ভোলার মেঘনা নদীতে ১১ লাখ লিটার জ্বালানি তেল নিয়ে ডুবে যাওয়া ‘সাগর নন্দিনী-২’ জাহাজটি উদ্ধারে দুদিনেও কাজ শুরু হয়নি। তবে জাহাজটি উদ্ধারের জন্য ‘সাগর বধূ-৩’, ‘সাগর বধূ-৪’ ও ‘সাগর নন্দীনি-৩’ নামে তিনটি জাহাজ এবং দুটি বার্জ এরইমধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। এ তথ্য জানিয়ে ডুবে যাওয়া জাহাজ কোম্পানির এক্সিকিউটিভ অফিসার মেহেদি হাসান মঙ্গলবার বিকালে বলেন, কোস্টগার্ডের বার্জ ‘হুমায়রা’ চাঁদপুর থেকে ঘটনাস্থলে আসতেছে। সেটি এলেই তারা উদ্ধার কাজ শুরু করতে পারবেন। সেটি এলেই সন্ধ্যার মধ্যে উদ্ধার অভিযান শুরু হবে। বুধবারের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা করবেন। শনিবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জ্বালানি তেল লোড করে জাহাজটি চাঁদপুরের উদ্দেশে রওনা হয়। সেখানে পদ্মা অয়েল কোম্পানির ডিপোতে যাওয়ার কথা ছিল। রোববার ভোরে ঘন কুয়াশার মধ্যে সদর উপজেলার তুলাতুলির কাঠিরমাথা এলাকায় বালুবাহী একটি বলগেটের সঙ্গে জাহাজটির সংঘর্ষ হয়। এতে জাহাজটি তলা ফেটে পানি ঢুকতে থাকে এবং একপর্যায়ে সেটি ডুবে যায়। জাহাজে মোট ১৩ জন স্টাফ ছিলো। পরে তাদের চিৎকার শুনে অন্য একটি বলগেট এসে তাদের উদ্ধার করে। জাহাজটির তেলের মালিক পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জাহাজে ১১ লাখ লিটার ডিজেল ও অকটেন ছিলো। এর মধ্যে ডিজেল আট লাখ ৯৮ হাজার লিটার এবং দুই লাখ ৩৪ হাজার লিটার অকটেন ছিলো। যার বাজার মূল্য নয় কোটি টাকার বেশি। এ ঘটনায় পদ্মা অয়েল কোম্পানি, বিআইডব্লিউটিএ এবং পেট্রোবাংলা পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। পদ্মা অয়েল কোম্পানির তদন্ত কমিটির প্রধান (ডিজিএম-অপারেশন) আসিফ মালেক মঙ্গলবার বিকালে বলেন, “চাঁদপুর থেকে ৮-১০ জন ডুবুরি আসছেন। তারা ওয়্যারহেড বসিয়ে পাইপ স্থাপন করবেন।“ “এর মাধ্যমে ডুবে যাওয়া জাহাজ থেকে জ্বালানি তেল অন্য দুটি জাহাজে খালাস করা হবে। এতে জাহাজটি হালকা হবে। তারপর সেটিকে উদ্ধার করা সহজ হবে। “আপাতত এই পরিকল্পনা নিয়ে এগোনো হচ্ছে।” উদ্ধার কাজ শুরু হতে কত সময় লাগতে পারে জানতে চাইলে আসিফ মালেক বলেন, “আমরা তাদের জন্য অপেক্ষা করছি। এলে পরিকল্পনা করে কাজ শুরু হবে।” কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা শফিউল কিন্জল বলেন, “ঘটনার পর থেকেই কোস্টগার্ড সর্বাত্তক নিরাপত্তা ও সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। উদ্ধার অভিযান শেষ হওয়া পর্যন্ত তা দিয়ে যাবে। “তাছাড়া যে জাহাজ বা বোট ‘সাগর নন্দিনী-২’ কে ধাক্কা দিয়েছে সেটাকে এখনও চিহ্নিত করা যায়নি; তবে চেষ্টা চলছে।” এদিকে ডুবন্ত জাহাজ থেকে মেঘনায় তেল ছড়িয়ে পড়ছে। মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করতে পারছে না জেলেরা; তেলের ঝাঁজে নাকাল হয়ে পড়েছেন। পানির ওপর থক থক করছে তেলের আস্তর। ফলে মেঘনার তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা দুইদিন ধরে নদীর পানি ব্যবহার করছেন না। মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করতে আসা জেলে মো. রুবেল জানান, গত দুই দিন ধরে তেলের ঝাঁজের কারণে তিনি মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে তাকে দৌলতখান উপজেলা সংলগ্ন মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করতে হচ্ছে। তুলাতলি মেঘনা নদীর তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা মো. রাকিবুল ইসলাম বলেন, আমি সবসময়ই মেঘনা নদীতে গোসল করতাম। কিন্তু আজ দুইদিন ধরে নদীতে গোসল করতে পারছি না। বিআইডব্লিউটিএর নৌ-সংরক্ষণ পরিচালক ও পরিচালন বিভাগের মো. শাহাজাহান জানান, ঘটনার পর থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত এ ঘটনায় তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি বিআইডব্লিউটিএ, একটি পেট্রোবাংলা অপরটি গঠন করেছে পদ্মা ওয়েল কোম্পানি। এ কমিটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা যাবে। মো. শাহাজাহান আরও বলেন, দুর্ঘটনা কবলিত ‘সাগর নন্দিনী-২’ মেরিন আইন ভঙ্গ করেছে। জাহাজটির প্রকৃত চালক জাহাজে ছিলেন না। মেরিন আইন লঙ্ঘনের ঘটনায় সাগর নন্দিনী-২ এর বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।