নানাবিধ সমস্যা নিয়ে রাজধানী ঢাকার মানুষের বসবাস। এ থেকে যেন বের হবার পথ নেই। এর মধ্যে ঢাকার যানজট মানুষের পথ চলার গতি স্তিমিত করে ফেলেছে। যানজটে আটকে শুধু কর্মঘন্টাই নষ্ট হচ্ছে না, এর প্রভাব জীবন যাত্রার অন্যান্য ক্ষেত্রেও পড়ছে। যানজটের কারণে গাড়ি আটকে থাকার কারণে গাড়ির জ্বালানি খরচ বেড়ে গেছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় তিন গুন। এ জ্বালানি দিয়ে দেশের অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন বাড়িয়ে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করা সম্ভব। অথচ দেশের প্রাকৃতিক গ্যাস ফুরিয়ে আসছে বলে গ্যাস সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যা দেশের জন্য ক্ষতিকর। শুধু তাই নয়, স্কুলে যাওয়া আসা করা শিশুরা যানজটে আটকে গাড়ির ধোয়ার কারণে নানা শ্বাসকষ্টে ভুগছে। মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিনোদন বা খেলাধুলায় অনীহা সৃষ্টি হচ্ছে। গাড়ির ইঞ্জিন চালু থাকায় নগরীর বায়ু দূষণ হচ্ছে।ফলে অ্যাজমা, হাঁপানিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নগরবাসী। দীর্ঘক্ষণ যানজটে পা গুটিয়ে গাড়ির মধ্যে বসে থাকার কারণে হাঁটু, কমর ও মেরুদণ্ডের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
ঢাকার যানজটের ভোগান্তির কথা এখন দেশের মানুষ নয়, আন্তর্জাতিক ভাবেও ব্যাপক আলোচিত। ফলে বিদেশিরা পর্যটনের জন্য ঢাকায় আসতে চান না। যারাও কাজের কারণে আসেন, তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঢাকা ছাড়তে চান। ফলে পর্যটন ও ব্যবসার কাজে বিদেশিরা ঢাকায় আসতে না চাওয়ায় দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বিদেশে অবস্থান করা বাংলাদেশি যারা দেশে বিনিয়োগ করেন না। অন্যদিকে তরুণ প্রজন্ম বিদেশে লেখাপড়া বা ব্যবসা চাকুরীর কারণে বিদেশে অবস্থান করেন, তারাও যানজটের কথা বিবেচনা করে বিদেশে সেটেল হতে চান। ফলে দেশ তরুণ মেধা হারাচ্ছে।
যানজটের কারণে দীঘ সময় বসে থাকায় মানুষের শরীরে ক্লান্তি বাসা বাধে। যানজটে বসে থেকে গাড়ির ইঞ্জিনের উত্তাপ ও গাড়ির ধোঁয়া সার্বিক ভাবে নগরীর তাপ মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে মানুষ এয়ারকন্ডিশন ও ফ্যান চালাতে বাধ্য হচ্ছে। অতি-গরমে দ্রুত খাবার পচে যায় বলে ফ্রিজ ব্যবহার অনেক বেড়েছে। এভাবে বসতবাড়িতে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহারের ফলে শিল্পকারখানায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কমে যাচ্ছে। কারখানা চালু রাখতে জেনারেটর ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন উৎপাদন খরচ বাড়ছে, অন্যদিকে জেনারেটরের ইঞ্জিনের কারণে গরম নগরীতে ছড়িয়ে পড়ছে।
কাজেই যানজটের কারণে ঢাকাবাসীর জীবনে যেমন সময়ের সদ্ব্যবহার করতে পাড়ছে না। তেমনি দেশের অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব পড়ছে। কিন্তু এসব বিবেচনা করে নগরীর যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যত তেমন ব্যবস্থা গ্রহণ চোখে পড়ছে না। ট্রাফিক সিস্টেম ও আইন মেনে গাড়ি চালালেই শুধু যানজট কমবে না। এজন্য প্রয়োজনীয় রাস্তা প্রশস্ত করতে হবে। দেশে অনেক বড় বড় মেগা প্রজেক্টের কাজ চলছে। কিন্তু রাস্তা প্রশস্ত করে বা নতুন গাড়ি না নামাবার কোনো সিদ্ধান্ত চোখে পড়ছে না। কাজেই যানজট নিয়ন্ত্রণে এখনই সরকারকে ভাবতে হবে, নিতে হবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ। কর্মক্ষেত্রে যেতে সময় বাঁচলে কাজও করা সম্ভব হবে দ্বিগুণ।