বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার পাহাড়ী সীমান্ত পথ দিয়ে মায়ানমার থেকে প্রতি দিন অবৈধভাবে আসছে শত শত গরু-মহিষ। অবৈধভাবে আসা গরু-মহিষ চোরাচালানিকে কেন্দ্র করে আলীকদম ও লামায় গড়ে উঠেছে একাধিক ব্যবসায়ী চক্র। এসকল চক্রের তত্ত্বাবধানে মায়ানমার সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর কতিপয় অসাধু সদস্য এবং বাংলাদেশ ও মায়ানমারের দালালদের সহযোগিতায় প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে থাইল্যান্ড ও মায়ানমারের বিভিন্ন জাতের শত শত গরু-মহিষ আলীকদম হয়ে দেশে ডুকে পড়ছে।
আলীকদমে বিজিবি ও প্রশাসনের অভিযানে মাঝে মধ্যে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে আসা গরু-মহিষ আটক হলেও নামমাত্র এসকল অভিযানকে লোক দেখানো অভিযান বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। অভিযোগ রয়েছে, গরু চোরাচালানে নিয়োজিত বিশেষ সিন্ডিকেট অবৈধভাবে আসা এসকল গরু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ম্যানেজের নামে লাখ লাখ টাকা আদায় করে থাকেন। ওই সকল টাকায় বিভিন্ন মাধ্যমকে ম্যানেজ করার মধ্য দিয়ে গরু বাজার ইজারাদারের সহযোগিতায় ফাঁসিয়াখালী-লামা-আলীকদম সড়ক এবং ইয়াংছা থেকে নব নির্মিত মানিকপুর-কাকারা সড়ক পথে ট্রাক যোগে দিন-রাত এসকল গরু-মহিষ নির্বিঘ্নে চকরিয়া হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঁচার হচ্ছে।
এদিকে, স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গরু চোরাচালানি চক্রের সাথে সাথে পাহাড়ী সীমান্তবর্তী এ উপজেলায় মাদক চোরাচালানি চক্রও গড়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একাধিক অভিযানে আলীকদমের বিভিন্ন এলাকা থেকে ইয়াবার চালান উদ্ধারের ঘটনায় বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে।
জানা জানায়, আলীকদম উপজেলার কুরুকপাতা ইউনিয়নের পশ্চিম এবং দক্ষিনে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশ অবস্থিত। এ ইউনিয়নের সীমান্তের বেশির ভাগ এলাকায় অরক্ষিত ও দূর্গম পাহাড়ী অঞ্চল। এই ইউনিয়নের সীমানা সীমান্তেই মায়ানমারের অবস্থানের কারণে এসব এলাকার পাহাড়ী সীমান্ত পথ দিয়েই চোরাচালানীরা নির্বিঘ্নে অবৈধভাবে নিয়ে আসছে থাইল্যান্ডের ব্রাহামাসহ মায়ানমারের বিভিন্ন জাতের শত শত গরু-মহিষ। চোরাই পথে আসা এসকল গরু -মহিষ পাহাড়ী সীমান্ত পার করে প্রথমে কুরুকপাতা ইউনিয়নের মারান পাড়া, কচুর ঝিরি, বাবু পাড়া ও খেতা ঝিরিসহ বিভিন্ন উপজাতিয় পাড়ায় রাখা হয়। কখনো কখনো মাতামুহুরী রিজার্ভের গভীর বনাঞ্চলেও ছেড়ে দেয়া হয় এসকল গরু-মহিষ। পরবর্তীতে সুযোগ বুঝে আলীকদম-কুরুকপাতা সড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ট্রাক যোগে আলীকদমণ্ডলামা-ফাঁসিয়াখালী সড়ক এবং ইয়াংছা থেকে নব নির্মিত মানিকপুর-কাকারা সড়ক পথে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, অবৈধভাবে আসা এসকল গরুর বেশির ভাগই আলীকদম বাজারে না তোলা হলেও অবৈধভাবে আসা গরু-মহিষের ব্যবসায়ীরা বিশেষ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে বাজার ইজারাদারের ক্রয়-বিক্রির রিসিট পেয়ে যান। আলীকদম বাজারে থেকে এসকল গরু ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে মর্মে রিসিট দেয়ার কারণে তা দেখিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন চেকপোষ্ট গুলো নির্বিঘ্নে অবৈধভাবে আসা গুরু পার করে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ী চক্র। প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে, ভোঁর রাত কিংবা দিনের বিভিন্ন সময়ে সারি সারি ট্রাক ও মিনি ট্রাকে করে সড়কের বিভিন্ন চেক পোষ্ট গুলো নির্বিঘ্নে অতিক্রম করে চকরিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঁচার হচ্ছে এসকল গরু-মহিষ।
বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) ও আলীকদমের উপজেলা প্রশাসন ও লামা থানা একাধিকবার অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে আসা বিপুল সংখ্যক গরু-মহিষ আটক করে নিলাম প্রদান করে। স্থানীয়দের অভিযোগ, যেভাবে প্রতিদিন অবৈধভাবে পাহাড়ী সীমান্ত দিয়ে গরু -মহিষ আলীকদমে আসছে, সে তুলনায় এসকল হাতে গোনা দু’চারবারের অভিযান একেবারেই নগন্য। যা লোক দেখানোর সামিল বলেও মনে করছেন স্থানীয়রা।
আলীকদম প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ মমতাজ উদ্দিন আহমদ বলেন, দিন এবং রাতে আলীকদমে যে পরিমান গরু দেখতে পাঁচ্ছি, এ পরিমান খামার আলীকদমে নেই। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে - এসকল গরু কোথা থেকে আসছে। উত্তর একটায়, এসকল গরু বিভিন্ন কায়দায় ভিন্ন দেশ থেকে আমাদের দেশে আসছে। আলীকদম উপজেলা স্বেচ্ছা সেবকলীগের সভাপতি উইলিয়াম মারমা বলেন, আলীকদম উপজেলায় মায়ানমার থেকে অবৈধভাবে একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গরু-মহিষ পাঁচার হয়ে আসছে। এটি আমাদের দেশীয় খামারীদের প্রতি বিরুপ প্রভাব পড়ছে। তিনি বলেন, আমরা আশঙ্কা করছি গরু চোরাচালানি সিন্ডিকেটের সাথে মাদকেরও একটি সিন্ডিকেট এখানে গড়ে উঠেছে। আলীকদমের নয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. কফিল উদ্দিন সীমান্ত পথে মায়ানমার থেকে আলীকদমের কুরুকপাতা ও নয়াপাড়া ইউনিয়ন হয়ে অবৈধভাবে গরু আসার সত্যতা স্বীকার করে বলেন বিষয়টি নিয়ে আমরা বিব্রত। আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাবের মোঃ সোয়াইব বলেন বিষয়টি আমাদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেখছে। আলীকদমের পাহাড়ী সীমান্ত দিয়ে মায়ানমার থেকে অবৈধভাবে গরু-মহিষ আসা বন্ধে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের কার্যকরী হস্থক্ষেপ কামনা করছেন স্থানীয়রা।