উন্নয়ন প্রকল্পে বিভিন্ন পণ্যের অতিরিক্ত দাম ধরা বন্ধ হচ্ছে না। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে পণ্যের অতিরিক্ত দাম নির্ধারণ এবং ভুল প্রস্তাবের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের কেন শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে না-এটা এক বড় প্রশ্ন। ইতঃপূর্বে একটি প্রকল্প প্রস্তাবে একেকটি বালিশের দাম ২৭ হাজার টাকা ও বালিশ কাভারের দাম ২৮ হাজার টাকা ধরা হয়েছিল। অন্য একটি প্রকল্পে একজন ক্লিনারের মাসিক বেতন ধরা হয়েছিল ৪ লাখ টাকা। আরেকটি প্রকল্পে একটি স্যালাইন স্ট্যান্ডের দাম ধরা হয়েছিল ৬০ হাজার টাকা। অভিযোগ রয়েছে, এসব ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ নির্বিকার থাকায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে, যা মোটেই কাম্য নয়। বিষয়টি মাঝেমধ্যে পরিকল্পনা কমিশনের বৈঠকে চিহ্নিত হলেও বেশিরভাগ সময় তা নানা ফাঁকফোকর গলিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে। প্রকল্পে অতিরিক্ত ব্যয়ের প্রস্তাব অবশ্যই অপরাধ। মূলত এটি দুর্নীতি করার সূক্ষ্ম কৌশল। আমরা মনে করি, এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা উচিত। উন্নয়ন প্রকল্পে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে ধরার পেছনে পরবর্তী সময়ে দুর্নীতির মাধ্যমে নিজেদের সম্পদ বাড়ানোর অসৎ অভিপ্রায় বা উদ্দেশ্য থাকে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কাজেই উন্নয়ন প্রকল্পে মাত্রাতিরিক্ত বা অপ্রয়োজনীয় ব্যয় প্রস্তাবকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপসহ জবাবদিহিতার ব্যবস্থা থাকা জরুরি। ইতঃপূর্বে ‘পুকুর ও খাল উন্নয়ন’ বিষয়ক প্রশিক্ষণ ছাড়াও ঘাসচাষ ও ঘাসকাটা শিখতে কর্মকর্তাদের বিদেশ যাওয়ার ছক সাজানোর কথা গণমাধ্যমে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে সেসময় জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও লক্ষ করা গেছে। কাজেই প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। করোনা-পরবর্তী বৈশ্বিক সংকটের প্রভাবে রাজস্ব আদায়ের গতি শ্লথ হওয়া এবং সরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসী ব্যয় সংকোচনের পথে হাঁটছে সরকার। এ অবস্থায় প্রকল্প বাস্তবায়নের আড়ালে কেউ যাতে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের সুযোগ না পায়, সেদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। দেশে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ থেকে বাস্তবায়নের নানা পর্যায়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। আশঙ্কার বিষয় হলো, প্রকল্পকেন্দ্রিক অনিয়মের পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ দেশের প্রায় সর্বত্রই দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। এর মূলোৎপাটন করতে হলে আইনের যথাযথ প্রয়োগের পাশাপাশি নাগরিকদের মধ্যে ন্যায়-নীতিবোধ, সততা ও দেশপ্রেম জাগ্রত করার পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে এ ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির তালিকা দীর্ঘতর হতে থাকবে। আমরা মনে করি, সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল সম্ভব নয়। আর এজন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক অঙ্গীকার। একইসঙ্গে জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) শক্তিশালী ও কার্যকর করা প্রয়োজন। দেশের মানুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণে আগ্রহী, এতে কোনো সন্দেহ নেই। মানুষের এ আগ্রহ কাজে লাগিয়ে উন্নয়ন প্রকল্পসহ সব ক্ষেত্রে বিরাজমান দুর্নীতি নির্মূলে সরকারকে কঠোর হতে হবে।