সারাদেশ এখন ডেঙ্গু আক্রান্ত। উত্তরবঙ্গের দু’ জেলা গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলায় এখন পর্যন্ত কোনো ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় নি। এ ছাড়া দেশের ৬৪ টি জেলার সব জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হবার খবর পাওয়া গেছে। সাধারণত বর্ষা মৌসুমে অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে ডেঙ্গুর তীব্র প্রকোপ দেখা যায়। কিন্তু এ বছর অক্টোবর পেরিয়ে মধ্য নভেম্বর এডিস মশা বাহিত এ রোগে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, বাড়ছে মৃত্যু। মূলত: অক্টোবরের শেষ দিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে প্রবল বৃষ্টি হয়েছে এ বছর। তাই মশার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। ফলে ডেঙ্গু আক্রান্তও বেড়েছে। ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৯ হাজার ৯১২ জন ডেঙ্গু রোগী। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৩২ হাজার ৫৩৫ জন রোগী ভর্তি আছেন। আর ঢাকার বাইরে আছেন ১৭ হাজার ৪৫৭ জন। অন্যদিকে চলতি বছর ডেঙ্গুতে ২১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর এ বছর ৩ নভেম্বর একদিনে সর্বোচ্চ ন’জনের মৃত্যু হয়েছে।
বাংলাদেশে ২০০০ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিয়েছিল। এরপর আর কোনো বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা ২০০ ছাড়ায় নি। সর্বশেষ গত ১৫ নভেম্বর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আটজনের মৃত্যু হয়েছে।এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে ২১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০০০ সালে শুরু হওয়া ডেঙ্গুর প্রকোপের পর ২০১৯ সালে পরিস্থিতি খুব খারাপ হয়। ওই বছর মোট ১৭৯ জন ডেঙ্গুতে মারা যান। করোনা মহামারির বছর ২০২০ সালে মারা যান ৭ জন। পরের বছর মারা যান ১০৫ জন। চলতি বছর নভেম্বর মাসের ১৫ দিনে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৭২ জন। আর এ সময় আক্রান্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৯৬৮ জন। ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি। সংগত কারণে মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি। এ বিভাগে ১২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন হাসপাতালে। ঢাকার পর সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে। এ বিভাগে এখন পর্যন্ত ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২৪ জন মারা গেছেন কক্সবাজারে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরন ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩, ডেন-৪। একটি ধরনে একবার আক্রান্ত হলে মানুষের শরীরে সেই ধরনটির প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। ফলে দ্বিতীয়বার সেই ধরনের আক্রান্ত হয় না। তবে বাকি তিনটি ধরন থেকে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি থাকে। অন্যদিকে কোনো ব্যক্তি প্রথম বার একটি ধরন দিয়ে আক্রান্ত হলে দ্বিতীয় বার যদি অন্য ধরন দিয়ে আক্রান্ত হন ,তবে ওই ব্যক্তির জটিলতা বাড়ে।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আটকে থাকা পানি সরিয়ে ফেলার জন্য নানা প্রচারণা চলছে। রাজধানীতে দু’সিটি করর্পোরেশন মশা মারার ওষুধ ছিটাবার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু কার্যত: অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে না। এখন ডেঙ্গু শুধু শহরে নয়, গ্রামেও হানা দিয়েছে। তাই মশার প্রজনন ক্ষেত্র জমে থাকা পানি সরিয়ে ফেলতে হবে নিজেদের উদ্যোগেই। নিজেদের নিরাপত্তা নিজেদেরই গ্রহণ করতে হবে। অন্যদিকে সিটি করর্পোরেশনের উচিত সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করে মশা নিধর করে জনগণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। শুধু কথায় নয়, কাজে প্রমাণ করতে হবে ডেঙ্গু বাহিত এডিস মশা ধ্বংসে তারা আন্তরিক।