কেনা শুরু করেছেন। যদিও দাম একটু বেশি পড়ছে। কানাডা থেকে আসছে, তাদের মানও ভালো। এই বাজারটা স্বাভাবিক হলে আমাদের কোনো সমস্যা থাকবে না। আর কোনো বড় বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি। গত দুই-তিন দিনে ডালের দাম প্রায় কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে, এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখন টিসিবির মধ্যে আমাদের নির্ধারিত দামেই দিচ্ছি। ডালের সরবরাহ কিছুটা কমেছে। সে কারণে হয়তো দাম কিছুটা বাড়তে পারে। ট্যারিফ কমিশন এ বিষয়ে দেখবে, যে দাম বাড়িয়েছে সেটা যৌক্তিক কিনা তারা দেখবে। বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার প্রভাব এখানে এসে পড়েছে। সভায় রড সিমেন্ট নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের আরও একটু ডিটেইলে যেতে হবে। বিশ্ববাজারে দাম কমার ফলে আমাদের যে সুবিধা পাওয়ার কথা ছিল, সেটা আমরা ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে পাঁচ্ছি না। এখন ডলারের দাম যদি কমে তাহলে আমরা ভোক্তাদের সেই সুবিধা দিতে পারবো। চলমান অবস্থায় আমাদের ঘাবড়ানোর কিছু নেই। খাদ্যের যে উৎপাদন সব মিলিয়ে খাদ্যের কোনো সমস্যা হবে না। মানুষের মূল ফোকাস থাকে খাদ্যে, সেটা ঠিক থাকলে কোনো সমস্যা হয় না। অন্যদিকে আপোশ করা যায়, খাদ্যে আপোশ করা যায় না। যানবাহনে যে গ্যাস সরবরাহ করা হয়, সেটা বন্ধ করে শিল্পখাতে দেওয়ার কথা বলে আসছেন ব্যবসায়ীরা- এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে টিপু মুনশি বলেন, আজকের (বৃহস্পতিবার) আলোচনায় এ কথাগুলো এসেছেছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিবেচনায় নেবে। এটা আমাদের দেখার প্রয়োজন নেই। তবে আমি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একমত যে, গাড়িতে যতটা প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে গ্যাস সরবরাহ নিয়ে, এখন বেসিক রিকোয়ারমেন্টের জন্য প্রয়োজন। যদি বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যায় তাহলে তো কোনো সমস্যাই নেই। বিদ্যুতের অবস্থা উন্নীত হচ্ছে। তবে ব্যবসায়ীদের দাবির বিষয়ে আমরা তাদের জানাবো।