নীলফামারীর সৈয়দপুরে রেল লাইন দখল করে প্রতি বছর বসে পুরাতন কাপড় দোকান। তবে এ বছর দুই নম্বর রেল ঘুমটি থেকে এক নম্বর রেল ঘুমটি হয়ে রেল স্টেশন পর্যন্ত বসেছে অবৈধ কাপড় দোকান। আর এ দোকানগুলোতে সকাল থেকে নারী পুরুষ ক্রেতাদের ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। শতাধিক লোকের ভীড়ে চলাচল করছে ট্রেন। যে কোন সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
এ জনপদে শীত বাড়তে শুরু করেছে। অনুভুত হচ্ছে প্রতিদিন বাড়তি শীতের আমেজ। সকালে ঘাসের ডগায় জমছে শিশির বিন্দু। সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ার সাথে সাথে লাগে শীত শীত। গাছিরা খেঁজুর গাছ থেকে রস বের করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। গভীর রাতে কুয়াশায় ঢাকা পড়ছে এ অঞ্চলের পথ ঘাট। ক্রমেই শীতের তীব্রতা বাড়ছে। রাতে লেপ, কাঁথা, কম্বল গায়ে জড়ানো শুরু হয়েছে মাস খানেক আগে থেকেই। ইতোমধ্যে শহর এবং গ্রামের লেপ তোষকের দোকানগুলোতে বেচাকেনা বৃদ্ধি পেয়েছে। দিন রাত কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ধুনকাররা। নিম্ন আয়ের লোকজন পুরাতন তোষক নিয়ে আসছেন ধুনকারদের কাছে। শহরের কাপড় ব্যবসায়ীরা গরম কাপড়ের মজুদ গড়ে তুলেছেন। অপরপাশে সৈয়দপুর শহরে জ্যাকেট তৈরির প্রায় ৫শ কারখানায় চলছে পুরোদমে কাজ। পুরাতন কাপড় ব্যবসায়ীরাও আমদানি শুরু করছেন।
সৈয়দপুর হলো উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ কাপড়ের পাইকারী বাজার। ফলে এ শহরে ওই সব গরম কাপড় বিক্রয়ের জন্য রয়েছে শতাধিক ছোট ছোট দোকান। বৃহত্তর রংপুর এবং দিনাজপুর জেলার মধ্যস্থল হলো সৈয়দপুর। আর এ শহরের সাথে রাজধানী ঢাকাসহ বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও খুলনার সাথে রয়েছে রেলপথ এবং সড়ক পথের চমৎকার যোগাযোগ। এছাড়াও রয়েছে আমদানি ও রপ্তানিকারকদের জন্য সহজ যোগাযোগ সৈয়দপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। আর এসব সুযোগ সুবিধার কারণে বাণিজ্যিক শহর সৈয়দপুরের সাথে উত্তরের ৮ জেলার ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছে সুন্দরতম যোগাযোগ। ফলে এ শহরের পাইকারী বাজার থেকে রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড় ও নীলফামারী জেলায় পুরাতন গরম কাপড় সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
এবার শীত মৌসুমে গরম কাপড়ের বেচাকেনা কেমন হতে পারে তা এ মুহূর্তে কোন কাপড় ব্যবসায়ী মন্তব্য করতে পারছেন না। তবে লেপ তোষক ব্যবসায়ী আকবর আলী (২৮) জানায়, এবার তার দোকানে অনেক আগ থেকেই শুরু হয়েছে লেপ, তোষক তৈরির কাজ। আশা রাখি গত বারের চেয়ে এবারে ব্যবসা ভালো হবে। কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, এবার ভরা ধান কাটা মাড়াইয়ের মৌসুম। লোকজনের হাতে টাকা পয়সা থাকবে। তাই এ পরিস্থিতি আশা করা যায়। এদিকে আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায় গত বছরের চেয়ে এ বছর শীতের প্রকোপ বেশী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও সৈয়দপুর রেল লাইনের ওপর গড়ে তোলা হয়েছে ভ্রাম্যমাণ পুরাতন কাপড় দোকান। এ বছর দোকান বেড়েছে বহুগুন। রেল লাইনের উভয় পাশে পুরাতন কাপড় দোকানে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভীড় করছে ক্রেতারা। মজার ব্যাপার হল ক্রেতাদের পছন্দ হলেই ওই কাপড়ের দাম হাকিয়ে দেয়া হয় কয়েকগুন। ফলে এখানে দামে প্রতারিত হয়ে থাকেন ক্রেতারা।
রেল লাইনের ওপর অবেধভাবে গড়ে ওঠা পুরাতন কাপড় দোকানের কারণে প্রায়ই সময় ট্রেন চলাচলে পেতে হয় চরম দুর্ভোগ। যে কোন সময় দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে এমন মন্তব্য অনেকের। এদিকে ট্রেন দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকলেও দায়িত্বে থাকা কর্তাদের রেল লাইন থেকে দোকান উচ্ছেদে কোন উদ্যোগ নেই।