ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা সদর ইউনিয়নের বিএস ডাঙ্গী গ্রামের মৃত শফিউদ্দিন খালাসীর ছেলে ম্ঃো রেজাউল হায়াত ওরফে শীপু খালাসী (৪৫) পদ্মা চরের প্রায় ৩শ’ একর ফসলী জমি গত চার বছর ধরে জবর দখল করে রেখেছে বলে অভিযোগ করে চলেছেন দুস্থ কৃষকরা। উপজেলা সদর ইউনিয়নের মাথাভাঙ্গা গ্রামে পদ্মা পার এলাকার বিস্তৃর্ণ ফসলী মাঠ দখল করে রেখেছেন ওই প্রভাবশালী দখলদার। এতে ওই এলাকার ২৮টি কৃষক পরিবার তাদর ন্যায্য হিংস্যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ।
মঙ্গলবার দুপুরে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা বেদখলীয় ফসলী মাঠের উপর দাঁড়িয়ে তাদের জমি ফিরে পাওয়ার দাবী নিয়ে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক নিজেদের বেদখলীয় জমির দলিল পত্রাদি উঁচু করে হাতে হাত ধরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। এ মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় বিশিষ্ট সমাজ সেবক মোঃ নজরুল ইসলাম শিকদার। “ভুমিহীনের জমি ফিরিয়ে দাও, দখলদারের কবল থেকে বাঁচাও” এ স্লোগান নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচীতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক, আমানুল্লাহ আমান, আনছার ফকির, হাবিবুর রহমান শিকদার, মহসিন মৃধা ও ফরহাদ হোসেন খান প্রমূখ। মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী অফিসারের কাছে স্মারকলিপি পেশ করেন কৃষকরা। এ ব্যাপারে দখলদার ম্ঃো রেজাউল হায়াত ওরফে শীপু খালাসী জানায়, “ চরাঞ্চলের অনাবাদী জমি আমি আবাদযোগ্য করে চাষাবাদ করছি। একজন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান হিসেবে অনাবাদি খাস জমিতে ফসল ফলিয়ে দেশের খাদ্য অভাব কিছুটা হলেও আমি পুরন করছি”।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা জানায়, দখলদার ম্ঃো রেজাউল হায়াত ওরফে শীপু খালাসী মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। এই সুবাদে আ.লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রভাব প্রতিপত্তি ও পেশী শক্তির জোরে সে চরাঞ্চলের দুস্থ কৃষকদের জমিগুলো দখল করতে থাকে। দখলদার রাতের পর রাত বড় বড় ট্রাক্টর লাগিয়ে চরাঞ্চলের প্রায় ৩শ’ একর কৃষি জমি আবাদে নিয়ে নেয়। কৃষকরা তাদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার আকুতী জানালে দখলদার ক্ষমতার জোর দেখিয়ে এবং স্থানীয় বখাটে গ্রুপ দিয়ে কৃষকদের হুমকী দিতে থাকে। চলতি বছরের প্রথমদিকে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা চরভদ্রাসন থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ দখলদারের কোনো স্বত্ত খুজে পায় নাই। এ ব্যপারে চরভদ্রাসন থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করা হয়। জিডি নং-২৩৪, তাং-৭/০১/২০২২খ্রি.। এ ছাড়া দখলদার শীপু খালাসী চরাঞ্চলের শত শত বিঘাত জমি দখল করেছে মর্মে তাকে ভুমিদস্যু হিসেবে উল্লেখ করে চরভদ্রাসন থানা ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কাছে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। চরভদ্রাসন থানার প্রতিবেদন নং-৭৮, তাং-০৮/০১/২০২২খ্রি.। কৃষকরা জানায়, তার পরও শীপু খালাসী চরাঞ্চলের জমি দখল দারিত্বর রাজত্ব কায়েম করেছেন।
চরভদ্রাসন থানার প্রতিবেদনে উল্লেখ ম্ঃো রেজাউল হায়াত ওরফে শীপু খালাসীর দখলকৃত জমিগুলো হলো-উক্ত চরের কৃষক জনৈক ফারুক হোসেন মৃধার ৫০ বিঘাত জমি, আমানুল্লাহর ৩২ বিঘাত, শেখ আবুল কাশেম ও পরশ মৃধার ৫০ বিঘাত, মহসিন মৃধার ৩০ বিঘাত, ইদ্রিস তালুকদার ও রেজাউল তালুকদারের ৬৫ বিঘাত, নারায়ন মজুমদারের ৪০ বিঘাত, আবদুস ছাত্তার ১০ বিঘাত, ফকির মৃধার ৫০ বিঘাত, তোফাজ্জেল মৃধার ৩০ বিঘাত, হবি শিকদারের ১১ বিঘাত, আবদুল কাদের ৯ বিঘাত, ফেরদৌস মৃধার ৮০ বিঘাত, শাহীনুজ্জামান ১৪ বিঘাত, আবদুল করিম খান ৮ বিধা, বাবুল মোল্যা ১১ বিঘা, ওহাব মোল্যা ১৬ বিঘা, রহমত উল্লাহর ১৪ বিঘাত, আশুতোষ টিকাদার ১০ বিঘাত, মোঃ হাসানুজ্জামান ৭০ বিঘাত, মোঃ আরিফ হোসেন ৪০ বিঘাত, আবুল কালাম মৃধা ৬০ বিঘাত, আনছার আলী মোল্যা ৬০ বিঘাত, আবদুর রহিম খান ১০ বিঘাত, সেন্টু শিকদার ১০ বিঘাত, মোতালেব মৃধা ৬ বিঘা ও খোরশেদ মোল্যার ১১ বিঘাত জমি সহ বিশাল চরের বিস্তৃর্ন ফসলী মাঠ দখল করে রেখেছেন শীপু খালাসী। এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) খাইরুল ইসলাম বলেন, “ওই চরে দখলদার শীপু খালাসীর কোনো কাগজপত্র নাই। জমিগুলো একসময় ভেঙে যাওয়ার পর বেশ কয়েক বছর ধরে আবার জেগে ওঠেছে বিধায় নদী সিকস্তী জমি। আমসরা এখনো কাউকে বন্দোবস্ত দেই নাই। তবে জমির আদি মালিকরা সরকারি বন্দোবস্ত প্রাপ্তীর অগ্রাধিকার রাখেন”।