যশোরের কেশবপুরে হাসানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ইউনিয়নবাসি অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ওই চেয়ারম্যান সরকারি রাজস্ব আত্মসাত করায় পরিষদের মেম্বারদের ভাতার সরকারি অংশ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এ ঘটনার প্রতিকারে ইউনিয়নের ৮ জন মেম্বার কলম বিরতি কর্মসূচি পালন করছে। এছাড়া, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালকসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, কেশবপুর শহরের বাসিন্দা দলিল লেখক তৌহিদুজ্জামান নৌকা প্রতিক নিয়ে বিজয়ী হন। তিনি হাসানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও সরকারি রাজস্ব আত্মসাত করে চলেছেন। যার কারণে ইউনিয়নবাসি অতিষ্ঠ। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে তিনিস্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের নামে একনায়কতন্ত্র কায়েম করে চলেছেন। তিনি ইউনিয়ন পরিষদে ঠিকমত অফিস করেন না বলেই জনগণকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদের মাসিক, ত্রৈমাসিক বা ষান্মাসিকসহ কোন সভা তিনি করেন না। এমনকি পরিষদের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নিজের ইচ্ছামত প্রকল্প গ্রহণ করে নিজেই বাস্তবায়নের নামে আত্মসাত করছেন। সরকারের অতি-দরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচীর ৩ দিনের কাজ কম করে তিনি ওই ইউনিয়নের ২৪৯ জন শ্রমিকের (দৈনিক ৪‘শ টাকা হারে) ৯৯ হাজার ৬‘শ টাকা আত্মসাত করেছেন। ফলে ইউনিয়নে কর্মসৃজন কর্মসূচীর কাজ মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এমনকি ইউনিয়ন পরিষদের আদায়কৃত রাজস্ব ব্যাংকে জমা রাখার নিয়ম থাকলেও তিনি তা অমান্য করে স্বাধীনভাবে খরচ করে চলেছেন। ফলে ইউপি সদস্যরা সরকারি ভাতা থেকে দীর্ঘদিন বঞ্চিত রয়েছেন। তিনি পরিষদের সনদ বা প্রত্যয়ন থেকে আদায়কৃত অর্থ রশিদ ছাড়াই প্রদান করে আত্মসাত করছেন।
ওই দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যান ইউনিয়নের জন্য বরাদ্দকৃত ১৬২টি ভিজিডি কার্ডের মধ্যে মেম্বারদের জন্য ২টি করে রেখে অবশিষ্ট কার্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে হাতিয়ে নিয়ে মোটা অংকের টাকায় হতদরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করেছেন। ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা উদ্যোক্তা মাতৃত্বকালিন ছুটিতে থাকা অবস্থায় তার স্থালে চেয়ারম্যানের এক নিকটাত্নীয়কে নিয়োগ দিয়েছেন। ফলে গোপণ ওয়েব সাইটটি বাইরে প্রকাশ হয়ে ইউনিয়ন পরিষদের গোপনীয়তা নষ্ট হচ্ছে। সরকারের এলজিএসপি, টিআর, কাবিখা, কাবিটার বরাদ্দের সিংহভাগই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে হাতিয়ে নিয়ে আত্মসাত করে চলেছেন।
টিটাবাজিতপুর গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা তবিবুর রহমান অভিযোগ করেন, চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পরিষদের ভেতর গোপণ ঘর করে দরজায় সার্বক্ষনিক ডিউটির জন্যে এক চৌকিদার রেখে দিয়েছেন। অনুমতি ছাড়া কোন জনগণ চেয়ারম্যানের সাথে সাক্ষাত করতে পারে না। এতে প্রবীন আওয়ামী লীগের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
অনাস্থাপত্রে স্বাক্ষর করেছেন ইউনিয়নের ১নং প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ, মেম্বার এসএম হেকমত আলী, কল্লোল কুমার দাস, আরফাজুল সরদার, কামরুজ্জামান, আশরাফুজ্জামান, জাহানারা খাতুন ও রুবিয়া খাতুন।
এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান তৌহিদুজ্জামান বলেন, মেম্বাররা আমাকে হয়রানি করতে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। আমার বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছে কিনা সেটা আমি জানি না।