শ্রীকৃষ্ণের ব্রজলীলার অনুকরনে বৈষ্ণবীয় ভাবধারায় অনুষ্ঠিত ধর্মীয় উৎসবের নাম রাস। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও কুয়াকাটায় অনুষ্ঠিত হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী রাস লীলা উৎসব। সার্বজনীন এ উৎসবে আগমন ঘটবে লাখো পূন্যার্থীর। তাই আন্ধরমানিক নদী লাগোয়া পৌর শহরের শ্রী শ্রী মদন মোহন সেবাশ্রম ও সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন মন্দির সাজানো হয়েছে নতুন সাজে। তবে কুয়াকাটায় আগত পূন্যার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাঠে থাকবে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা।
কুয়াকাটা রাধাকৃষ্ণ মন্দিরের মহারাজ নিত্যনন্দ প্রভু জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এ রাস উৎসবের মূলে রয়েছে সত্য ও সুন্দরের জয়আংখা। কংশ রাজাকে বস করে মানবতা রক্ষা। অতপর পূর্নিমা তিথিতে রাধা কৃষ্ণের পরম প্রেম।
জানাগেছে সেই থেকেই রাস উৎসবের প্রচলন। তারই ধারাবাহিকতায় ৭ নভেম্বর দুপুরে অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয় রাস পূজার আনুষ্ঠানিকতা। ওই দিন রাত ১২ টা এক মিনিটে শুরু হবে লগ্ন। উৎসব থাকবে তিনদিন।
৮ নেেভম্বর ভোরে সাগরে পূনৗ স্নান। রয়েছে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ও সাংস্কুতিক অনুষ্ঠান।
রাস উৎসব দক্ষিন উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালী বাসির গৌরবময় ঐতিহ্য। এই তিথিতে(মঙ্গলবার) পূর্ব আকাশে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াকাটা গঙ্গাস্নান শেষ করবেন পুণ্যার্থীরা।
সনাতন ধর্মাবলম্বী পুস্প রানী, তমলা দেবী ,সিতারা হালদার রাস মেলায় এসেছেন খুলনা ও বাগেরহাট থেকে। তারা মানতকারি। মাথার চুল ন্যাড়া করা সহ প্রাশ্চিত্ত ও পিন্ডদান করবেন। এ ছাড়া পূন্যের আশায় মোমবাতি ও আগরবাতি জ¦ালিয়ে বেল পাতা, ফুল, ধান, দূর্বা, হরিতকী, ডাব, কলা, তেল, সিঁদুর, উলুর ধ্বনি, গীতা পাঠ ও ঢাংকার বাদ্যে পুরো সৈকত মুখরিত হয়ে উঠবে। এরপর মন্দিরের আঙ্গিনায় ১৭ জোরা রাধা কৃষ্ণের যুগল প্রতিমা দর্শন করবে তারা। (ভক্সপপ: পুরোহিত)
জাগতিক সকল পাপ-তাপ, কলঙ্ক-গ্নানী থেকে মুক্তি পেতে সনাতন ধর্মের লাখো পূণ্যার্থী প্রতি বছর এই সময়ে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে পূণ্যস্নানে মিলিত হন।
করোনা পরবর্তী এবং পদ্মা সেতু চালু হবার পর প্রথমবারের মতো কুয়াকাটায় রাস উৎসবে এবার রেকর্ড সংখ্যাক পর্যটক সমাগমের আশা সংশ্লিষ্টদের।
দুই’শ বছর ধরে রাস পূর্ণিমার তিথিতে কুয়াকাটা সমুদ্র তীরে হিন্দু সম্প্রদায় রাস মেলা ও স্নানোৎসব করে আসছে। আগামী ৭ ও ৮ নভেম্বর দু’দিনের এই রাস উৎসবকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লাখো মানুষের সমাগম ঘটবে। প্রতি বছর সনাতন ধর্মাবলম্বিদের দখিণের সর্ববৃহৎ আচার অনুষ্ঠানটি এখন সার্বজনীন উৎসবে পরিনত হয়। এখানে সকল ধর্ম বর্ণের মানুষের ঢল নামে। সনাতন ধর্মমতে, রাস পূর্ণিমার রাতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যমুনার তীরে তার সঙ্গিনীদের বাঁশির সুরে আমন্ত্রণ জানিয়ে ছিলেন। সঙ্গিনীরা সংসারের মোহ-মায়া ত্যাগ করে বৃন্দাবনে তার সাথে মিলিত হন। জাগতিক সকল পাপ পঙ্কিলতা থেকে নিজেদের মুক্ত করতে গঙ্গা স্নানের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন করেন সেদিনের রাসলীলা। সেই থেকে হিন্দু সম্প্রদায় পাপ মোচনে রাস পূর্ণিমা লগ্নকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। কুয়াকাটায় সৈকতে অব¯ি’ত শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির ও তীর্থযাত্রী সেবাশ্রমে অন্যান্য বছরের মতো এবারও ১৭ জোড়া রাধাকৃষ্ণের যুগল মুর্তি ¯’াপনের কাজ সম্পন্ন করেছেন কারিগররা।
কুয়াকাটা শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির ও তীর্থযাত্রী সেবাশ্রম সাধারণ সম্পাদক নীহার রঞ্জন মন্ডল বলেন, করোনা পরবর্তী এবং পদ্মা সেতু চালু হবার পর এবারের রাস উৎসবে ব্যাপক পূণ্যার্থীর আগমন ঘটবে। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে কুয়াকাটা সৈকত সংলগ্ন মন্দিরের নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, শংকর চন্দ্র বৈদ্য বলেন,ঐতিহ্যবাহী ধর্মানুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে প্রতিপালনের জন্য উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নানা উদ্যোগ ও কঠোর নিরাপত্তা গ্রহণ করেছেন।
এরি মধ্যে হোটেল মোটেল এর সিট ৮০ শতাংশ বুকিং হয়েগেছে।
রাস পূর্নিমা উপলক্ষে ইতোমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে ১৭ জোড়া যুগল প্রতিমা। এ ছাড়া প্যান্ডেল গোছানো এবং লাইটিংয়ের কাজও শেষ পর্যায়ে বলে জানিয়েছেন এই সংগঠক।(সট: কাজল বরন দাশ,রাস উৎসব সমন্বয়ক)
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ জানান, কুয়াকাটা সৈকতে পূন্যার্থীনের তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতে সচেষ্ট রয়েছে ট্যুরিষ্ট পুলিশ।
পটুয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য, অধ্যক্ষ মহিববুর রহমান মহিব লাখ লাখ লোকের সমাগমের এ উৎসবকে সর্বজনিন উৎসবে পরিনত করে উপভোগ করতে পূন্যার্থীদের সাথে থাকার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য।
পূন্যের আশায় গঙ্গাস্নান করবে লাখো পূর্নার্থী। আর এ পূন্যার্থীদের পাপ মোচন ও মনের বাসনা পূর্ন হবে। সঙ্গে সঙ্গে দূর হবে দেশের সকল অশুভ শক্তি এমনটাই প্রত্যাশা সনাতনীদের।