নেত্রকোনার মদনে শ্রমিক বদলে ভেকু দিয়ে প্রকল্পের কাজ করার অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্প এলাকায় শ্রমিক উপস্থিতিও কম রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।তবে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিগণ বলছেন শ্রমিক কম থাকলে হাজিরা অনুযায়ী বিল দেয়া হবে।
হাওর অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে হতদরিদ্রের জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্পের (ইজিপিপি) মাধ্যমে ৪০ দিনের কাজ চালু করেছে সরকার। এ প্রকল্পে কাজ করে প্রত্যেক শ্রমিক দৈনিক হাজিরা পাবে ৪০০ টাকা। প্রতি সপ্তাহে মজুরির টাকা পরিশোধের নিয়ম থাকলেও নেত্রকোনার মদন উপজেলার ৮ ইউনিয়নের শ্রমিকদের ২৪ কর্মদিবসে কোন মজুরি পায়নি শ্রমিকরা। শ্রমিকদের অনুপস্থিতি ও তদারকির অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে কর্মসৃজন প্রকল্পে।
অভিযোগ উঠেছে, শ্রমিক বদলে ভেকু, কম সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে নামে মাত্র কাজ করানো হচ্ছে। ফলে প্রকল্প এলাকায় আশানুরূপ উন্নয়ন কাজ ব্যহত হচ্ছে। এদিকে কিছু সংখ্যাক শ্রমিকরা নিয়মিত কাজ করেও মজুরি না পেয়ে বিপাকে রয়েছে। পরিবার নিয়ে কষ্টে দিনযাপন করতে হচ্ছে তাদের।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে ২৬ নভেম্বর কর্মসৃজন কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। এ বছর উপজেলায় ২০ টি প্রকল্পে ৮২৭ জন শ্রমিক রয়েছে। ৮২৭ জন শ্রমিকদের ৪০ দিনের মজুরী বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ কোটি ৩২ লাখ ৩২ হাজার টাকা। নিয়ম রয়েছে, একজন শ্রমিক দৈনিক কাজের হাজিরা বাবদ ৪০০ টাকা করে মজুরী পাবে। এক সপ্তাহের মধ্যে শ্রমিকদের মজুরীর টাকা পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু কর্মদিবসের ২৪ দিন হয়ে গেলেও একজন শ্রমিকও মজুরী পায়নি।
বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রকল্পে শ্রমিকদের উপস্থিতি খুবই কম। মদন ইউনিয়নের বারবুড়ি প্রকল্পে ৪০ জন শ্রমকি কাজ করার কথা থাকলেও সেখানে কোন শ্রমিক পাওয়া যায়নি। তবে সেই প্রকল্পে মাত্র একদিন ভেকু দিয়ে কিছু মাটি কাটা হয়েছে। এ ছাড়া ওই ইউনিয়েনর কুলিয়টি গ্রামের প্রকল্পে ৫৫ জন শ্রমিকের স্থলে ১৬ জন শ্রমিকে কাজ করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া কাইটাইল ইউনিয়নের জাওলা গ্রামের হাওরে প্রকল্পে ৫০ জন শ্রমিকের মধ্যে ৩৩ জন, শিবাশ্রম প্রকল্পে ৪০ জন শ্রমিকের মধ্যে ৩১ জন শ্রমিক পাওয়া যায়। নায়েকপুর ইউনিয়নের মাখনা গ্রামের প্রকল্পে ৫৬ জন শ্রমির মধ্যে ১৮ জন ও বরাটি মোয়াটি প্রকল্পে ৫৫ জন শ্রমিকরে মধ্যে ৩১ জন শ্রমিক পাওয়া যায়। বাকী প্রকল্পেগুলো ঠিক একই অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়াও প্রত্যেকটি প্রকল্পেই শিশু শ্রমিক রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শ্রমিকরা জানান, বেশীর ভাগ শ্রমিক কাজে আসে না। আমরা কাজ করছি তবুও মজুরী পাচ্ছি না। সময় মতো টাকা না পাওয়ায় আমাদের কষ্টে দিন যাচ্ছে। অনেকইে আবার কাজ না করেই টাকা নিবে। যারা কাজে আসে না তারা বেশী ভাগেই চেয়ারম্যান মেম্বারদের আত্মীয়-স্বজন।
স্থানীয়রা জানান, কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকদের মজুরী বাড়লেও কাজের ধরণ ঠিক আগের মতোই রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের তদারকীর অভাবে সরকারে একটি বড় প্রকল্পের সুফল পাচ্ছে না সাধারণ জনগন। তাই এই প্রকল্পটি সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারের নজর দেওয়া প্রয়োজন।
মদন ইউপি চেয়ারম্যান খাইরুল ইসলাম জানান, বোরো ধান রোপনের সময় থাকায় কিছু শ্রমিক কম রয়েছে। শ্রমিকের বদলে এক্সেভেটর দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে এই বিষয়ে জানলে তিনি জানান, কিছু অংশ এক্সেভেটর দিয়ে করানো হলেও বাকী অংশের কাজ শ্রমিক দিয়ে করানো হচ্ছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তাবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) শওকত জামিল জানান, ‘মদন ইউনিয়নে কর্মসৃজ কর্মসূচির একটি প্রকল্পে শ্রমিকদের বদলে ভেকু দিয়ে মাটি কাটা খবর পেয়ে আমি প্রকল্প পরিদর্শন করেছি। সেখানে কোন শ্রমিক পাইনি। তাছাড়া উপজেলার প্রত্যেকটি প্রকল্পে কিছু সংখ্যক শ্রমিক অনুপস্থিত রয়েছে। জনপ্রতিনিধিরা শ্রমিক মাস্টার রোল অফিসে জমা না দেওয়ায় ঠিক সময়ে শ্রমিকদের মজুরী পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে। শিশু শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, শিশুদের দিয়ে কাজ যাতে না করায় সে জন্য চেয়ারম্যানদের বলা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানজিনা শাহরীন জনান, যে প্রকল্পে ভেকু দিয়ে মাটি কাটানো হয়েছে সেই প্রকল্পের বিল দেওয়া হবে না। যে কয়জন শ্রমিক প্রকল্পে কাজ করেছে শুধু তারাই মজুরী পাবে।