মাগুরার শালিখা উপজেলার আড়পাড়া সরকারী খাদ্য গুদাম থেকে ১২০ টন চাল আত্বসাৎ এর ঘটনায় রোববার ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটির কাজ শুরু হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে চাল আত্বসাতের সাথে জড়িত অভিযোগে ইতোমধ্যে বৃহস্পতিবার আড়পাড়া খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামকে পুলিশ আটক করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে।
সরকারী গুদামের প্রায় তিন হাজার বস্তা চাউল গায়েবের অভিযোগে গত ২৯/১২/২০২২ তারিখে মোহাম্মদপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাহাদী হাসান শিহাব প্রাথমিক তদন্ত করার পর শালিখা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা সালমা চৌধুরী আড়পাড়ার গুদাম কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা রুজু এবং ৪টি গুদাম ঘর সিলগালা করেন।
আজ ২ জানুয়ারি কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবির নাথ চৌধুরীকে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি সহকারী কমিশনার ভূমি উম্মে তাহমিনা মিতু,সহকারী রসায়ন বিদ ইকরামুল কবির,ঝিনাইদহ সদরের খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ তাজ উদ্দীন আহম্মেদকে সদস্য করে চার সদস্য বিশিষ্ট কমিটি দ্বিতীয় ধাপে পুনরায় তদন্ত শুরু করেছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শালিখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসমিন মনিরা,মাগুরা জেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনোতোষ কুমার মজুমদার, শালিখা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সালমা চৌধুরী।
জানা যায়, গত নভেম্বর মাসে বিভাগীয় খাদ্য কর্মকর্তা ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আড়পাড়া খাদ্যগুদাম পরিদর্শনে আসেন। এ সময় খামালে চাল কম আছে বলে সন্দেহ হলে তাৎক্ষণিক তদন্ত কমিটি গঠন করেন। গত ৮/১২/২০২২ তারিখে ওসিএলএসডি শফিকুল ইসলামকে সাসপেন্ড করে ভারপ্রাপ্ত হিসাবে মাগুরা সদর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা নুরে আলম সিদ্দিকিকে ভারপ্রাপ্ত হিসাবে দায়িত্ব দিয়ে তদন্ত কাজ শুরু হয়। কিন্তু উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সালমা চৌধুরী ৩০/১১/২০২২ তারিখের ৪৩৫ নং স্বারক মোতাবেক পাক্ষিক রিপোর্টে এবং শফিকুল ইসলামের রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা যায় গত ১৬ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত চালের ১৭ টি খামালে ৪৫৩৬৭ বস্তায় ১৫৬৭.৯৭৫ মেট্রিক টন চালের ভিতর পক্ষকালে বিক্রির পর চালকল ভিত্তিক পাক্ষিক ৭৮ টন ও আমদানি কারক,পায়কারী ও খুচরা ব্যাবসায়ীদের পাক্ষিক ৬৩ মেট্রিক টন চাল সহ মোট ১৪১ মে.টন চাল মজুদ আছে। অথচ মাত্র ৮দিন পর গত ৮/১২/২০২২ তারিখে শফিকুল ইসলামকে সাসপেন্ড করার পর তদন্ত কালে ১২০টন চাল গায়েবের অভিযোগ পাওয়া যায়। ফলে মাত্র ৮ দিনের ব্যবধানে কিভাবে এত চাল গায়েব হয়েছে এনিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনোতোষ কুমার মজুমদার বলেন ওজন, মান, মজুদ এর ভার থাকে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এর উপর। এবং গোডাউনে কোন মাল কম হলে গোডাউন কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সমান পরিমান দায়ী হবে। এ ছাড়া তিনি আরো বলেন খামালের তদন্ত কালে ত্রুটি বেশী পাওয়ায় আইনানুসারে সরকারি সম্পদ ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দেয়ায় নিয়ম অনুযায়ী শফিকুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে।
প্রথম পর্যায়ের তদন্ত কর্মকর্তা মাহাদি হাসান শিহাব বলেন, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কয়েকটি খামাল তদন্তের একপর্যায়ে শফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে গোডাউন সিলগালা করলে তদন্ত কাজ স্থগিত করা হয়।
এব্যপারে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সালমা চৌধুরী বলেন গত ৩০/১১/২০২২ তারিখে পাক্ষিক রিপোর্টে কোন চাল কমছিল না এটা ঠিক। কিন্তু আমারতো প্রতিটি বস্তা গুনে রিপোর্টে করা সম্ভব না। আমি খামালের বাইরের লেয়ার গুনে সঠিক রিপোর্ট করেছি। যেখানে চাল কম হওয়ার সঠিক বিষয় বুঝতে পারিনি। এ ছাড়াও খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম সকালে গুদাম খুলবে এবং কাজ শেষ হলে প্রত্যক দিন স্বাক্ষরিত সিলগালা করবে। যেখানে প্রত্যেক গোডাউনে ৮টি তালা থাকে এবং সবগুলো চাবি থাকে তার কাছে। ফলে কোন মাল কম হলে আমি দায়ী না। খামাল দেওয়ার সব সময় আমার থাকতে হবে এমন কোন কথা নেই।
এ ব্যপারে শালিখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসমিন মনিরা বলেন, ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি আসছে। আমি তাদের ফাইল বুঝে দিয়েছি।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক সুবির কুমার চৌধুরী বলেন, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের নির্দেশে দ্বিতীয় পর্যায়ে তদন্ত শুরু হয়েছে যা তিন দিন চলমান থাকবে। তবে এর সাথে লেবার সর্দার সহ আরো অনেকে জড়িত থাকতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। পূর্ণ তদন্ত শেষ হলে বুঝা যাবে কত মেট্রিক টন চাল আত্মসাৎ হয়েছে এবং এর সাথে জড়িত কারা আছে। ইতিপূর্বেও মাগুরা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অধিনে থাকা গুদাম থেকে প্রায় ত্রিশ লাখ টাকার চাল আত্বসাতের অভিযোগ অনেকটায় প্রমানিত হয়েছে।