লংগদু আওয়ামী লীগের কোন্দল ও ভাঙ্গন ঠেকাতে রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়েছে লংগদু উপজেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) সকালে রাঙ্গামাটি প্রেস ক্লাবের সম্মেলন কক্ষে লংগদু উপজেলা আওয়ামী লীগের তৃণমুল নেতাকর্মীদের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই আহবান জানান নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লংগদু উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম কামাল, উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা মোহাম্মদ নাসিমুল গনি, নজরুল ইসলাম, জমশেদ আলী, অমর আলী, রেজাউল করিম, ইন্দাজ আলী, সরওয়ার গাজী, রবিউল হোসেন, খালেক সরকার, মোঃ পারভেজ, মোস্তফা ইসলাম, রাশেদ খান রাজু, মো. সাদেক হোসেনসহ তৃণমূল আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বক্তারা বলেন, লংগদু উপজেলার নিবেদিত ও ত্যাগী আওয়ামী লীগরা আজ অসহায় ও কোণঠাসা এবং দলের নবাগত হাইব্রীড নেতাদের কার্যক্রমে বিব্রত। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে লংগদু বিএনপি একাধিক প্রার্থী ছিল। বিএনপি’র মুল প্রার্থী ছিলেন মোঃ তোফাজ্জল হোসেন। অপর দিকে বিএনপি’র বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন, বিএনপি’র সাবেক উপজেলা সভাপতি হাজী ফয়জুল আজীম। বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী পরাজয় বরণ করায় তার অনুসারী বিএনপি কয়েক হাজার নেতা ও কর্মী আওয়ামী লীগে যোগদান করেছিলেন। এদেরকে পর্যবেক্ষণ, গতিবিধি অনুসরণ ও আওয়ামী লীগ সংগঠনের ভিতর ও বাহিরে কোনরূপ ক্ষতি হবে কিনা তা যাচাই-বাছাই না করেই লংগদু উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগসহ সাতটি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনসহ সকল ওয়ার্ড পর্যায়ে বাবুল দাশ বাবুর নেতৃত্বে বিএনপি বলয়ের লোকজন বিভিন্ন কমিটিতে প্রবেশের সুযোগ করে দেন।
এমনকি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ৩১ কিংবা ৪১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে ২০-৩০ জন বিএনপি থেকে আগত লোকজনদের নিয়ে কমিটি গঠন করেন। যা লংগদু উপজেলা আওয়ামী লীগ ও ৭টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের জন্য অশনি সংকেত। যা যে কোন মুহুর্তে সংগঠন ভাঙ্গণের কবলে পড়তে পারে। বিএনপি পন্থী লোকজন দিয়ে কমিটি গঠন করায় নিবেদিত ও ত্যাগী আওয়ামী লীগ আজ নিবৃত্বে, নিরবে অসহায় এর মত দেখে যাচ্ছে। দলে ত্যাগী ও নিবেদিত কর্মীরা বাবুল দাশ বাবু ও বিএনপি জামায়াত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত লোকজনের কাছে কোণঠাসা।
উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরে লিখিত বক্তব্যে তারা আরো বলেন, বর্তমান লংগদু উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন শিপু, বিএনপি আমলে উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। রিপন দাশ লংগদু উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন, মোঃ জিয়াউর রহমান (বর্তমান ১নং আটারকছড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ এর সাধারণ সম্পাদক), ছাত্র শিবিরের কর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন, মোঃ বিল্লাল হোসেন (বর্তমান-৬নং মাইনীমুখ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক), যুবদলের কর্মী ছিলেন। এসব হাইব্রীড নামধারী বিএনপি পন্থী লোকজন নিয়ে বাবুল দাশ বাবু সংগঠন পরিচালনা আড়ালে আওয়ামী লীগ সংগঠনটিকে ভাঙ্গণ ও ধ্বংসের পায়তারা করে চলছেন। আমরা যতটুকু জানি বাবুল দাশ বাবু সুক্ষ্ম কুট-কৌশলের মাধ্যমে দলকে বিপথগামী করে এবং প্রলোবনের মাধ্যমে আগামী জাতীয় নির্বাচনের জে.এস.এস এর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে চলছে।
১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে অগ্রণী ভূমিকা রাখার নায়ক মোঃ আবদুল বারেক সরকার, মোঃ আবদুর রহিম চেয়ারম্যান, রফিক চৌধুরী, রফিক তালুদার, খোরশেদ চেয়ারম্যান, আমজাদ হোসেন, সুবেদার ফারুক খান, সুরুজ চৌধুরী, লস্কর মেম্বার, নুর মোহাম্মদ মেকার, আজগর আলী, জান্টু চৌধুরী, জানে আলম, সুভাষ চন্দ্র দাশ ও নাম বলা আরো অনেকে রয়েছে। বারেক সরকার ও রহিমের হাত ধরেই ১৯৯৬সাল থেকে ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগকে আজকের সুদৃঢ় অবস্থানে এসেছে। গত জাতীয় নির্বাচনে আবদুল বারেক সরকারের নেতৃত্বে লংগদু উপজেলায় নৌকা প্রতীকে ৩৫ হাজার ভোট অর্জন করেন। জননেতা দীপংকর তালুকদার লংগদু উপজেলা আওয়ামী লীগ এর কাছে ২৫ হাজার ভোট প্রত্যাশা করেছিলেন। রহিম-বারেক যাদেরকে হাত ধরিয়ে ধরিয়ে রাজনীতির দীক্ষা দিয়েছিলেন। তারাই আজ আওয়ামী লীগ ভাঙ্গণের ভূমিকা রেখে চলছে বাবুল দাশ বাবু ও বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে আগত হাইব্রীড নেতাদের নিয়ে।
আপনারা জেনে অবাক হবেন, ১৯৯৬,২০০১,২০০৮,২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে পর লংগদু উপজেলা আওয়ামী লীগ আর আওয়ামী লীগের পর্যায়ে নেই। লংগদু উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এখন তারেক জিয়ার দল বিএনপি নেতৃবৃন্দের হাতে। কি করে বিশ্বাস করা যায়!!! শিপু, রিপন, জিয়া, বিল্লাল এর মত বিএনপি ও জামাতের নেতাদের দিয়ে লংগদু উপজেলা আওয়ামী লীগ পরিচালনা করবেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক আওয়ামী লীগ কর্মীরা তা মেনে নেবে? তাদের আদেশ-নির্দেশ পালন করবে? তা হতে পারে না!!। লংগদু উপজেলা আওয়ামী লীগের মুল ধারার লোকদের বাদ দিয়ে জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন প্রতিকুলতা পার করা বিএনপি পন্থি হাইব্রীড আওয়ামী লীগ দিয়ে কখনো সম্ভব না।
গত ০৭/১১/২০২২ইং তারিখে মাইনীমুখ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ এর সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন বাবুল দাশ বাবুল কুট-কৌশলে উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল বারেক সরকারকে দলীয় শৃংখলা ভঙ্গ করে রাস্তায় অপমান অপদস্থ করে। আবদুল বারেক সরকার ২০০১ সাল থেকে ২০২২সালে অব্যাহতি প্রদানের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত লংগদু উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ছিলেন। ১৯৯৬,২০০১,২০০৮,২০১৪ ও ২০১৮ ৫টি জাতীয় জাতীয় নির্বাচনে যার ভূমিকা অবিস্বরণীয়। সেই বারেক সরকারকে বাবুল দাশ বাবুর প্ররোচনায় ও প্রতারণায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কমিটিকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিতভাবে অপমান করেন। ২০০১ সাল থেকে ২০২২সালে পর্যন্ত দীর্ঘদিনের সভাপতি, অপরদিকে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মনোনীত ও নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে সম্মান হানি করা হয়েছে, আমরা তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সাথে সাথে এধরণের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা আওয়ামী লীগের কাছে আহবান জানাচ্ছি। এধরণের ঘটনা যদি চলতে থাকে ভবিষ্যতে বারেক, রহিমের মত উদারপন্থি নেতৃত্ব তৈরী হবেনা লংগদুতে।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, বারেক সরকার ও আবদুর রহিমের নেতৃত্ব একদিনে গড়ে উঠেনি। তাই দলীয় স্বার্থে লংগদু উপজেলা আওয়ামী লীগ এর সার্বিক পরিস্থিতি ও প্রতিকূলতা জেলা কমিটির কাছে বিবেকের চিন্তায় দাঁড় করালাম। লংগদু উপজেলা আওয়ামী লীগ আজ দুটি ভাগে বিভক্ত। তাই দলীয় নেতা-কর্মীর বায়োডাটা অনুসন্ধান করে দেখুন কার কি ভূমিকা। জেলা নেতৃবৃন্দ যদি মনে করেন, বিএনপি ও জামাত থেকে আগত শিপু, রিপন, জিয়া, বিল্লালদেরমত লোক দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সংগঠন চালাবেন তাহলে আমাদের কিছু বলার নেই।
তাই এসকল কোন্দল নিরসন না হলে বিগত নির্বাচনের মত ফলাফলের ধারাবাহিকতা লংগদু উপজেলায় ধরে রাখা হয়তো সম্ভব হবে না। সংগঠনে যে তান্ডব, কাঁধা ছোড়া-ছুড়ি, সম্মান হানি করা হচ্ছে তা নিরসনের জন্য উপযুক্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জেলা নেতৃবৃন্দের প্রতি বিনয়ের সাথে অনুরোধ জানাচ্ছি।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, গত ফেব্রুয়ারী-২০২২ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৫টি জাতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করা আবদুল বারেক সরকার ও আবদুর রহিম চেয়ারম্যান এর মত অসংখ্য নেতৃত্বদানকারী প্রবীন ব্যক্তিদের সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এরা তো দলের প্রতীকে নির্বাচনই করেছিলেন। এরা নৌকা প্রতীকের নির্বাচনে যুক্ত না হলে লংগদু উপজেলায় ৭টি ইউনিয়নের কোনটিতেই নৌকা প্রতীক এর বিজয় সম্ভব ছিল না। আবদুল বারেক সরকারকে অব্যাহতি দেয়ার পর গঠনতন্ত্র ও সাংগঠনিক নিয়ম অনুসরণ না করে ৩নং সহ-সভাপতি মোঃ শহিদুর রহমান সাগরকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব না দিয়ে ৯নং সহ-সভাপতি মোঃ সেলিমকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়। মোঃ সেলিম তিনি ৬নং মাইনীমুখ ইউনিয়ন পরিষদের উপ-নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে গিয়ে নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে উপ-নির্বাচনের অংশগ্রহণ করেন এবং পরাজিত হন। যে কর্মী দলের ও দলীয় প্রতীকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে তিনি কিভাবে দলের সিনিয়র ৭ জন সহ-সভাপতিকে টপকিয়ে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হয় তা আমাদের বোধগম্য নহে।
তাই তৃণমূল নেতৃবৃন্দরা বলেন, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে বিভাজন সৃষ্টি করে ঐক্য ভাঙ্গন ধরিয়ে দলকে দূর্বল করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করতে জেলা আওয়ামীলীগকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া এবং লংগদু উপজেলার সকল ইউনিয়নের অঙ্গ সংগঠন ও সহযোগি সংগঠনের তৃণমুল পর্যায়ে সকল নিবেদিত ও ত্যাগি নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করার স্বার্থে এবং লংগদু উপজেলা আওয়ামী লীগের মুল কা-ারী হিসাবে পরিচিত ব্যক্তিদের প্রদানকৃত অব্যাহতিপত্র প্রত্যাহারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আহবান জানানো হয়। তা না হলে আগামী নির্বাচনে লংগদু আওয়ামী লীগের কাঙ্খিত বিজয় অর্জন করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তৃণমূল নেত্রীবৃন্দরা।