করোনাভাইরাসের মহামরী মানুষের জীবনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তবে কিছুদিন ধরে বাংলাদেশ সেই প্রভাব কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছিল, নতুন করে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যাও অনেকটাই কমে এসেছিল। কিন্তু এরমধ্যে ভাইরাসটি এবার আবির্ভূত হয়েছে আরও শক্তিশালী হয়ে, দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী রূপে। ওমিক্রনের নতুন ধরন ‘বিএফ.৭’ নাকি আগেরটির চেয়ে চারগুণ বেশি সংক্রামক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিএফ.৭ শনাক্ত করা বেশ কঠিন; উপরন্তু এটি অতি অল্প সময়ের মধ্যে অধিক মানুষকে আক্রান্ত করার ক্ষমতা রাখে। চীনে ইতোমধ্যে ২৫ কোটিরও বেশি মানুষ বিএফ.৭ দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া প্রতিবেশী ভারতসহ আরও কয়েকটি দেশে ফের আতঙ্ক ছড়াচ্ছে করোনার নতুন এ ভ্যারিয়েন্ট। এ পরিস্থিতিতে দেশে পুনরায় সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সংক্রমণের নতুন ঢেউ মোকাবিলায় এরইমধ্যে সরকারের কোভিডবিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটি চার দফা সুপারিশ পেশ করেছে। পাশাপাশি বিমানবন্দর, স্থলবন্দরসহ সব পোর্টে পরীক্ষা জোরদারের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয়েছিল। এরপর সংক্রমণ বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল সরকার। ওই সময় দেশে টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি ছিল। সেসময় সব অফিস-আদালত, কলকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে সারা দেশে সব ধরনের যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। পরের বছরের শুরুতে অবশ্য দেশে করোনা সংক্রমণের হার অনেকটাই কমে এসেছিল। পাশাপাশি শুরু হয়েছিল করোনার গণটিকাদান কর্মসূচি। একপর্যায়ে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে দেশে দৈনিক করোনা শনাক্তের হার তিন শতাংশেরও নিচে নেমে এসেছিল। তবে ফেব্রুয়ারির শেষদিকে দ্রুতগতিতে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করায় ঘনবসতি, স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে অসচেতনতা, ভারসাম্যহীন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা প্রভৃতি বিবেচনায় নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। তবে একপর্যায়ে দেশে করোনাজনিত মৃত্যুর হার শূন্যের কোঠায় নেমে আসায় মানুষের মধ্যে একধরনের স্বস্তির ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছিল। ইত্যবসরে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর দৃশ্যপট আবারও পালটে গিয়েছিল। এবার ওমিক্রনের নতুন ধরন বিএফ.৭ নতুন শক্তিতে বলীয়ান হয়ে আঘাত হানতে উদ্যত হয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এ অবস্থায় উচ্চমাত্রার সতর্কতা বজায় রাখার পাশাপাশি সবাইকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, এর আগে দেশে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় একধরনের সমন্বয়হীনতা প্রকট হয়ে উঠেছিল। এবার অন্তত তেমনটি হবে না বলে আমরা আশাবাদী। বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেসব এনজাইম আছে, তা স্বাভাবিকের চেয়ে কম তাপমাত্রায় কম কার্যকর হয়ে পড়ে। এ কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়। শীতে বাতাসের তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে আর্দ্রতাও কমে যায়, যা আমাদের শ্বাসনালির স্বাভাবিক কর্মপ্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করে ভাইরাসের আক্রমণ সহজ করে তোলে। কাজেই এই শীতকালে বিএফ.৭ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকতে হলে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার ব্যাপারে কোনোরকম হেলাফেলা করা উচিত নয়। মনে রাখতে হবে, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আসার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো দেশই সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দিতে পারেনি। এ পরিস্থিতিতে চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও আমাদের টিকে থাকার প্রয়াস চালাতে হবে এবং বাস্তব অবস্থার নিরিখে নতুন কৌশল নিয়ে নতুন ছন্দে জীবন সাজানোর দৃঢ়তায় অগ্রসর হতে হবে।