নানামুখী সংকটে রয়েছে বিশ্ব। এর মধ্যে খাবারের অভাব এবং পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আগামী বছর বিশ্বে ক্ষুধার্ত ও পুষ্টিহীন মানুষের সংখ্যা বাড়বে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সাম্প্রতিক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে, এ তথ্য প্রায় এক বছর আগের। এরপর গত এক বছরে বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দামে অস্থিরতা চলমান রয়েছে। মহামারি ও অন্যান্য কারণে গত কয়েক বছরে বিশ্বে অভুক্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এ সংকট আরও তীব্র হয়েছে। এ যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে এবং সরবরাহে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়নে আমাদের দেশে বেড়েছে খাদ্যপণ্যের দাম। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশসহ অনেক দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ডাবল ডিজিট অতিক্রম করতে পারে। বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়, দেশটিতে খাদ্যের দাম বাড়ছে এবং ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। এতে বেড়ে যাচ্ছে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার। আগামীতে আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে। বাংলাদেশ খাদ্য আমদানি করে বলে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আমাদের দেশে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে বিশেষভাবে ভাবতে হবে। বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়ে আগামী দিনগুলোতে বড় কোনো ঝুঁকির আশঙ্কা নেই। তবে দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষের পুষ্টিকর খাবার কেনার সামর্থ্য নেই, এটিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নিতে হবে। বিভিন্ন দেশে খাদ্যোৎপাদন কম হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও কৃষি উপকরণের সংকট খাদ্য উৎপাদনে প্রভাব ফেলেছে। বৈশ্বিকভাবে খাদ্য সংকট দেখা দেওয়ায় ২৫টি দেশ খাদ্য রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে; ২০টি দেশ ২৪ ধরনের খাদ্য রপ্তানি বন্ধ করেছে। খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় বিশ্বে বাড়বে ক্ষুধার্ত ও পুষ্টিহীন মানুষের সংখ্যা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপে গ্যাসের সরবরাহ কমেছে। এতে সার উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে কৃষি উপকরণের দাম। এতে কৃষি উৎপাদনের খরচ বেড়েছে। এর প্রভাবে উৎপাদন কমে যাবে। উৎপাদন কমলে দাম বাড়বে, যা খাদ্য মূল্যস্ফীতির হারকে উসকে দেবে। আমাদের খাদ্যপণ্যে আমদানিনির্ভরতা কাটানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের জমি উর্বর। যথাযথ পদক্ষেপ নিলে খাদ্যপণ্যে আমাদের স্বয়ংসর্ম্পূতা অর্জন করা সম্ভব। দেশে চাষযোগ্য জমির উল্লখযোগ্য অংশ এখনো চাষের আওতার বাইরে; উল্লেখযোগ্য অংশ জমিতে বছরে মাত্র একটি ফসল ফলানো হয়। কখনো কখনো কৃষক ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হন। এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সরকার অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। খাদ্য সহায়তার আওতায় চাল, চিনি, ভোজ্যতেলের পাশাপাশি অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার দেওয়াও জরুরি। একই সঙ্গে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের দেশের কৃষি খাত বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লবণাক্ততার কারণে দেশের উপকূলীয় এলাকায় মানুষ বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় শস্যের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের পাশাপাশি কৃষি উপকরণের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি দেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণেও সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।