দু;চোখ নেই,এর পরেও কয়লা দিয়ে বালালী বাঘমারা বাজারে দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে আয়রনের(ইস্ত্রি) কাজ করে যা”েছন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নন্দন রবিদাস ৬০। আয়রণ করেই চালান তিনি সংসার। ১৯৯০ সালে মাথা,দাঁতের ব্যথা,চোখে চানি থেকেই দৃষ্টি হারান তিনি। নেত্রকোনার মদন উপজেলার দক্ষিণ বালালী গ্রামের মৃত শিবু রবিদাসের ছেলে নন্দন রবি দাস। বড় মেয়ে মন্টিরানীকে বিয়ে দিলেও সংসারে স্ত্রী আরতি দেবীসহ দুই ছেলে ও আর এক মেয়ে রয়েছে তার। একমাত্র ভিটাবাড়ি ছাড়া আর কিছু নেই তার। সংসারের আয় রোজ গারের একমাত্র ভরসা তিনি। তবে ছেলে অনুকূল রবিদাস বাবাকে সামান্য সহযোগিতা করার জন্য মাঝে মধ্যে বাবার পাশের আয়রনের দোকানের একপাশে নরসুন্দার কাজ করে থাকে। নন্দন রবিদাসের বাড়ির পাশেই বালালী বাঘমারা বাজার। এ বাজারেই তিনি আয়রনের কাজ করেন। বাজারে আসা ও নিয়ে যাওয়ার কাজ করেন তার ছোট মেয়ে বৃষ্টি রবিদাস। বৃষ্টি রবিদাস বালালী বাঘমারা উ”চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ট শ্রেণিতে পড়ে। এর আগে নন্দন দাসের বড় মেয়ে মন্টিরানী দাস,ও ছেলে অনুকূল রবিদাস বাজারে আনা নেয়া করত। তবে আয়রনের কাজ তিনি কাহারো সহযোগিতা ছাড়াই করতে পারেন। যে টাকা পান এই টাকা দিয়ে আর সংসার চলে না তার। যা কিছু ছিল একমাত্র ভিটাবাড়ি ছাড়া সবই তার চিকিৎসার পেছনে ব্যয় করে ফেলেছেন। এই আয়রনেই তার একমাত্র সম্বল।
মেয়ে বৃষ্টি আক্তার জানায়, স্কুলে যাওয়ার সময় বাবাকে আমি আয়রনের দোকানে নিয়ে যাই। স্কুল ছুটি হলে কোন সময় আমি না হয় ভাই বাবাকে নিয়ে আসে। বাবা যে আয় করেন আমাদের কোন কিছুই হয় না। খেয়ে না খেয়ে থাকতে হয়। পড়াশোনাও বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে।
এদিকে নন্দন রবিদাসের স্ত্রী আরতি দেবী বলেন, আমার স্বামী অন্ধ অবস্থায় আমাকে বিয়ে করেন। আমার ৪ ছেলে মেয়ে রয়েছে। এক মেয়েকে মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে বিয়ে দিয়েছি। উনি যে আয় করেন আমাদের কিছুই হয় না। তাই মাঝে মধ্যে মানুষের ঘরে কাজ করি। আমরা হিন্দু মানুষ সবাই আবার কাজে নেয় না। এর পরেও কোন মতে সংসার চলছে। তবে তিনি সরকার এবং ভিত্তিশালীদের সহযোগিতা কামনা করছেন।
নন্দন রবিদাস বলেন,প্রথমে মাথা ব্যথা,দাঁতে ব্যথা,পরে চোখে চানি হয়ে যায়। এরপর থেকেই আমি আর দু’চোখে দেখতে পারি না। অন্ধ চোখ দিয়েই আমি ইস্ত্রির কাজ করি। তবে এখন আর আগের মত কাজ হয় না। কোন সময় ৫০ টাকা আবার কোন সময় ১০০ টাকা হয়। এতে আমার সংসার চলে না। আমি খুবই পোলাহান নিয়ে কষ্টে আছি। সরকার যদি আমারে সাহায্য করে তাহলে আমি পোলাহান নিয়ে ভালভাবে চলতে পারব।
বাঘমারা বাজারের হোমিও প্যাথিক চিকিৎসক সাইদুল হক পিয়ারা বলেন, নন্দন রবিদাস প্রায় ৩২ বছর যাবত কয়লা দিয়ে আয়রনের কাজ করেন। খুবই সুন্দর ভাবে কাজ করেন তিনি। এ ব্যাপারে এখনো কাহারো কাছে কোন অভিযোগ আজ পর্যন্ত শোনা যায়নি।
দক্ষিণ বালালী গ্রামের বাসিন্দা জিয়াউল হাসান হলুদ বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে নন্দন রবিদাস যে কাজ করে সংসার চালা”েছন খুবই কষ্ট হ”েছ। তাই ভিত্তিশালীরা ও সরকারের প্রতিনিধিরা তার পাশে দাঁড়ানোর জন্য তিনি অনুরোধ জানান।
ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন,নন্দন রবিদাস আমার গ্রামের। আমাদের বাজারে সে দীর্ঘদিন যাবত আয়রনের কাজ করছেন। তার বিষয়টি নিয়ে আমি ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলব দেখি কিছু করা যায় কিনা। আমার পক্ষ থেকে যদি কোন সহযোগিতার প্রয়োজন হয় তাহলে করব।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানজিনা শাহরীন জানান, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নন্দন রবিদাস আমার অফিসে আর্থিক সহযোগিতা চেয়ে একটি আবেদন করলে বিষয়টি আলোচনা করে ব্যব¯’া নেয়া হবে।