স্কুল ছাত্রী ধর্ষনের মামলায় জেলার লংগদু উপজেলার করল্যাছড়ি আর এস উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আবদুর রহিমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০লক্ষ টাকা জরিমানা করেছে রাঙ্গামাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এই এম ইসমাইল হোসেন মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ রায় প্রদান করেন।
আদালতে রায়ের বিচারক এই এম ইসমাইল হোসেন বলেন, আসামি করল্যাছড়ি আর,এস উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রহিম বিদ্যালয়ের ছাত্র বাসের ভিতরে তার ছাত্রী ভিকটিমকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছেন মর্মে রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। আসামি উক্তরূপ কার্য দ্বারা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় আসামি মোঃ আবদুর রহিমকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯ (১) ধারা মোতাবেক যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং অতিরিক্ত ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রাজীব চাকমা আদালতের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, রাঙ্গামাটির জন্য একটি যুগান্তকারীরায় এই রায়ে আমরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করছি। আশা করছি এই রায়ের ফলে ভবিষ্যতে এই ধরনের অপরাধী কার্যক্রম কমে আসবে এবং এই রায় কার্যকর হবে।
আসামী পক্ষের আইনজীবী বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোক্তার আহমেদ বলেন, এই রায়ে আমরা ন্যায় বিচার পায়নি। আমরা উচ্চ আদালতে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবো। আমাদের বিশ্বাস উচ্চ আদালত ন্যায় বিচার করবে এবং আমরা আশা করছি আপিলে আসামি নির্দোষ খালাস হবে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি সাইফুল ইসলাম অভি বলেন, রায়ে আমরা খুবই সন্তুষ্ট, আসামীকে দোষী সাবস্ত হওয়ায় আদালত আসামি জাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ লক্ষ টাকা অর্থ দন্ড প্রদান করেছেন।
উল্লেখ্য, গত ২৫ সেপ্টম্বর ২০২০ তারিখে ভিকমিটকে আসামি জোর পূর্বক লংগদু উপজেলার করল্যাছড়ি আর এস উচ্চবিদ্যালয়ের কক্ষে ধর্ষণ করে। ধর্ষণ শেষে আসামি এই ঘটনা কাউকে না জানানোর জন্য ভিকটিমকে হুমকী দিয়ে তাকে ছেড়ে দেন। তখন করোনা প্রাদুর্ভাব থাকায় স্কুল বন্ধ থাকায় স্কুলের ছাত্রবাসে কোন ছাত্র ছিল না। ভিকটিম ভয়ে এই ঘটনা কাউকে প্রকাশ করেনি। দুদিন পর ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে তার শারিরক অবস্থা খারাপ হলে তার মাকে বিষয়টি জানান। পরে তার মা বিষয়টি স্থানীয় কার্বারী বীর মোহন চাকমা, ইউপি চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি মঙ্গল কান্তি চাকমাকে অবহিত করেন। বিষয়টি তারা দেখবেন বললেও ৯ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর গত ৫ অক্টোবর ২০২০ লংগদু থানায় মামলা দায়ের করেন ভিকটিমের মা।
পরে লংগদু থানার পুলিশ পরিদর্শক সুজন হালদার ও পুলিশ পরিদর্শক মোঃ জাকির হোসেন তদন্ত শেষে গত ২৮ অক্টোবর আসামীর রিরুদ্ধে ধর্ষণের ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা থাকায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯ (১) ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
পরে রাষ্ট্রপক্ষ এহাজারকারী ভিকটিমের ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্নকারী দুইজন চিকিৎসক, তদন্তকারী কর্মকর্তা ও স্থানীয় স্বাক্ষী বীর মোহান কার্বারী ও ইউপি চেয়ারম্যান মঙ্গল কান্তি চাকমাসহ মোট ১৩ জনের স্বাক্ষী উপস্থাপন করেন। অন্যদিকে আসামি পক্ষ আসামীসহ মোট ৬ জনের স্বাক্ষী উপসস্থাপন করেন।