রাজশাহীর তানোরে সেচ পাম্পের ট্রান্সফর্মা ও শ্যলোমেশিন চুরির হিড়িক পড়েছে। সেইসঙ্গে চলছে দোকান ঘরে চুরি-ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা। ফলে জিনিসপত্রের নিরাপত্তা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ী ও সাধারণ কৃষক। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১ মাসের ব্যবধানে বেশ কয়েকটি বিএমডিএর গভীর নলকূপ এবং ব্যক্তি মালিকানা সেচ পাম্প বা অগভীর নলকূপের তার ও ট্রান্সফর্মা চুরির ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া হাট বাজারে ও বিভিন্ন অফিসে দিনে দুপুরে মানুষের ব্যবহৃত মোবাইল সেট ছিনতাই ও খুইয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। মূলত থানা পুলিশের নিরবতা, নিষ্ক্রীয়তা ও উদাসিনতায় আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে এলাকার চিহ্নিত চুরি ছিনতায় সিন্ডিকেট।
সম্প্রতি নেচকোর বিদুৎ সংযোগ থেকে বুধবার দিবাগত রাতে তানোর উপজেলার মথুরাপুর এলাকার সেচ পাম্পের ট্রান্সফর্মা চুরি হয়। এছাড়াও পাঁচন্দর ইউপির কুন্দাইন মৌজায় অবস্থিত বিএমডিএর গভীর নলকূপের ট্রান্সফর্মা ও তার চুরি হয়। শুধু ওই এলাকা থেকে নয় কামারগাঁ ইউপি ও তানোর পৌর এলাকার বিল কুমারী বিলের এবং খালের ধার থেকে ৬টি সেচ সুবিধায় ব্যবহৃত শ্যালোমেশিন গেলো রোববার রাতে চুরি হয়। এসব ঘটনা নিয়ে থানায় সাধারণ ডায়রি করা হয়েছে বলে ভুক্তভোগেী সূত্রে চিশ্চিত হওয়া গেছে। কিন্তু ওসি বলছেন এসব চুরি ব্যাপারে থানা পুলিশ অবগত নয়।
উপজেলার কুন্দাইন মৌজায় অবস্থিত বিএমডিএর গভীর নলকূপ অপারেট বেলাল উদ্দিন বলেন, এখন পুরো দমে শুরু হবে আলুর জমিতে সেচ প্রক্রিয়া। হঠাৎ সেচ যন্ত্রের তার ও ট্রান্সফর্মা চুরি হওয়ায় বিপাকে পড়েছে কৃষক। তিনি আরও জানান, শুধু তার নয়। বেশ কয়েকটি এলাকায় ট্রান্সফর্মা চুরির হিড়িক পড়েছে। এ ব্যাপারে সবাই থানায় লিখিত ভাবে অবহিত করেছে। তবে, সময়মত ট্রান্সফর্মা পাওয়া না গেলে ক্ষতিগ্রস্থ হবে চাষিরা। একই ধরণের কথা বলেন, সুমাসপুর ও হরিপুরবাসীরা।
এরআগে গত অক্টোবর থেকে পর্যায়ক্রমে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ১৫টি ট্রান্সফর্মা চুরি হয়। এসব ট্রান্সফর্মা বিএমডিএর গভীর নলকূপ ও সেচ পাম্পে পল্লীবিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। কিন্তু এত ট্রান্সফর্মা চুরি গেলেও কোন রহস্য উদঘাটন করতে পারেননি কেউ। অজ্ঞাত কারণে আইন-শৃঙ্খলা-বাহিনীও চুরির উদঘাটন ছাড়াই নিরব ও উদাসীন রয়েছে। এতে উপজেলাজুড়ে কৃষক ও গভীর নলকূপ অপরেটরদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
জানা গেছে, বিল কুমারি বিল বা খাল সংলগ্ন জমিতে চাষীরা বোরো চাষের জন্য বীজতলা তৈরি করেছেন বা করছেন। পানি সেচের শেলোমেশিনই তাদের ভরসা। এজন্য তালন্দ হরিদেবপুর সুমাসপুর গ্রামের উত্তরে রয়েছে খাল। সেই খাল সংলগ্ন বিলের জমিতে বোরো বীজতলা তৈরিতে পানি সেচের জন্য শেলোমেশিন রাখা হয়েছিল। ৬টির মত শেলোমেশিন রাতেই চুরি হয়ে যায়।
এঘটনায় তানোর পৌর এলাকার তালন্দ হরিদেবপুর গ্রামের করিম মৃধা পরদিন থানা পুলিশকে অবগত করেন। তিনি জানান, তাঁর ২টি, হাফিজের ২টি, মেয়র ইমরুল হকের ১টি ও অন্য একব্যক্তির ১টি সেচ ব্যবহৃত শেলোমেশিন খালের ধারে ছিল। সেচ দেবার পর সেখানেই রাখা হয়েছিল। পরদিন সেচেরর জন্য। কিন্তু রোববার রাতেই একসাথে ৫টি শ্যালোমেশিন চুরি হয়ে যায়। আর গেলো বুধবার দিবাগত রাতে ১টি মেশিন চুরি হয়ে গেছে।
এসব চুরির ঘটনার পর থেকে এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। আর কৃষকরা জীবতলা নিয়ে চরম দু:শ্চিন্তায় পড়েছেন। ফলে চোরদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আশার জন্য জোরালো দাবি তুলেছেন ভুক্তভোগিরা।
এব্যাপারে বিএমডিএর তানোর জোনের সহকারী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, ট্রান্সফর্মা চুরি ব্যাপারে প্রতিটি গভীর নলকূপের অপরেটদের সতর্ক করে থানায় অবগত করতে বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কৃষকের কথা বিবেচনা করে ট্রান্সফর্মা চুরি হওয়া বিকল গভীর নলকূপ স্বচল করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এবিষয়ে মোবাইলে তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামরুজ্জামান মিয়া বলেন, সেচ পাম্পের ট্রান্সফর্মা ও শ্যলোমেশিন চুরি ব্যাপারে কোন তথ্য নেই বলে মোবাইল সংযোগ বিছিন্ন করেন ওসি।